শ্রীনগর সরকারি কলেজের ইতিহাস

  মো.জয়নাল আবেদীন  

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:২০ |  আপডেট  : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:১৭

 (পূর্ব প্রকাশিতের পর) 
ষোলঘরের এক মাইল উত্তরে হাঁসারায় ১৮৭৬ সালে কালী কিশোর ইংরেজী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রীনগরের পশ্চিমে শ্যামসিদ্ধি গ্রামেও একটি উচ্চ বিদ্যালয় ছিল। এই স্কুলটি ১৯২৫ সালে ষোলঘর স্কুলের সাথে একীভূত হয়ে নতুন নামকরণ হয় ‘ষোলঘর অক্ষয় কুমার শশী কুমার ইংরেজী উচ্চ বিদ্যালয়’। শশী কুমার ছিলেন শ্যামসিদ্ধি গ্রামের স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা।

‘বিক্রমপুরের মানুষদের ছিল বিদ্যার প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ আর অনুসন্ধিৎসু মন। কোনও কিছুই জোর করে তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যেত না। যে-কোনও বিষয়কে তাঁরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে দেখতেন, যাচাই না করে কিছু মেনে নিতেন না চট করে। সেই কারণেই তাঁদের ওপর অযথা প্রভুত্ব বা কর্তৃত্ব করতে গেলে বিদ্রোহের বা প্রতিবাদের ঝড় উঠত।

বঙ্গদেশের অন্যান্য অ লের চেয়ে বিক্রমপুরের সাক্ষরতার হার বেশি ছিল।  মোটামুটিভাবে প্রায় সকলেই বাল্যকালে কিছুদিন পাঠশালা বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে যেত। অনেক জমিদার এবং মহৎ ব্যক্তি ছিলেন যাঁরা বিক্রমপুরে প্রচুর বিদ্যালয় স্থাপনের কাজে সহায়তা করতেন। সে যুগে ৫-৭ বর্গ মাইলের মধ্যে একটা না একটা হাই স্কুল থাকতই। তবে মেয়েদের স্কুলের সংখ্যা তত বেশি ছিল না এটা ঠিক। স্কুলে মুসলমান ছাত্র কম আর হিন্দু ছাত্রই বেশি দেখা যেত’ (সূত্রঃ আমার বিক্রমপুর, হরিআনন্দ বাড়রী,পৃষ্ঠা-২৩৭)।

হরি আনন্দ বাড়রী তাঁর বইয়ের ‘আমার বিদ্যালয়’ পর্বে যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে বিক্রমপুরের সর্বত্র যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল তার চিত্র পাওয়া যায়। এছাড়াও এক সময় বিক্রমপুরের অনেক পন্ডিত নিজ বাড়িতে টোল প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয় ও দূরদূরান্তের ছাত্রদের শিক্ষা দান করতেন।

১৯৬৯ সালে ছাত্র জনতার আন্দোলন আরো বেগবান হয় মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ‘গভর্নর হাউস’ ঘেরাওর হুঙ্কারে। এ সময়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুজোহা সৈন্যদের গুলিতে শহীদ হওয়ায় গণ আন্দোলন আরো গতি পায়। ২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান ও নবকুমার ইনন্সিটিউট -এর দশম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর শহীদ হলে জনগণ রাজপথে নেমে গণঅভ্যুত্থান ঘটায়। আইয়ূব খান বাধ্য হয় আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গণসম্বর্ধনা দেয় এবং ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমদ তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। উপস্থিত ১০ লক্ষ জনতা ২০ লক্ষ হাত তুলে তা সমর্থন করে। বঙ্গবন্ধু জনতার অনুমোদন পেয়ে আইয়ূব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। বঙ্গবন্ধু বৈঠকে ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রবর্তনের দাবি পেশ করেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকচক্র তা না মানায় গোল টেবিল আলোচনা ব্যর্থ হয়। যার পরিণতিতে আইয়ূব খান ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ পদত্যাগ করে সেনা প্রধান ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। ইয়াহিয়া খান দেশে সামরিক আইন জারি করে রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থগিত করেন।

রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকাকালীন শ্রীনগর থানার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্রিয় হন। এলাকার সকলকে নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে কলেজের নামকরণ করা হয় ‘শ্রীনগর মহাবিদ্যালয়’ - যা বর্তমানে শ্রীনগর সরকারি কলেজ। ১৯৭০ সালে একটি লিফলেট ছাপিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সর্বত্র প্রচার করা হয়।

শ্রীনগর-লৌহজং-সিরাজদিখান এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রাক্তন সদস্য দামলা গ্রামের এ্যাডভোকেট মাহতাব উদ্দীন আহমদকে সভাপতি ও শ্রীনগর থানার তৎকালীন সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) কাজী আব্দুল মোতালেবকে সম্পাদক করে কলেজ পরিচালনা পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদের অন্যান্য নির্বাহীরা ছিলেন শাহ আলম (মাখন মিয়া) সদস্য, ঢাকা জেলা পরিষদ কোষাধক্ষ, মোঃ শমসের আলী, প্রধান শিক্ষক, ষোলঘর একেএসকে উচ্চ বিদ্যালয়, যুগ্ম সম্পাদক-১, একেএম আব্দুল বারী, প্রধান শিক্ষক, স্যার জেসি বোস উচ্চ বিদ্যালয়, যুগ্ম সম্পাদক-২,সদস্য সৈয়দ আব্দুল মান্নান ও কাজী হারুনুর রশীদ। 

মস্তরীদের বিশাল আয়তনের বাড়ি কলেজের নামে দলিল করে দানপত্র প্রদান করেন সৈয়দ আব্দুল মান্নান। মস্তরীদের পরিত্যক্ত উত্তর দিকের একতলা দালান ঘষামাজা করে রং করা হয়। পার্টিশন দিয়ে তিনটি কক্ষ করা হয় যার মাঝের কক্ষ অধ্যক্ষের জন্য, পূর্ব দিকের কক্ষ শিক্ষক কমন রুম ও পশ্চিম দিকের ছোট্ট কক্ষ কেরানির জন্য বরাদ্দ করা হয়। সামনে পশ্চিম প্রান্তে পূর্বমুখ করে উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ আকারের টিন-কাঠের চৌচালা নির্মান করা হয় শ্রেণী কক্ষের জন্য।

কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রভাষক নিয়োগের জন্য দৈনিক ইত্তেফাক ও পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডঃ বজলুল করিম (বি করিম)কে চেয়ারম্যান করে ইন্টারভিউ বোর্ড গঠন করা হয়। ঢাকার সেগুন বাগিচা আর্ট গ্যালারি (বর্তমানে বাংলাদেশ শিল্প কলা একাডেমি)তে আবেদনকৃতদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। অধ্যক্ষ পদে খন্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হয় ঢাকা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এমএ রশীদকে। সাধারণ ইতিহাসে একেএম ওয়ালি উল ইসলাম খান, পৌরনীতিতে আবদুর রউফ খান, বাংলায় সিরাজুল হক, তর্ক বিদ্যায় আখতারুজ্জামান ও অর্থনীতি/বানিজ্যে মোঃ সুলতান মিয়া প্রভাষক পদে নিয়োগ পান।

ক্লার্ক কাম টাইপিস্ট পদে মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও অফিস সহকারি পদে মোঃ আব্দুল হামিদকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক পরীক্ষা উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির মাধ্যমে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে কর্তৃপক্ষ একটি লিফলেট ও শিক্ষকদের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে মুদ্রিত প্রসপেকটাস বিতরণ করা হয়। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে কলেজে ছাত্র ভর্তির প্রক্রিয়া শুরুর আগে জুন মাসে এক বিকেলে কলেজ প্রাঙ্গনে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ষোলঘর একেএসকে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্র মোঃ জয়নাল আবেদীন বন্ধু ফজলুল হক সেলিমের অনুরোধে মিলাদ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। সে ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার খোজঁ খবর জেনে বাড়িতে এসেছিল সময় কাটাতে। মিলাদের মোনাজাত শেষে সৈয়দ আব্দুল মান্নান প্রস্তাব করেন “বিসমিল্লাহ বলে এখনই আমরা ছাত্র ভর্তির শুভ কাজটি করতে চাই।” সকলে আঙ্গুল দিয়ে মোঃ জয়নাল আবেদীনকে দেখিয়ে বলেন,“জয়নাল এবারে প্রথম বিভাগ পেয়েছে- ওঁকে ভর্তি করেই আমরা কলেজ চালু করতে চাই।” আবদুর রউফ খান ছাত্র ভর্তির ফর্ম পুরণ করতে বসে যান। ষোলঘর একেএসকে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শমসের আলী ও সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ ওয়াজি উল্লাহ মোঃ জয়নাল আবেদীনের সব তথ্য বলে দিলেন। ভর্তি ফর্ম লেখা শেষে তাঁরা মোঃ জয়নাল আবেদীনকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। প্রথম ছাত্র ভর্তির খবর প্রচার হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করা ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে শুরু করে। প্রথম ছাত্রী বেলতলী জি জে উচ্চ বিদ্যালয়ের গীতা রানী চৌধুরী।

ক্লাস শুরুর আগে কলেজের জন্য ১০টি হাই বে , একটি সেক্রেটারিয়েট টেবিল ও বেশকিছু চেয়ার তৈরি করে ঢাকা থেকে নিজস্ব লে  প্রেরণ করেন ষোলঘরের গাজী সিরাজুল হক (ফিরোজ গাজী)।

ক্লাস শুরুর প্রথম দিন সকল ছাত্র-ছাত্রীর উদ্দেশে উপদেশমূলক বক্তব্য রাখেন কলেজ কমিটির সম্পাদক ও শ্রীনগরের সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) কাজী আব্দুল মোতালেব। বাংলা গদ্য বইয়ের পাঠ্য ছোটগল্প রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ দিয়ে কলেজের প্রথম ক্লাস নিলেন সিরাজুল হক। এ ভাবেই শুরু হলো শ্রীনগর কলেজের শুভ যাত্রা।

১৯৭০ সালে দেশে বন্যা হয়। কলেজে আসার নিচু মেঠো রাস্তা বন্যার পানিতে ডুবে যায়। কিছুদিন শ্রীনগর জুনিয়র স্কুল থেকে সরেঙ্গা নৌকায় পাড় হয়ে ছাত্র ছাত্রীরা কলেজে আসে। বন্যার জন্য কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়। বন্যার পরে দেশে সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়। শ্রীনগর কলেজের ২/১ জন ছাত্র বাদে সকলে বঙ্গবন্ধুর নৌকার পক্ষে কাজ করে। নির্বাচনের পর নির্বাচিত এম এন এ কফিল উদ্দীন চৌধুরী ও এম পি এ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কলেজের উন্নয়নে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। কফিল উদ্দীন চৌধুরী পাঠাগারের জন্য অনেক বই ও একটি আলমারি দান করেন।

বন্যা ও নির্বাচনের পরে আবার কলেজে ক্লাস শুরু হয়। অধ্যক্ষ এম এ রশীদ সপ্তাহে দু’দিন ঢাকা থেকে এসে ইংরেজির ক্লাস নেন। অনেক দিন তিনি আমতলায় ক্লাস নিতেন। ১ মার্চ, ১৯৭১ দুপুরের দিকে পৌরনীতি পড়াতে এসে আবদুর রউফ খান ছাত্রদের জানান যে, তিনি রেডিওর খবরে শুনেছেন, ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন। এ কথা শুনেই শ্রীনগর থানা ও শ্রীনগর কলেজ শাখা ছাত্র লীগের সভাপতি মোঃ জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে সকল ছাত্র-ছাত্রী কলেজ ত্যাগ করে প্রতিবাদ সভা ও শ্লোগান দিতে দিতে মিছিল বাহির করে। মিছিল শেষে ছাত্র নেতৃবন্দ কলেজে ফিরে ঘোষণা করে- দেশ স্বাধীন না করে তারা আর কলেজে আসবে না।
ইয়াহিয়ার ঘোষণার প্রক্ষিতে বঙ্গবন্ধু অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। শ্রীনগর কলেজের ছাত্র নেতৃবৃন্দ অসহযোগ আন্দোলন শ্রীনগরে সফল করতে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করেন। তারা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ৮ই মার্চের সকালে ঢাকা বেতার থেকে মাইক যোগে কাঠপট্টি থেকে প্রচারের ব্যবস্থা করেন।১৩ই মার্চে থানা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যেগে মোঃজয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুস্ঠিত ছাত্র জনতার সভা শেষে পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তলন করা হয়। ২৬ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের ফলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার করার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে ২৯ মার্চ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে শ্রীনগর কলেজের ছাত্র নেতৃবৃন্দ শ্রীনগর থানার রাইফেল-গুলি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধো অংশগ্রহণ করে। শ্রীনগর কলেজের ছাত্রদের মধ্যে মোঃ জয়নাল আবেদীন, মোঃ আনোয়ার হোসেন খান, ইদ্রিস আলী মিয়া, সালাহ উদ্দীন খান টুলুসহ অনেকে মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ নিয়ে সরাসরি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেন। কলেজের ছাত্রদের মধ্যে ফজলুল হক সেলিম সংগঠক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখে।

১৬ ডিসেম্বর,১৯৭১ বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে।স্বাধীনতার পর শ্রীনগর কলেজের নবযাত্রা শুরু হয়।এমসিএ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে চেয়ারম্যান করে নতুন গভর্নিংবডি গঠন করা হয়।আলম হামিদ উল্লাহ,আব্দুল হাই খান ও শেখ আতাহার আলীকে সদস্য করা হয়।
কলেজের আইনানুগ অনুমোদনের জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে নতুন করে আবেদন করা হয়। শিক্ষা বোর্ড পূর্ণকালীন অধ্যক্ষের শর্ত দেয়। অধ্যক্ষ এম এ রশীদ সরকারি ঢাকা কলেজের চাকুরি ছেড়ে আসবেন না বিধায় প্রথমে আবদুর রউফ খানকে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিতে চাওয়া হলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে একেএম ওয়ালি উল ইসলাম খানকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কলেজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার অন্যতম শর্ত হলো পর্যাপ্ত ফান্ডের সঙ্কুলান। মাস শেষে বেতন না পেলে শিক্ষকগণ নতুন চাকুরির সন্ধানে ব্যস্ত হবেন -এটাই স্বাভাবিক । সে জন্য কলেজ কমিটি পর্যাপ্ত ফান্ড গড়ে তুলতে জোর দেন। শ্রীনগর ল ঘাট, শ্রীনগর হাট স্কুল-কলেজের পক্ষে ডাক আনা, খাল দিয়ে বড় ব্যবসায়ী নৌকা যাতায়াতে চাঁদা আদায়, পাসপোর্ট ফরমে এমসিএ-এর স্বাক্ষরের জন্য কলেজ ফান্ডে চাঁদা প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে কলেজ ফান্ড গড়ে তোলা হয়। কলেজের চেয়ারম্যান হিসেব শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বড় যে কাজটি করেন তাহলো বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেউলভোগ গরুর হাট ডাক হতে না দেওয়া। প্রতি মঙ্গলবার অধ্যক্ষ মহোদয় ২/৩ জন সহকর্মী ও ছাত্র নেতৃন্দকে নিয়ে দেউলভোগ গরুর হাটে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় আদায়কৃত টাকা কলেজের হিসেবে অগ্রণী ব্যাংকে জমা করতেন। দেউলভোগ গরুর হাটের টাকায় শ্রীনগর কলেজ আর্থিকভাব সাবলম্বী হয়। এ ছাড়াও প্রতি বছর রথমেলা উপলক্ষে শ্রীনগর হাই স্কুল প্রাঙ্গনে আয়োজিত মাসব্যাপী যাত্রাপালা থেকেও কলেজ ফান্ডে অনেক টাকা জমা হতো।

১২ মে,১৯৭২ শ্রীনগর কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র সংসদের প্রথম ভিপি মোঃ জয়নাল আবেদীন ও জিএস মোঃ আনোয়ার হোসেন খান।

জুন মাসে শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী ও তথ্যমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে কলেজে নিয়ে আসেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁদের কলেজের পক্ষ থেকে ব্যাপক অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করা হয়। ছাত্র সংসদের ভিপি মোঃ জয়নাল আবেদীন কলেজে বিজ্ঞান শাখা খোলা ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানান। শিক্ষামন্ত্রী দুটি দাবি মেনে নেন। শ্রীনগর খেলার মাঠে বিরাট জনসভায় মন্ত্রীদ্বয় ভাষণ দেন। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের আহবানে অনেকে কলেজ ফান্ডে অনুদানের প্রতিশ্রুতি দেন। অনুদানদাতাদের মধ্যে খোদাই বাড়ির আজিজ খান কলেজের ছাত্রবাস নির্মাণের জন্য এক লক্ষ টাকা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক যদু গোপাল দাস এক মাসের বেতন প্রদানের প্রতিশ্রুতি সকলের মনে দাগ কাটে। কলেজের বিজ্ঞানাগার চালুর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু যন্ত্রপাতি ও একটি টাইপ রাইটার কিনে দেন আব্দুল হাই খান।

১৯৭২ সালের শেষ দিকে কলেজের ছাত্ররা প্রথম বার হরগঙ্গা কলেজ কেন্দ্রে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। মানবিক শাখায় ১৪৩ জন ও বানিজ্য শাখায় ৪৭ জন পরীক্ষা দিয়ে যথাক্রমে ১১৮ ও ৪৬ জন উত্তীর্ণ হয়। প্রথম হয় মোঃ জয়নাল আবেদীন। ১৯৭৩ সালে শ্রীনগর কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র ও বিজ্ঞান শাখার অনুমোদন দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বিজ্ঞান শাখা থেকে প্রথম বিভাগ পায় সাগর চক্রবর্তী।
১৯৭৩ সালের ২৪ জানুয়ারি কলেজের দক্ষিণ প্রান্তের আমতলায় ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির চিফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। বাংলাদেশ ছাত্র লীগের দফতর সম্পাদক শহীদুল আলম সাঈদ ও ছাত্র নেতা জামাল চৌধুরী উদ্বোধনী অনষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ওয়ালি উল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শ্রীনগর থানা ছাত্র লীগের সভাপতি ও শ্রীনগর কলেজ ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি মোঃ জয়নাল আবেদীন (সূত্র-দৈনিক আজাদ, ২৬ জানুয়ারি, ১৯৭৩)।

১৯৭৩ সালে ডিগ্রী কোর্স চালু করার জন্য এল সাইজের একটি ঘর তৈরি করা হয়। এ ঘর নির্মাণের জন্য বেশির ভাগ ঢেউটিন দান করেন ব্রুজার পাড়ার ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যদের অগ্নি সংযোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পরেশ পোদ্দার, ঝোলান পোদ্দার,  শ্রীহরি পোদ্দার, গোবিন্দ পোদ্দার প্রমুখ। বর্তমান প্রশাসনিক ভবনের উত্তর-পূর্ব অংশে পদ্মা নদী ভাঙ্গা কোরহাটির দুই ভাই বাড়ি করেছিলেন। কলেজের প্রয়োজনে তারা বাড়ি ছেড়ে দেন। বর্তমান মসজিদ ও ছাত্রাবাসের জমিতে কয়েকটি গরীব পরিবার বাস করত। তাদের অন্যত্র পূনর্বাসন করা হলে তারা জমি ছেড়ে দেন।

১৯৭৪ সালে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে মোঃ জয়নাল আবেদীন দ্বিতীয়বার ভিপি ও মোফাজ্জল হোসেন জিএস নির্বাচিত হয়। অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে আসেন বানিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চিফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডঃ বজলুল করিম, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মীর আনোয়ার আলী প্রমুখ। 

১৯৭৩-৭৪ শিক্ষাবর্ষে বিএ ,বিকম কোর্স চালু করা হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের হরগঙ্গা কলেজের মাধ্যমে পরীক্ষা দেয়ার অনুমোদন দেয়। ১৯৭৫ সালের জুন-জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ডিগ্রী পরীক্ষার ফল ১৯৭৬ সালে ঘোষিত হলে মাত্র ৪%পাসের  হারে কলেজের ছাত্রদের মধ্যে প্রথম গ্রাজুয়েট হয় মোঃ জয়নাল আবেদীন, জালাল উদ্দীন মিয়া, গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস, হারুনুর রশীদ, নজরুল ইসলাম ও সালাহ উদ্দীন আহমদ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে  হত্যার খবর পেয়ে শ্রীনগর কলেজের ছাত্ররা প্রতিরোধের চিন্তা নিয়ে শ্রীনগর থানার ওসি আবদুর রশীদ মোল্লার সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ওসি শান্ত থাকার ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেন। ১৩ আগস্ট থেকে প্রখ্যাত সাংবাদিক সাহিত্যিক রনেশ দাস গুপ্ত শ্রীনগর কলেজের অধ্যক্ষের বাসায় অবস্থান করছিলেন। ১৫ আগস্ট বিকেলে ছাত্র নেতৃবৃন্দ তাঁকে নিয়ে বৈঠক করে। রনেশ দাস গুপ্ত বলেন, মোশতাক খুব ধূর্ত ও নিষ্ঠুর। হত্যাকাণ্ড যা ঘটিয়েছে- আর হয়তো হত্যা করবে না। তবে দেশ কম করে হলেও বিশ বছর পিছিয়ে গেল। উল্লেখ্য, রনেশ দাস  দাস গুপ্ত ধূমকেতু খেলাঘর আসরের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হয়ে ১৩ আগস্ট শ্রীনগরে এসেছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের পরে শ্রীনগর কলেজের ছাত্ররা খুনীচক্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ভিপি  ও জিএস হয় যথাক্রমে মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, নজরুল ইসলাম তালুকদার (মালুম), আওলাদ হোসেন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ (ডালু)। অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বোস প্রফেসর আব্দুল মতিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার তথ্যমন্ত্রী এম কোরবান আলী ও সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত।
১৯৭৮ সালে শহীদ মিনারের উত্তর দিকে দক্ষিণমুখী পূর্ব-পশ্চিমে দীর্ঘ কলেজের প্রথম নুতন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মহকুমা প্রশাসক মোঃ হাবিবুল্লাহ।

আব্দুল আজিজ খানের অর্থায়নে নির্মিত হয় আব্দুল হামিদ খান ছাত্রবাস। কলেজের মসজিদ নির্মানে আবুল কালাম খান অর্থ দান করেন। সরকারি অনুদানে নির্মিত অডিটরিয়ামের জন্য জমি নামমাত্র মূল্যে বিক্রির সম্মতি দেন সুবোধ চন্দ্র সরকার (নাগর পোদ্দার )।

 ১৯৮২ সালে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করে বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদদের নিয়ে গঠন করেন জাতীয় পার্টি। বিক্রমপুর থেকে এরশাদের মন্ত্রীসভায় যোগ দেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) কেএম আমিনুল ইসলাম, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, এম কোরবান আলী ও ডঃ মিজানুর রহমান শেলি। মন্ত্রী হয়ে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন  শ্রীনগর কলেজের উন্নয়নে নজর দেন। প্রথমে কলেজে ডিগ্রী পরীক্ষা কেন্দ্র আনেন। ১৯৮৭ সালের ১২ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাকে শ্রীনগর নিয়ে আসেন এবং শ্রীনগর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জনসভায় তাঁর অনুরোধে রাষ্ট্রপতি শ্রীনগর কলেজ ও শ্রীনগর সুফিয়া হাই খান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের ঘোষণা দেন। ১৯৮৮ সালের ১৩ জানুয়ারি কলেজ জাতীয়করণ কার্যকরী হয়। বেসরকারি আমলের শেষ অধ্যক্ষ বখশী জাঁহাগির আলী মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত  অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকারি আমলের প্রথম অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন ডঃ এএইচ এম শামসুদ্দীন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে শ্রীনগর থেকে প্রফেসর ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এমপি হয়ে সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও সংসদ উপনেতা হন। ২০০১ সালে তিনে রাষ্ট্রপতি হন। এ সময়ে তিনি শ্রীনগর সরকারি কলেজে বহুতল ভবন নির্মাণে অবদান রাখেন।

 শ্রীনগরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে শ্রীনগরের মানুষ মুক্তহস্তে দান ও সার্বিক সহায়তা করেছেন। কিন্তু ২০০৯-২০১৯ দশকে ক্ষমতাসীন দলীয় ২/১ জন শ্রীনগর কলেজের পুকুর, জমি দখলের চেষ্টা করে। প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম কিবরিয়া ও অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে তা প্রতিহত হয়েছে। অডিটরিয়াম নির্মাণকালে সুবোধ চন্দ্র সরকার জমি দানে সম্মত হন। টোকেন মানি হিসেবে দুবার তাঁকে কিছু টাকাও দেওয়া হয়। যা গত ১১ আগস্ট, ২০১৬ কলেজে অনুষ্ঠিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রাক্তন অধ্যক্ষ একেএম ওয়ালি উল ইসলাম খান ও প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে সুব্রত সরকার প্রাক্তন অধ্যক্ষ  প্রফেসর গোলাম মোস্তফা সরকার ও বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ মোঃ মাহবুব সরফরাজ-এর সাথে কলেজের প্রাক্তন ছাত্র নেতৃবন্দসহ দুবার বৈঠক করেছে। সুব্রত সরকার কিছু শর্তে তাঁর প্রয়াত পিতার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সম্মতি দিয়েছেন।

শ্রীনগর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত শ্রীনগর কলেজে এখন একাধিক বিষয়ে স্নাতক সম্মান ও মাস্টার্স ডিগ্রী পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। (সমাপ্ত)

(২০২০ সালে ছিল শ্রীনগর কলেজের পঞ্চাশ বছরপূর্তি। কিন্তু করোনার কারণে কোনো কর্মসূচি নেওয়া যায়নি। পঞ্চাশ বছরপূর্তি স্মরণে এই স্মৃতিচারণমূলক নিবন্ধটি লিখেছেন শ্রীনগর কলেজ ছাত্র সংসদের  প্রাক্তন ভিপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি ও ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন)। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত