পাকিস্তানের ৭৫ বছরে কোনও প্রধানমন্ত্রীই পারেননি!

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ৪ এপ্রিল ২০২২, ১১:১৪ |  আপডেট  : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৫২

বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে। ডেপুটি স্পিকার রোববার সেই অনাস্থা-প্রস্তাব বাতিল করে দেন। এর পরই ইমরান খানের আহ্বানে সংসদ ভেঙে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। আর এর ফলে মেয়াদ শেষ করতে পারলেন না তিনিও।

শুধু ইমরানই নয়, পাকিস্তানের ৭৫ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই কখনও খুন হয়ে, আবার কখনও বিরোধী দলের অনাস্থার মুখে পড়ে গদি ছাড়তে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীদের।

লিয়াকত আলি খান ছিলেন স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। চার বছর ৬৩ দিন ক্ষমতায় থাকার পর ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর এক জনসভায় বক্তৃতা দেয়ার সময় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। 
 এরপর খাজা নাজিমুদ্দিন বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলনের পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় নিজের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে নাজিমুদ্দিনকে ক্ষমতাচ্যূত করেন পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মালিক গোলাম। মোট এক বছর ১৮২ দিন ক্ষমতায় ছিলেন নাজিমুদ্দিন।

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ আলি বোগরা মোট দু’বছর ১১৭ দিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শাসন করেন। আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে বোগরাকে একপ্রকার ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল ইসকান্দার মির্জা।

পাকিস্তানের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী চৌধুরি মহম্মদ আলিও মোট এক বছরের কিছু বেশি সময় প্রধানমন্ত্রীত্ব করেছেন। দলবিরোধী কাজকর্মের জন্য তাকে সরিয়ে দেয়া হয়।

এরপর হুসেইন শাহিদ সুরাবর্দিও এক বছর ৩৫ দিন ক্ষমতায় থেকে গভর্নর জেনারেল ইসকান্দার মির্জার চাপের মুখে পড়ে গদি ছাড়তে বাধ্য হন।

ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দিরগার তো মাত্র দু’মাস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে চেয়ে ক্ষমতা যায় তার।

তারপর ফিরোজ খান নুন ২৯৫ দিন শাসন করেন পাকিস্তান। খুব কম সময়েই ফিরোজের জনপ্রিয়তা দেখে তাকেও সরিয়ে দেন ইসকান্দার।

মাত্র ১৩ দিন ক্ষমতায় থেকে অষ্টম পাক প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিন পাকিস্তানের ইতিহাসে সব থেকে স্বল্পমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি আয়ুব খানের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি নিজেই পদ ছাড়েন। তিনিই পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি পাকিস্তানের শেষ বাঙালি নেতা হিসেবেও পরিচিত।

এরপর জুলফিকার আলি ভুট্টো তিন বছর ৩২৫ দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জিয়া-উল-হকের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যূত করে।

জুলফিকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় আনা হয় মহম্মদ খান জুনেজোকে। তিনিও তিন বছরের কিছু বেশি সময় পাক মসনদে ছিলেন। তবে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য দায়ী করে পদ থেকে সরান রাষ্ট্রপতি পদে বসে থাকা জিয়া।

এরপর পাকিস্তানের একাদশ এবং প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন জুলফিকারের মেয়ে বেনজির ভুট্টো। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রায় দু’বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ এনে ১৯৯০ সালে ইসহাক তাকে বরখাস্ত করেন।

১৯৯০ সালে দ্বাদশ পাক প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ শরিফ। ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রপতি ইসহাক পাক সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর তিনি গদিচ্যূত হন এবং বিরোধী নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

ত্রয়োদশ এবং চর্তুদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবারও পাকিস্তান শাসনের ভার পান বেনজির এবং নওয়াজ। ১৯৯৬ সাল থেকে বেনজির ৩ বছর ১৭ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। নওয়াজের দ্বিতীয় বারের শাসনকাল চলে দু’বছর ২৩৭ দিন। 

এরপর ক্ষমতায় আসেন মির জাফারুল্লাহ খান জামিলি। তবে প্রায় দু’বছরের শাসনকালের পর হঠাৎই নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। 

ষষ্ঠদশ পাক প্রধানমন্ত্রী চৌধরি সুজাত হোসেনের শাসনকাল ছিল মাত্র ৫৭ দিন। এর পর তিনি নিজেই শওকত আজিজকে নিজের পদ ছেড়ে দেন।

পারভেজ মোশারফের ডান হাত হিসেবে পরিচিত শওকত তিন বছর ক্ষমতায় থাকার পর নিজে থেকেই সরে যান।

শওকতের পর পাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন ইউসুফ রাজা গিলানি। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি মোট চার বছর ৮৬ দিন ক্ষমতায় ছিলেন।

পাকিস্তানের উনিশতম প্রধানমন্ত্রী হন রাজা পারভেজ আশরফ। মোট ২৭৫ দিন ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। 

২০১৩ সালে ফের ক্ষমতায় ফেরেন আগে দু’বার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসা নওয়াজ। তৃতীয় বারে চার বছরর ৫৩ দিন ক্ষমতায় থেকে পানামা পেপার দুর্নীতিতে জড়িয়ে ক্ষমতা হারান। 

নওয়াজের পর ৩০৩ দিনের জন্য একুশতম পাক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহিদ খান আব্বাসি। তবে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের মুখে তাকে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে হয়।

এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন ইমরান খান। নির্বাচনে তার জোট সঙ্গী ছিল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম)। পাকিস্তানের ধারা বজায় রেখে ইমরানও মেয়াদ শেষ করতে পারলেন না।

 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত