শাঁখের করাত!

  শাশ্বত স্বপন  

প্রকাশ: ১১ মে ২০২১, ০৮:৩৩ |  আপডেট  : ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৫২

টীকা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি--কোন পথে যাবে বাংলাদেশ? চীন বিরোধী জোট কোয়াড- এ  গেলে চীন বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হবে-- পরোক্ষভাবে হুমকী দিলেন চীনা রাষ্ট্রদূত। বেইজিং থেকে ঢাকার পথে ফ্রী ৫ লক্ষ করোনা টীকা। তারপর যান লাগবে,  শর্ত সাপেক্ষে কিনতে হবে।

ঐ দিকে ভারতের করোনা মহামারী ভয়ানক! নিজের দেশের মানুষ অক্সিজেন, টীকা নিয়ে মহা সংকটে আছে। পাওনা টীকা ভারত এখনও বাংলাদেশকে দেয় নাই। একটি দেশের উপর নির্ভর করতে গিয়ে বাংলাদেশ  তার জনসংখ্যার প্রায় ১% এর  মানুষকে টীকা দিতে পেরেছে। WHO' র সদ্য অনুমোদিত কম দামের চীনের টীকা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য খুবই দরকার।

আমেরিকা-অষ্ট্রেলিয়া-জাপান -ভারত -- এই কয়েক দেশের জোট কোয়াড- এ বাংলাদেশ যাতে  যোগ না দেয়, এই জন্য কয়দিন আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন।। সম্প্রতি রাষ্ট্রদূত সতর্ক বার্তা দিয়েছেন।  চীনের আগ্রাসন নীতির কারণে কোয়াড এর সদস্য সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে। প্রতিটি দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ভাল, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের কালোত্তীর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশের উন্নয়নে সবগুলো দেশই ভূমিকা রাখে । আর এই জোটে ভূরাজনীতিগত কারণে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আবার লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্ত রোহিঙ্গা সমস্যা মায়ানমার সৃষ্টি করেছে চীনের শক্তিবলে। চীন যদি শক্তভাবে সমালোচনা করত, বার্মা কখনোই সাহস করত না। 

চীন তা করে নাই। ইতিহাসের আলোকে বলতে হয়, আমেরিকা, চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিরোধীতা করেছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ১৯৭৫ সালের ৩১ শে আগস্ট চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইতিহাস না হয় এখন অন্তরে নিরব থাক। 

 রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে বাংলাদেশ এখন মহাবিপদে। চীন যদি গ্যারান্টি দেয়, সব রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নিতে সর্বোচ্চ সাহায্য করবে, তাহলে বাংলাদেশের সরকার জোটে যোগ দেবার বিষয়ে নেতিবাচক চিন্তা করতে পারে, এমনিতেও বাংলাদেশ কোন সামরিক জোটে যোগ দিতে আগ্রহী নয়।

এটাও মনে রাখতে হবে, চীনের সাথে বেশি সম্পর্ক রাখাও বিপদ, মায়ানমারের মত বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে উস্কানী দিতে পারে, সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় এনে মায়ানমারের মত বাংলাদেশকে বিশ্ব থেকে চীন বিচ্ছিন্ন করতে চাইবে। আরেকটা চিন্তার বিষয়ও আছে, মায়ানমার সরকার বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দাবীগুলো যদি না মানে, তারা নিজ দেশে যেতে চাইবে না। মায়ানমারের বর্তমান সেনাবাহিনী শাসিত সরকার রোহিঙ্গাদের দাবীগুলো মেনে নেবে,  বিশ্বাস করা যায় না। তারপর তারা সব রোহিঙ্গাদের নিতেও চাইবে না, আর তাদের  দাবীগুলো আশ্বাস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখবে।

মায়ানমারের রাখাইন(আরাকান) এলাকায় ভারত ও চীনের বিশাল শিল্প বিনিয়োগ। মায়ানমার কৌশলগত কারণে ভারত চীন দুই দেশের সাথেই সম্পর্ক রেখে চলে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বৈরী রাজনীতি মায়ানমারের সাথে, নিজ দেশের সমস্যাগত কারণে তাদের সেনাবাহিনী অত্যাচার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে, ফেরত নিচ্ছে না। মায়ানমারকে চাপে রাখার জন্য এই জোটে যোগ দেওয়াটা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কি করবে বাংলাদেশ?


 


 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত