গুগলের কাছে ঋনি লৌহজংয়ের শাহীন কাদির
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৪:৩৭ | আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৪
গত ৯ই অক্টোবর শনিবার দুপুরে শিমুলিয়া ভাঙ্গায় হঠাৎ একটি ১০/১১ বছরের বাচ্চা ছেলেকে অসহায় হয়ে বসে থাকতে দেখতে পায় হলদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোঃ শাহীন কাদির।
সে তার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ছেলেটার নিকট তার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। ছেলেটিকে আদর যত্নের সাথে শিমুলিয়া ভাঙ্গায় খাওয়া দাওয়া করিয়ে তার থেকে প্রাথমিক কিছু তথ্য সংগ্রহ করে।
ছেলেটি ছোট বিধায় সবকিছু বলতে পারছিলো না। শুধু গ্রামের নাম লকপুর, বাবার নামঃ পিন্টু (গাড়িচালক), মাতার নামঃ সালমা বেগম, ছেলেটি ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে, মাতৃছায়া কিন্ডার গার্ডেন এটুকুই জানতে পারে এবং ছেলেটার বাসার সামনে পেট্রোল পাম্প থাকায় সে একটা গাড়ির সিটে বসে ঘুমিয়ে পরে।
পরে ওপারের ঘাটে এক ব্যক্তি ছেলেটিকে লঞ্চে উঠিয়ে দিলে ছেলেটি শিমুলিয়া ঘাটে আসে এবং হাটতে হাটতে শিমুলিয়া ভাঙ্গায় চলে আসে ।পরে গুগুলে সন্ধান করে জানা যায় লকপুর গ্রাম ফকিরহাট থানা বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। পরে শাহীন কাদির তার খুব কাছের ছোট ভাই লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা ইয়াছিন হোসেনকে ঘটনা অবহিত করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর নিতে বলে।
মির্জা ইয়াছিন হোসেন সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দেয় এবং সেই সাথে তার পরিচিত জনেরা পোস্টটি শেয়ার করা শুরু করে। মির্জা ইয়াছিন হোসেন তার পরিচিত বন্ধু বাগেরহাটের 'শেখ নাজমুল আহমেদ' উপ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাথে যোগাযোগ করে। শেখ নাজমুল আহমেদ তাৎক্ষণিক বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী মনজুর হাসান উল্কাকে ঘটনা অবহিত করে এবং খোঁজ খবর নিতে বলে ।
ততক্ষনে দুপুর পেড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়, পরে শাহীন কাদির ছেলেটিকে তার বাসায় নিয়ে যায় এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে ছেলেটিকে নতুন জামা কাপড় পড়িয়ে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করিয়ে তার ছেলের সঙ্গে খেলনা দিয়ে তাকে সময় কাটাতে সহায়তা করে। পরবর্তীতে কাজী মনজুরুল হাসান উল্কা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে যে এমন একটা ছেলে সকালে হারিয়ে যায়। সে সাথে সাথে মির্জা ইয়াছিন হোসেনকে অবহিত করে এবং ছেলেটির বাড়ির সন্ধান করে তার বাবা মাকে অবহিত করেন।
শাহীন কাদির ছেলেটিকে লৌহজং থানায় নিয়ে অবহিত করতে চাইলে মির্জা ইয়াছিন হোসেন তার পরিচিত লৌহজং থানার এস আই মোঃ শাখাওয়াত হোসেনকে অবহিত করে। শাখাওয়াত হোসেন ডিউটি অফিসার থাকায় ছেলেটিকে লৌহজং থানায় নিয়ে যেতে বলে। পরে শাহীন কাদির ছেলেটিকে থানায় নিয়ে যায়। বিষয়টি এস আই শাখাওয়াত তখন লৌহজং থানার নতুন অফিসার ইনচার্জ মাসুদ হোসেনকে অবহিত করেন। লৌহজং থানা থেকে ফকিরহাট থানায় যোগাযোগ করেন।ফকিরহাট থানাতে ছেলেটি নিখোঁজ এর সাধারন তথ্য না থাকায় প্রাথমিক কোনো কিছু জানা যায় না। পরে লৌহজং থানা থেকে বিশেষ অনুরোধে ফকিরহাট থানা থেকে লকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয় এবং চেয়ারম্যান ওয়ার্ড মেম্বারদের সহায়তায় জানতে পারে ছেলেটি সকাল ৮টার দিকে নিখোঁজ হয়ে যায়। তার গ্রামের বাড়িতে ছেলে হারানোর আহাজারিতে তারা থানায় অবহিত করতে ভুলে যায়। আর ছেলেটির বাবা ঢাকা মাইক্রো গাড়ি চালক।
পরে ফকিরহাট থানা থেকে ছেলের বাবাকে অবহিত করা হয়। এদিকে বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী মনজুরুল হাসান উল্কা ও ছেলেটার বাবাকে সন্ধান দেয় এবং মির্জা ইয়াছিন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে।ছেলেটির বাবা মির্জা ইয়াছিন হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে সে শাহীন কাদির এর নাম্বার ছেলেটির বাবাকে দিয়ে দেয় এবং তার ছেলে সুন্দরভাবে আছে বলে জানান। ছেলেটার বাবা ঢাকা থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শাহীন কাদির ছেলেটিকে নিয়ে লৌহজং থানার মাঠে ঘুরতে থাকে। ছেলেটির পায়ের জুতা ছিড়ে যাওয়ায় শাহীন কাদির তাকে নতুন জুতা কিনে দেন। থানা মাঠে ছেলেটি যা যা খাবার খেতে চায় শাহীন কাদির ছেলেটিকে হাসি খুশি রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।
পরে ছেলেটার বাবা সন্ধ্যার পর লৌহজং থানায় আসলে লৌহজং থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুদ হোসেন ও এস আই শাখাওয়াত হোসেন এবং শাহীন কাদির ছেলেটিকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করেন। রাত ৮ টার পর ফেরী চলাচল না করায় ছেলেটি এবং তার বাবাকে বাসায় রাত্রি যাপন এবং খাবারের ব্যবস্থা করেন শাহীন কাদির। ছেলেটির বাবাসহ গ্রামের গণ্যমাণ্য অনেক ব্যক্তিবর্গ এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ জানায়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত