মুন্সীগঞ্জে সাইকেলে ও ঘোড়ার গাড়ীতে আলুর বস্তা হিমাগারে নিতে ব্যস্ত শ্রমিকরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২১, ০৯:৪৯ |  আপডেট  : ১৯ জুন ২০২৪, ১১:৩৩

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু: বাংলাদেশের আলুর চাহিদার মোট তিন ভাগের এক ভাগ মুন্সীগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত হয়। চলতি মৌসুমে জেলার বিস্তীর্ন জনপদে রোপন করা ৩৯ হাজার ৩’শ হেক্টর জমিতে রোপন করা আলু উত্তোলনের পর তা এখন বস্তাবন্দি করে হিমাগারে নেওয়া হচ্ছে। আর জমি থেকে এসব আলু হিমাগারে নিতে উত্তরা ল থেকে আসা শ্রমিকরা বাই সাইকেল ও ঘোড়ার গাড়ী ব্যবহার করছে। এখন জেলার সিরাজদীখান, শ্রীনগর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভ্রাম্যমান শ্রমিকদের আলু বহন করার দৃশ্য। 

গত দ্ইু দিন জেলার সিরাজদীখান উপজেলা ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরা লের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজর হাজার শ্রমিক জমি থেকে উত্তোলন করা আলু হিমাগারে পৌছে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ জন দলবদ্ধ হয়ে কৃষকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে জমিতে রাখা বস্তা ভর্তি আলু বাই সাইকেলে করে এবং ঘোড়ার গাড়ীতে উঠিয়ে জেলার ৬৭টি হিমাগারে পৌছে দিচ্ছে। সারিবদ্ধ ভাবে আলু বস্তা নেওয়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করছেন জেলার মানুষজন এবং বিভিন্ন সড়ক দিয়ে চলাচলরত পথচারীরা। এমনকি একাধিক ভ্রমন পিপাসু মানুষ নিজ মোবাইল দিযে এসব দৃশ্য ছবি তুলে ও ভিডিও করে সংগ্রহে রাখছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পুরানদাহ গ্রামের শ্রী গোবিন্দ চন্দ্র দাস ও তার স্ত্রী রূপসী রানী দাস। ৫ বছরের আরতী রানী ও ৭ বছরের গৌরি রানীকে নিয়ে গত দেড় মাস ধরে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধামারণ গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে আলু উত্তোলন ও পরিবহন কাজ করছেন। স্বামী শ্রী গোবিন্দ চন্দ্র দাস জমি থেকে আলুর বস্তা মাথায় বহন করে হিমাগারে পৌছে দিচ্ছেন, আর স্ত্রী রপসী রানী দাস জমি থেকে আলু উত্তোলন করার কাজে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই এখন আলু শ্রমিক হিসেবে প্রতিদিন রৌদ্রের প্রখর তাপ মাড়িয়ে টাকা রোজগারে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন একটু সচ্ছল ভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে। তাদের মতো আরও এক দম্পত্তির শ্রী নন্দ কুমার দাস ও শ্রীমতি হোসনা রানীও ৮ বছরের ছেলে ও ৭ বছরের মেয়ে কলিকে নিয়ে একই গ্রামের বিল্লাল মাদবরের বাড়ীতে ভাড়া বাসা নিয়ে আলু উত্তোলন ও পরিবহনের কাজ করছে। তাদের মতো রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, জামালপুরসহ উত্তরবঙ্গের হাজার হাজার পুরুষ ও নারী শ্রমিক মুন্সীগঞ্জের ৬টি উপজেলার বিস্তীর্ন ফসলের মাঠে কৃষকের সঙ্গে চুক্তিতে আলু উত্তোলন ও পরিবহন কাজে যুক্ত। 

বগুড়া থেকে আসা ভ্রাম্যমান শ্রমিক  মো. শাহজাহান জানান, তিনি গত এক মাস আগে বগুড়া থেকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে এসেছে। থাকবে আরও দুই মাস। আমিসহ ৯ জনে দলবদ্ধ হয়ে বস্তাভর্তি আলু জমি থেকে হিমাগারে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছি। ভোরের সূর্য উঠার পর থেকেই বাই সাইকেলে করে জমি থেকে হিমাগারে পৌছে দিচ্ছি। ভোর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবিরাম চলছে আমাদের কাজ। প্রতিবারই এই মৌসুমে মুন্সীগঞ্জ জেলাতে ভ্রাম্যমান শ্রমিকের কাজে আমরা দল বেধেঁ আসি, সঙ্গে নিয়ে আসা হয় বাই সাইকেলটি। ৫০ কেজি ওজনের ৪টি আলুর বস্তা সাইকেলে বিশেষ কায়দায় রেখে হিমাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। কুড়িগ্রাম থেকে আসা ভ্রাম্যমান শ্রমিক রহমান মিয়া জানান, এই জেলায় আলুর মৌসুমে মজুরী ভালো পাওয়া যায় এবং ভ্রাম্যমান শ্রমিকের চাহিদা বেশী থাকায় আমরা প্রতিবছরই আলু মৌসুম এলে মুন্সীগঞ্জে চলে আসি। আলুভর্তি বস্তার জন্য দুরত্ব ভেদে জমি থেকে হিমাগার পর্যন্ত মজুরী নিয়ে থাকি। দিন শেষে সব মিলিয়ে ১৮০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা জনপ্রতি রোজগার হয়। তিনি আরও জানান, জমির পাশেই অস্থায়ী একটি ছাপড়া ঘর বানিয়ে খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দলবদ্ধভাবে থাকার মাধ্যমে এখানে সকল সমস্যা তুচ্ছ মনে হয়। পরিবার পরিজন ছাড়া তিন মাস থাকতে কষ্ট হলেও ভ্রাম্যমান শ্রমিকের কাজ করে রোজগার করা টাকা হাতে পাওয়ার পর সেই কষ্ট হাসির ঝলকে মুছে যায়।

ফরিদপুর থেকে আসা ভ্রাম্যমান নারী শ্রমিক সুফিয়া বেগম বলেন, আলু উত্তোলনের কাজে এখানে আসা। মজুরী নির্ধারন হয় চুক্তির ভিত্তিতে অথবা দৈনন্দিন কাজ অনুযায়ী। প্রতিদিন আলু উত্তোলন করে মজুরী পাই ৩৫০ টাকা, সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমান শ্রমিকদের জন্য রান্নার কাজ করে বাড়তি কিছু টাকা পাই। তিনি আরও জানান, আমি আলু উত্তোলন কাজ করি এবং আমার স্বামী জমি থেকে উত্তোলন করা বস্তাভর্তি আলু হিমাগারে পৌছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিবারই এই অ লে ১০ থেকে ১২ জন মিলে দলবদ্ধ হয়ে চলে আসি।

লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া গ্রামের কৃষক আফজাল আলী জানান, এ বছর দুই বিঘা জমিতে রোপন করা আলু উত্তোলন এবং পরিবহনের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভ্রাম্যমান শ্রমিকরা আসে। স্থানীয় ভাবে শ্রমিকের সংখ্যা কম হওয়ায় বাইরের জেলা থেকে প্রতিবছরই শ্রমিকদের বিশাল একটি অংশ আলু উত্তোলন এবং জমি থেকে হিমাগারে পৌছানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটায়। তাদের ন্যায্য মজুরী দেওয়া হয়, তাই তার কর্মছ ভুমিকা পালন করায় কৃষকের কাছে ভ্রাম্যমান শ্রমিকের চাহিদাও বেশী।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত