শিল্পপতি আলহাজ্ব নান্নু বেপারির আজ ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী
প্রকাশ: ৫ আগস্ট ২০২১, ১২:০৯ | আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮
গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, নান্নু গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মোঃ নান্নু বেপারির আজ ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
আলহাজ্ব নান্নু বেপারি ১৯৪৩ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দৌলত আলী বেপারি, মা জোবেদা খাতুন। তার জন্মের পর পিতার ব্যবসায়িক কারণে সপরিবারে নারায়ণগঞ্জে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬২ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। কিন্তু পিতার আকস্মিক মৃত্যুতে তাদের পরিবারে ঘোরতর অমানিশা নেমে আসে। সে সময় সংসারের হাল ধরেন কিশোর নান্নু বেপারি, ফলে পড়াশোনা আর এগোয়নি। তিনি তার পিতার ব্যবসায়ের দেখাশুনা করতে থাকেন। এরপর তিনি লালমনিরহাটে চলে যান ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তার দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়, মালামাল লুঠ হয়ে যায়। প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন আলহাজ্ব নান্নু বেপারি। কিন্তু মনোবল না হারিয়ে আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি।
স্বাধীনতার পর অল্প কিছু পুঁজি নিয়ে ঢাকার ইসলামপুরে শোয়েব কর্পোরেশন নামে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। তারপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অক্লান্ত পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা ও দূরদৃষ্টির কারণে একের পর এক সাফল্য ধরা দিতে থাকে তার হাতে।
একে একে গড়ে তোলেন নান্নু টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, নান্নু সাইজিং মিলস লিমিটেড, নান্নু স্পিনিং মিলস লিমিটেড এবং যৌথ মালিকানায় বেক্সি ফেব্রিক্সের মতো বিখ্যাত সব ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ঢাকার ইসলামপুরে দৌলত কমপ্লেক্স নামে একটি বহুতল বানিজ্যিক ভবন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
আলহাজ নান্নু বেপারির মৃত্যুর পর তার জেষ্ঠ্যপূত্র বিএম শোয়েব ওই সব ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেছেন শক্ত হাতে। পিতার পদাংক অনুসরণ করে তার প্রতিষ্ঠিত শিল্প সাম্রাজ্যকে আরো বিস্তৃত করার লক্ষ্যে তিনি পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
মরহুম আলহাজ্ব নান্নু বেপারি একজন দানশীল ব্যক্তি, সমাজ সেবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পারিবারিক দুর্যোগের কারণে নিজে উচ্চ শিক্ষা নিতে না পারার আক্ষেপ তাকে জীবনভর তাড়িত করেছেন। তাই তিনি বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার জন্য অকাতরে দান করে গেছেন। এছাড়া মানবদরদী আলহাজ্ব নান্নু বেপারি জনকল্যাণে দান করে গেছেন উদার হস্তে। ঢাকার হলিক্রস রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের জন্য একটি ওয়ার্ড, বারডেম হাসপাতালে দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে ইন্স্যুলিন দেয়ার তহবিল গঠন, লৌহজংয়ের হলদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দোতলায় ‘আলহাজ্ব নান্নু বেপারি মিলনায়তন’, হলদিয়া জাগরণী সংঘের তত্ত্বাবধানে ‘আলহাজ্ব নান্নু বেপারি' গণপাঠাগার, লৌহজং কলেজে আলহাজ্ব নান্নু বেপারি কমপ্লেক্স, মশদগাঁও মাদ্রসার একটি ভবন, শ্রীনগর উপজেলার হোগলাগাঁও হাজী রিয়াজুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসার একটি ভবন, একই উপজেলার বিবন্দী গ্রামে পুরাতন মসজিদের স্থলে নতুন মসজিদ নির্মান, সাতঘরিয়া কবরস্থানের বর্ধিত অংশ উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ঢাকা আঞ্জুমান মফিজুল ইসলাম ও ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে একটি করে এম্বুলেন্স প্রদানের মাধ্যমে তিনি তার দানশীলতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। এছাড়া তিনি বহু মেধাবী-দরিদ্র শিক্ষার্থীর পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সহায়তা করেছেন। তার অনুদানের অর্থে সুশিক্ষিত হয়ে বহু ছেলেমেয়ে আজ দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত আছে।
মৃত্যুকালে আলহাজ্ব নান্নু বেপারি স্ত্রী, তিন পুত্র, দুই কন্যা, জামাতা, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সীমিত আকারে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
আলহাজ্ব মোঃ নান্নু বেপারির মৃত্যুবার্ষিকীতে গ্রামনগর বার্তা তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত