নিজ বাড়িতে যেতে প্রাইভেট চালকদের ভাড়া দিতে টালবাহানা
তেঁতুলিয়া উপজেলার পিআইওর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:০৪ | আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:০৫

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইদুল ইসলাম শাহের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে দায়িত্বে অবহেলা ও সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া অফিসে অনিয়মিত থাকা এবং প্রাইভেট কারের ভাড়া বাকি রাখার অভিযোগও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নানা অভিযোগ স‚ত্র ধরে জানা গেছে, মাইদুল ইসলাম শাহ প্রতিদিন ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কারে তেঁতুলিয়া থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দ‚রে নিজ জেলা নীলফামারীতে যাতায়াত করে আসছেন। প্রতিদিন শুধু তেঁতুলিয়া থেকে নীলফামারী যাতায়াতের খরচ ৪ হাজার টাকা হলেও সংশ্লিষ্ট চালকদের অভিযোগ, তিনি নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ না করে তালবাহানা করেন। এমনকি এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন তিনি।
এদিকে ভুক্তভোগী দুই গাড়িচালক হাসিবুল ইসলাম ও রাসেল জানান, প্রথম দিকে ভাড়া পরিশোধ করলেও পরে বকেয়া রাখেন পিআইও মাইদুল ইসলাম শাহ। এখন পর্যন্ত হাসিবুল প্রায় ২৫ হাজার টাকা এবং রাসেল ২০ হাজার টাকা ভাড়া তার কাছ থেকে পান। চালকদের অভিযোগ, ভাড়া চাইলেই পিআইও মেম্বার-চেয়ারম্যানদের বিল না হওয়ার অজুহাত দেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অফিসে অনিয়মিত থাকা, দায়িত্বে অবহেলা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও পিআইও মাইদুল ইসলাম শাহর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাইদুল ইসলামের দায়িত্বে গাফিলতির কারণে বহু ত্রাণসামগ্রী পড়ে রয়েছে বিতরণের অপেক্ষায়। অফিসে অনিয়মিত উপস্থিতি ও অগ্রাধিকারহীনতার কারণে সংকটে থাকা পরিবারগুলো ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ছাড়া এ উপজেলায় টিআর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের নামে বরাদ্দ পাওয়া অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নামমাত্র কাজ দেখিয়ে বিল তোলা হচ্ছে। বাংলাবান্ধা, শালবাহান, বুড়াবুড়িসহ কয়েকটি ইউনিয়নে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ও শেষ না হলেও বিল তোলার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন মাইদুল ইসলাম। একাধিক জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সভাপতির অভিযোগ, মাইদুল ইসলামকে প্রকল্পের বিল ছাড়ের জন্য টাকা দিলেই তিনি সেই বিল পাস করে দেন।
অপরদিকে একাধিক জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, টিআর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদগুলো থেকে গ্রামীণ পর্যায়ে ছোট ছোট প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু পিআইও মাইদুল ইসলাম শাহ কৌশলে চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে সেসব প্রকল্প পরিবর্তন করে একই কাজের বিপরীতে প্রয়োজনের তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ নিয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেন, যেন নামমাত্র কাজ করে বেশি টাকা আত্মসাৎ করা যায়। এ ছাড়া নামে-বেনামে এসব প্রকল্প নিয়ে সরকারি অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রকল্পে অফিস খরচের নামে টাকা দাবি করেন মাইদুল ইসলাম। টাকা না দিলে প্রকল্প অনুমোদন বা বিল ছাড় করেন না তিনি। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে দেবনগর ইউনিয়নের ব্রহ্মতোল এলাকায় প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি এইচবিবি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও কাজের মান নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এই প্রকল্পটি মাইদুল ইসলাম শাহ পরিচালনা করছেন।কাজ চলাকালিন অভিযোগ জানানো হলেও তিনি কোন রকম কর্ণপাত করেননি।এবিষয়ে পিআইও মাইদুল ইসলাম শাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আসা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেন এসব সাজানো।
এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে পিআইওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাইদুল ইসলাম এর আগে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় পিআইও থাকাকালে তার বিরুদ্ধে সরকারি ত্রাণ আত্মসাৎ, প্রকল্পে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় জনপ্রতিনিধিরা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।এমন ঘটনা হাতিবান্ধায় ঘটেছে বলে সেখানকার গনমাধ্যমকর্মীরাও জানান। এদিকে তাকে অতিসত্বর তেতুঁলিয়া থেকে প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত