অচল মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন, অবিলম্বে দাবি মেনে নেয়ার ডাক  

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২ মার্চ ২০২২, ১৩:৩৭ |  আপডেট  : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৩৩

পদবি বদল ও বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের কর্মচারীরা টানা কর্মবিরতি পালন করছেন। এ জন্য নামজারি, জলমহাল, চলমান টেন্ডার কার্যক্রম, ইজারা মূল্য আদায়, অর্পিত সম্পত্তির লিজমানি আদায়, মিসকেস ও গণশুনানি সম্ভব হয়নি। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ চিঠি গ্রহণ ও প্রেরণসহ দৈনন্দিনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজই গতকাল মঙ্গলবার করেননি কর্মচারীরা। এতে মাঠ প্রশাসনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিসি, ইউএনও এবং এসিল্যান্ডরা।

গতকাল কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উজ্জ্বল হোসেন কুড়িগ্রামের ডিসিকে চিঠি দিয়ে জানান, কর্মচারীরা দৈনন্দিন কোনো কাজ করেননি। চলমান কর্মসূচি দীর্ঘায়িত হলে, এ অফিসের ভূমি সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে। হবিগঞ্জের ডিসি ইশরাত জাহান মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানিয়েছেন, সরকারি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনসহ জনসেবা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হবে। নওগাঁ জেলার ডিসি খালিদ মেহদী হাসান বিষয়টি অবগত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছেন। ঝালকাঠির ডিসি মো. জোহর আলী মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টি সুবিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। অফিসের দৈনন্দিন সরকারি কার্যক্রমসহ জনসেবা অব্যাহত রাখার স্বার্থে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। একইভাবে প্রায় প্রত্যেক জেলার ডিসিরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। আর ইউএনও, এসিল্যান্ডরা ডিসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। গত দুই বছরে অন্তত ৫০ জেলার ডিসি, সব বিভাগীয় কমিশনার তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করেছিলেন। এমন প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম একাধিক জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কর্মচারীদের আন্দোলন স্থগিতের প্রস্তাব দেন। ডিসিরা তাদের বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদের দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করবেন। এ জন্য আন্দোলন স্থগিত রাখতে বলেছেন। তবে কর্মচারীরা তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি। অবশেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারী সমিতি (বাবিককাকস) ও বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির (বাকাসস) নেতাদের আজ বুধবার সচিবালয়ে ডেকেছেন। সংশ্নিষ্টরা বলেন, কর্মচারীদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদের ডাকা হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, 'জনপ্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন। আমি বাসা থেকে কোনো কথা বলব না। অফিসে গিয়ে জেনে কথা বলব।' কর্মচারীদের সব দপ্তর ছিল তালাবদ্ধ। আর বারান্দা ও অফিস চত্বরে চেয়ার পেতে বসে ছিলেন কর্মচারীরা। এতে সেবা নিতে আসা মানুষ পড়ছেন ভোগান্তিতে। দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে এসে অসহায় হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।

সিরাজগঞ্জ জেলার ডিসি জরুরি একটি আবেদন গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়ার পরও গ্রহণ করেননি কর্মচারীরা। প্রতিটি ডিসি কার্যালয়ে প্রতিদিন এমন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ আবেদন গ্রহণ করা হয়। কিন্তু গতকাল সারাদেশে একটি আবেদনও গ্রহণ করা হয়নি। একইভাবে করোনার টিকা প্রদান, মজুতসহ বিভিন্ন জরুরি তথ্য প্রতিদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর জন্য প্রতিদিন আবেদন করেন শত শত মানুষ। কিন্তু গতকাল কোনো আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বেশ কয়েকজন এসে ঘুরে গেছেন।

ঢাকা জেলার ডিসি মো. শহীদুল ইসলাম কর্মচারীদের পদবি ও বেতন গ্রেড পরিবর্তনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে অনুরোধ জানিয়েছেন। এ চিঠির অনুলিপি দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে।

বাকাসস অতিরিক্ত মহাসচিব শেখ হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, জনদুর্ভোগ তারা চান না। এর পরও বাধ্য হয়েই কর্মবিরতি পালন করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তাদের এ পথ বেছে নিতে হয়েছে। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত তারা আন্দোলনে থাকবেন। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের হাজার হাজার সেবা গ্রহীতা।

সেবা গ্রহীতারা ক্ষুব্ধ হলে ব্যতিক্রমী ঘটনাও ঘটেছে। সেবা গ্রহীতা কর্মচারীদের এ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান। তিনি ভূমি-সংক্রান্ত কাজের জন্য দিনাজপুর ডিসি কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগে গিয়েছিলেন। খাজনা দিতে গিয়ে শোনেন তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। কর্মচারীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা ওই মুক্তিযোদ্ধাকে বলেন, সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে মাঠ প্রশাসনের এ দপ্তরে যোগদান করেছি। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ও কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই। এভাবে কনিষ্ঠ পদে ৩৬ বছর চাকরি করে অবসরে যেতে হয়। ছেলেমেয়ের কাছে লজ্জা পেতে হয়। কর্মের মধ্যে কোনো আনন্দ খুঁজে পাই না। আমাদের গ্রেড বদল ও পদোন্নতি হয় না এবং সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করে না। আমাদের এ খবরটি সবিনয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই আন্দোলন করছি। তাই আমি সেবা না পেয়েও তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি।

জানা যায়, পদবি বদল ও বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে মাঠ প্রশাসন কর্মচারীদের দীর্ঘ দুই যুগের আন্দোলন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি পদোন্নতি দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও ঝুলছে ওই পদোন্নতি প্রক্রিয়া। অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে যায় মাঠ প্রশাসনের সংস্কার।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত