বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের আদি পর্ব, ঝর্না বসাক থেকে শবনম

  কেশব মুখোপাধ্যায়

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২১, ১২:৩৮ |  আপডেট  : ৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৭

আমার দিদির প্রিয় সাহিত্যিকদের একজন ছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী । কিশোর বয়সে দিদির টেবিলে বিভিন্ন সময়ে তাঁর লেখা যে সমস্ত বই দেখেছি, তার মধ্যে ছিল  'দেশে বিদেশে', 'হিটলার', 'শবনম' ইত্যাদি।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা চলচ্চিত্রের অনেক কলাকুশলী ও শিল্পী কলকাতায় চলে আসেন এবং এখানে অবস্থানকালীন সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গঠনে অংশ নেন ।  সেই সময় জাহির রায়হান পরিচালিত  'জীবন থেকে নেওয়া' ছবি কলকাতায় বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পায়  । যতদূর মনে পড়ে সপ্তাহখানেক  ছবিটি কলকাতায় প্রদর্শিত হয়েছিল। কিশোর বয়সে বাবা - মা-র সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার 'প্রিয়া' চিত্রগৃহে 'জীবন থেকে নেওয়া' দেখেছিলাম । রাজ্জাক, কবরী, আনোয়ার হোসেন অভিনীত 'জীবন থেকে নেওয়া' ছবিই ঢাকায় নির্মিত প্রথম বাংলা ছবি, যা পশ্চিমবাংলার দর্শকদের দেখার সুযোগ হয়। ওই ছবির সমালোচনাও তখন পত্রিকার পাতায় পড়েছি ।
জাহির রায়হান (জন্ম : ১৯৩৫, হত্যা: ১৯৭২) মাত্র ৩৭ বছরের জীবন । তিনি ছিলেন কথাশিল্পী, চিত্র পরিচালক, ফটোগ্রাফার, মুক্তিযোদ্ধা।  বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পূর্ব মুহূর্তে হানাদার ও রাজাকারদের হাতে অপহৃত হন তাঁর বড়ভাই শহিদুল্লা কায়সার । ২৮ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে একটি ফোনকল পেয়ে, বড় ভাই শহিদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে জাহির রায়হানও অপহৃত এবং নিখোঁজ হন । তাঁর বড় ভাইয়ের মতো তাঁকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে চিন্তা - চেতনায় পঙ্গু ও মধ্যযুগীয় সংস্কারে আটকে রাখাই ছিল বুদ্ধীজীবী হত্যার প্রধান লক্ষ্য । ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাত থেকেই যার শুরু। এই পরিকল্পনায় শেষ আঘাত আসে, পাকহানাদার কবলিত বাংলাদেশে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ ।

বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করে সারা বাংলাদেশ জুড়ে তাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় । শহিদ বুদ্ধিজীবী তালিকায় আছেন হাজার জন শিক্ষাবিদ । এছাড়া সাংবাদিক, সাহিত্যিক - লেখক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিল্পী, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ, আইনজীবী ।


                         
ছবি : জাহির রায়হান

মুনীর চৌধুরী, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, জ্যোতর্ময় গুহঠাকুরতা, আলতাফ মাহমুদ, সেলিনা পারভীন ...| সোজা মেরুদণ্ডের এই রকম চিন্তাশীল মানুষ তো সমাজে রাতারাতি তৈরি হয় না,  বা সবক্ষেত্রে বাইরে থেকে আমদানি করে শূন্যস্থান পূর্ণ করা যায় না।  তার জন্য সময়ের অপেক্ষা ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া প্রয়োজন হয় । পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পরিকল্পনা ছিল, পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়ার পরে, বাংলাদেশ যেন চিন্তা ও মননের ক্ষেত্রে দৈন্য হয়ে পড়ে এবং  মধ্যযুগীয় সংস্কারে বন্দি থেকে একটি মিনি পাকিস্তানে পরিণত হয় ।

ঢাকা চলচ্চিত্রের ইতিহাস কলকাতার তুলনায় নবীন। অবশ্য যাঁর হাতে ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে চলচ্চিত্রের পথচলা শুরু, সেই হীরালাল সেন-এর জন্ম ১৮৬৬ সালে বর্তমান বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। তাঁর প্রয়াণ কলকাতায় ১৯১৭ । হীরালাল সেন-এর হাতেই এই উপমহাদেশে প্রথম নির্মিত হয় কাহিনি, এবং বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র । অবশ্য এই সম্মান বা স্বীকৃত থেকে হীরালাল সেনকে এখনো বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে  প্রাপ্য স্বীকৃতি আজও দেওয়া হয়নি ।
              ‌             

ছবি : হীরালাল সেন

১৯৪৭-এ ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলা ভাগের আগে, কলকাতাই ছিল এই উপমহাদেশে চলচ্চিত্রের এক প্রধান কেন্দ্র ।  মুম্বাই, চেন্নাই থেকেও তখন চলচ্চিত্র সংক্রান্ত কাজে কলকাতায় ছুটে আসতেন আগ্রহী ব্যক্তিরা । পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়-এর কাছেই শোনা যে, একবার রাজকাপূর কলকাতার টালিগঞ্জের নিউ থিয়েটার স্টুডিওতে এসে হাত দিয়ে স্টুডিওর ধুলো মাথায় নিয়ে বলেছিলেন, এই স্টুডিও তাদের  পরিবারের কাছে পবিত্র স্থান । এই স্টুডিওতে তাঁর  বাবা এক সময় কাজ করেছেন, শিখেছেন ।

১৯৪৭ পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে কয়েক বছর পূর্ব বাংলায় চলচ্চিত্রের দর্শক এবং চিত্রগৃহ থাকলেও, চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো পরিকাঠামো সেখানে ছিল না। ভারতীয় বাংলা, হিন্দি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে নির্মিত উর্দু ও হলিউডের ইংরেজি ছবি সেখানে প্রদর্শিত হতো । দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নির্মিত প্রথম বাংলা কাহিনি চিত্র 'মুখ ও মুখোশ' । ১৯৫৬ সালে ৩ অগস্ট 'মুখ ও মুখোশ' সেদেশে মুক্তি পায়। এই ছবি নির্মাণের সময়ও সেখানে চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি । ঢাকার গুলিস্তান সিনেমা হলের মলিক অবাঙালি খান বাহাদূর ফজল আহমেদ-এর  সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়েই, পূর্ববাংলার আর্দ্র আবহাওয়ায় আব্দুল জব্বার খাঁ চলচ্চিত্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । তিনি ছিলেন মঞ্চ ও নাটকের মানুষ । চলচ্চিত্র নির্মাণ বা পরিচালনা বিষয়ে কিছুমাত্র জ্ঞান বা পূর্ব অভিজ্ঞতা তখন তাঁর ছিল না।

পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে কলকাতা থেকে একটি পুরানো ক্যামেরা সংগ্রহ, নিজের লেখা চিত্রনাট্য এবং নায়িকা বা প্রধান নারী চরিত্রে শিল্পী পূর্ণিমা সেনগুপ্তকে নিয়ে গেলেন কলকাতা থেকে ‌। ১৯৫৩ সালে শ্যুটিং শুরু হয়ে ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে শ্যুটিং পর্ব শেষ হওয়ার পর, মুদ্রণ, সম্পাদনা, পরিস্ফুটন ইত্যাদি কাজ হয়েছিল তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে ।

'মুখ ও মুখোশ' কতটা শিল্পগুণ সমৃদ্ধ তার চেয়েও বড় বিষয়, এই ছবিই পূর্ববাংলা বর্তমান বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র । সেইদিক থেকে ছবিটির  রয়েছে এক ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং অবস্থান । এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, পূর্ব বাংলায় নির্মিত প্রথম বাংলা ছবি 'মুখ ও মুখোশ'  ঢাকায় উদ্বোধন করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ।
                      
ছবি : মুখ ও মুখোশ

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পূর্ববাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদির সঙ্গে ঢাকা চলচ্চিত্র সংক্রান্ত কিছু সংবাদ তৎকালীন কলকাতার পত্র পত্রিকার পাতায় পড়েছি । রাজ্জাক, কবরী, শাবানা,শবনম ইত্যাদি নামের সঙ্গে তখনই প্রথম পরিচিত হয়েছিলাম । ১৯৭১ অথবা পরবর্তী কোন সময়ে, ঠিক স্মরণ নেই, তবে মনে আছে পাকিস্তান চলচ্চিত্রের ব্যস্ততম নায়িকা শবনম প্রসঙ্গে কোনো একটি লেখায়, হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেতা দিলীপ কুমারের অনুষঙ্গ এনে লেখা হয়েছিল, মুহাম্মদ ইউসুফ খান যেমন চলচ্চিত্রের জন্য দিলীপ কুমার, ঝর্না বসাক তেমনি ঝর্না থেকে শবনম । শবনম নামের অর্থ ফুলের মধ্যে বিন্দু বিন্দু শিশির ঝরে পড়া। 

পাকিস্তান চলচ্চিত্র বা উর্দু সিনেমার অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় নায়িকা শবনম সম্পর্কে, বিগত শতাব্দীর আট দশকের প্রথম অথবা মাঝামাঝি সময়ে কলকাতার কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়েছিলাম । যদি ভুল না করি প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাংবাদিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার ওই সাংবাদিক পাকিস্তান সফরে গিয়ে সেখানকার উর্দু সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় বাঙালি নায়িকা, শবনম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন । তার কিছুদিন আগে শবনম-এর বাড়িতে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে । ওই ডাকাতির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক নায়িকা শবনমের  সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তির জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিলেন ‌।

কলকাতার সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে শবনম জানিয়ে ছিলেন, পাকিস্তানের উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছেন, তাতে তিনি অভিভূত এবং পাকিস্তানেই তিনি জীবনের বাকি সময় থেকে যেতে চান বলে জানিয়ে ছিলেন ।

পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করার মধ্যদিয়ে ঢাকা চলচ্চিত্রের সঙ্গে ঝর্না বসাকের প্রাথমিক সম্পর্ক তৈরি হয় । ১৯৬১ সালে পরিচালক মোস্তাফিজ রহমান নির্মিত মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবি  'হারানো দিন'-এ প্রথম নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে, দর্শক চিত্ত জয় করেন ঝর্না বসাক ।  বেদের দলের কিশোরী  'আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি, ইরান-তুরান পার হয়ে আজ তোমার দেশে এসেছি’ এই গানে ঠোঁট দিয়ে রাস্তার ধারে নৃত্যরত অবস্থায় 'হারানো দিন' ছবিতে শবনমকে পর্দায় প্রথম আবির্ভাবে দেখা যায় । ওই চলচ্চিত্র থেকেই তিনি ঝর্না বসাক-এর পরিবর্তে শবনম নামে পরিচিতি লাভ করেন । ছবির অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন, রহমান, গোলাম মোস্তাফা, সুভাষ দত্ত, শিরিন । সংগীত পরিচালনা করেন রবিন ঘোষ ।
              ‌        
ছবি : শবনম (কোলাজ)

সুরকার - সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের পরিবারের সঙ্গে আগে থেকেই পারিবারিক যোগাযোগ থাকলেও,  'হারানো দিন' ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে ওই ছবির সংগীত পরিচালক‌ রবিন ঘোষের সঙ্গে প্রেম এবং ১৯৬৪ তে বিয়ে‌। দুজনের ওই সম্পর্ক অটুট ছিল ১৯১৬ সালে রবিন ঘোষের মৃত্যু পর্যন্ত ।


ঝরনা বসাক-এর জন্ম ১৯৪৬-এ ব্রিটিশ শাসিত পূর্ববাংলার রাজধানী ঢাকায় । বাবা ননী বসাক ছিলেন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ফুটবল রেফারি এবং ক্রিয়া প্রশিক্ষক । কিশোরী বয়সে গুলি (মার্বেল) খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, ফুটবল, ক্রিকেট খেলেছেন ঝর্না ।  চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রশ্নে মা-র আপত্তি থাকলেও, বাবার সম্মতি ছিল । শিশু - কিশোর বয়সে পাঁচ বছর ঢাকার  স্বনামখ্যাত 'বুলবুল ললিতকলা একাডেমী'তে তিনি নাচ শিখেছেন ।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, দেশভাগের পর ১৯৫৬ সালে ঢাকার 'বুলবুল ললিতকলা একাডেমী'র আমন্ত্রণে এক রবীন্দ্র-সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল ঢাকা গিয়েছিল । ঢাকার তৎকালীন 'নিউ পিকচার হাউস' চিত্রগৃহে রবীন্দ্র-নৃত্যনাট্য 'শ্যামা' পরিবেশন করে পশ্চিমবাংলার সেই সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল ।  সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলে ছিলেন শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় । ঢাকায় পরিবেশিত শ্যামা নৃত্যনাট্যে শ্যামার ভূমিকায় অভিনয় করে ছিলেন পাঞ্জাবি মেয়ে উমা গান্ধি । শ্যামার গানগুলো গেয়েছিলেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় । শ্যামা নৃত্যনাট্য সেখানে দর্শক মনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল । সেই সময় পূর্ববাংলার অনেক মানুষেরই জানা ছিল না, যে, নৃত্যনাট্য বলে কিছু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষে পশ্চিমবাংলা থেকে আর একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল ঢাকায় গিয়েছিল । সেই প্রতিনিধি দল সেখান রবীন্দ্রনাথের 'চন্ডালিকা' নৃত্যনাট্য পরিবেশন করে ছিল ।

১৯৬২/৬৩ সালে ঢাকায় নির্মিত 'চান্দা' এবং 'তালাস' এই দুটো উর্দু ছবিতে অভিনয় করেন শবনম । তখন তিনি উর্দু একেবারেই জানতেন না । বাংলায় উর্দু সংলাপ লিখে মুখস্থ করে অভিনয় করেছেন । ওই দুটো উর্দু ছবি দর্শক নন্দিত হওয়ার পর, ১৯৬৮ সালে তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) চলে যান উর্দু ছবিতে অভিনয় করতে ।

প্রথমদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে লাহোরে স্টুডিওতে  নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনলেও, আড়াই দশকের অধিককাল শবনম ছিলেন পাকিস্তান চলচ্চিত্রের এক নম্বর চিত্র নায়িকা । ওই সময় কালের মধ্যে ১৬২টি কাহিনি চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন । এর মধ্যে উর্দু ছাড়াও আছে কয়েকটি পাঞ্জাবি ভাষায় নির্মিত ছবি। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ১২ বার পাকিস্তান সরকারের দেওয়া জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন । এছাড়া উর্দু চলচ্চিত্রে সারা জীবনের অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকারের দ্বারা পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি ।

শবনম অভিনীত ছবি শুধু পাকিস্তানে নয়, উপমহাদেশের সমস্ত বক্সঅফিস রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে । ১৯৭৭ সালে নির্মিত নায়িকা : শবনম ও নায়ক: নাদিম অভিনীত উর্দু ছবি 'আয়না' (সংগীত পরিচালনা রবিন ঘোষ) পাকিস্তানে টানা পাঁচ বছরের অধিক সময় চলেছে । এই উপমহাদেশে যার দ্বিতীয় নজির নেই বলেই দাবি । উর্দু ছবি 'আয়না'র অনুকরণে মিঠুন চক্রবর্তী  ও কোলাপুরি অভিনীত 'প্যায়ার ঝুকতা নেহি' হিন্দি ছবিটি তৈরি হয় পরবর্তী সময়ে ।

বিগত শতাব্দীর নয় দশকের প্রথম দিকে পাকিস্তানের পাট চুকিয়ে অভিনেত্রী শবনম জন্মভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন । বর্তমানে তিনি একমাত্র পুত্র রনিকে  নিয়ে ঢাকাতেই বসবাস করেন । তবে মাঝেমধ্যেই তিনি তাঁর প্রধান কর্মস্থান পাকিস্তান যান। অভিনয় শিল্পে তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল  ঢাকায় নির্মিত বাংলা ছবিতে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে তাঁর চলচ্চিত্রে অভিনয় জীবন শুরু এবং ১৯৯৯-এ তিনি শেষ বারের মতো ক্যামেরার মুখোমুখি হয়েছেন, ঢাকায় নির্মিত  'আম্মাজান' নামে একটি বাংলা ছবিতে ।

ঢাকা চলচ্চিত্রে বেশ কয়েকজন গুণী পরিচালক, অভিনেতা - অভিনেত্রী, কলাকুশলীর আবির্ভাব সত্ত্বেও, সেখানে সাহিত্য - সংস্কৃতির অন্য সকল শাখার তুলনায় মূল ধারার চলচ্চিত্র শিল্প, নিজস্ব বিকাশের প্রশ্নে  পিছিয়ে আছে বলে ধারণা । এর বড় কারণ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে নিজস্ব সৃজনশীল চর্চার পরিবর্তে অনুকরণ প্রবণতার প্রবল ঝোঁক । অনুপ্রাণিত হওয়া  এবং অন্ধ অনুকরণ এক নয়।কারণ অন্ধ অনুকরণ এক ধরণের বন্ধা সংস্কৃতির জন্ম দেয় । 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত