ভূমি দস্যুদের নজর হতে আড়িয়ল বিলকে রক্ষা করুন

  ঢালী আমিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ৩ আগস্ট ২০২১, ০৯:৩৩ |  আপডেট  : ১৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৯

বিক্রমপুর পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত শহরের আদলে একটি পরিচ্ছন্ন আধুনিক শহর হবে, এমন একটি ভাবনা নিয়ে আমি দীর্ঘ দিন যাবত লিখছি । যতদূর মনে পরে ২০১৭ সালে আমেরিকার আটলান্টা থেকে ও একবার লিখেছিলাম । আড়িয়ল বিলকে নিয়ে জনগণের মধ্যে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই । আড়িয়ল বিলে এয়ারপোর্ট হবে, এই কথাটি ও যেন একটা ধোঁয়াশায় পরিণত হয়েছে ।

এদিকে ঢাকা শাহজালাল এয়ারপোর্টে থার্ড টারমিনালের কাজ চলছে । আমরা এটাও জানি,  শাহজালাল এয়ারপোর্ট আরও তিরিশ চল্লিশ বছর পূর্যন্ত বিমান উড্ডয়ন এবং অবতরনের ধারন ক্ষমতা রাখে । আড়িয়ল বিলের মত এত বড় উৎপাদনশীল, পরিবেশ বান্ধব, প্রাকৃতিক লীলাভুমিকে বিলুপ্ত করা, সরকারকে একবার নয় অন্ততঃ দশবার ভেবে দেখা দরকার । আমরা দেখেছি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য,  মানুষের জীবন রক্ষার জন্য,  মানুষের সুস্বাস্হের জন্য কত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে । আমাদের দেশের সকল সরকারগুলির এদিকে কেমন যেন একটা উদাসীনতা ভাব লক্ষ্য করা যায় । কখনো দেখা যায় একাধারে গাছ কেটে সয়লাব করে দিচ্ছে । আবার দেখা যায় গাছ লাগানোর কথা বলছে । কি লক্ষ্য নিয়ে গাছ কাটা হল এর উত্তর কারো কাছে নেই । আমাদের দেশের সরকারগুলির পরিকল্পনায় প্রচুর ভুলভ্রান্তি থাকে । তারা কাঁমারের কাজ কুমারকে দিয়ে করায়, স্বর্নকারের কাজ কামারকে দিয়ে করায় । অর্থাৎ যে যেই কাজে বিষেশজ্ঞ তাকে সেই কাজ দেওয়া হয়না । তারই কিছু নমুনা আমরা নিকট অতীতে দেখলাম । ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন সাহেব রাস্তার বড় বড় ময়লার ভাগাড়ের সামনে ছোট ছোট হাজার হাজার টিনের ডাষ্টবিন বসিয়ে ছিলেন । হাত মুছে হ্যান্ড টিস্যু ডাষ্টবিনে  ফালানোর জন্য । রাস্তা যেন পরিচ্ছন্ন থাকে । তার মানে বস্তি ঘরে লক্ষ টাকার ডাইনিং টেবিল মত ।

আমরা আড়িয়ল বিলকে হারাতে চাইনা । যেই বিলে চল্লিশ থেকে পন্চাশ হাজার টন ধান উৎপাদন হয় । মৎস্য সম্পদে ভরপুর । পাখির কলকাকলিতে মুখরিত, সুবাতাস প্রবাহিত, প্রচুর মৌসুমী ফসলের উর্বর ভূমি । অর্থ সম্পদের সূতিকাগার, শামুক, ঝিনুক, সাপ, ব্যাঙের আবাস স্হল । প্রাকৃতিক ভারসাম্যে ভরপুর। পানি সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রভূমি । জলাধার ও জলাভূমি বেষ্টিত বিশাল এলাকা । বিক্রমপুরকে তাপদাহ থেকে বাঁচাবে, বিক্রমপুরের মানুষের সুস্বাস্হ অনুকূলে থাকবে । সেখানে আমরা এমন সম্পদ হারাতে চাইনা । এমন ধান, পাট, তরুতরকারি,  শাকসব্জি,  মৎস্য সম্পদ উৎপাদনকারি বিলকে আমরা হারাতে চাইনা ।জীবন রক্ষাকারি প্রাকৃতিক ভারসাম্যে পরিপূর্ন, অর্থসম্পদের যোগানদাতা পরিবেশ বান্ধব একটি বিলকে বিলীন করে দিয়ে, এয়ারপোর্ট নামক অলাভজনক একটি মরুদ্দান আড়িয়ল বিলে হউক আমরা তা চাইনা । আমরা জেনে আসছি, শাহজালাল এয়ারপোর্ট তার জন্মলগ্ন হতে কখনো লাভের মুখ দেখেনি । আড়িয়ল বিলে এয়ারপোর্ট হলে, বিক্রমপুরে শব্দদূষণ, পরিবেশদূষন, কালোধূয়া, পাখপাখালি বিলুপ্ত, তাপ তাপদাহ , এমন কিছু নেই যে ক্ষতির সন্মুখিন হতে হবেনা । কিছুদিন পরই  বিক্রমপুরের উপর দিয়ে শুরু হবে রেললাইন, এবং হাজার হাজার মোটরগাড়ি চলাচলের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ । বিক্রমপুরের তাপদাহ থাকবে এমনিতেই আকাশচুম্বি । আমরা মনে করি বিক্রমপুরে এয়ারপোর্ট যদি হতেই হয় তবে যেন তা লতুব্দির চরকে বেছে নেয়া হয় । তা একদিকে যেমন আড়িয়ল বিলের তুলনায় একটি অনুৎপাদনশীল এবং অভিযোগবিহীন জায়গা, অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষার জন্য ও লতুব্দির চর ততটা অনুকুলে নয় ।

ইতিমধ্যে যেখানে বিক্রমপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে মুন্সীগন্জ তথা বিক্রমপুরের জ্ঞানীগুণি, মন্ত্রী, এমপি অভিজ্ঞ মানুষ  সচেতন মানুষ  সোচ্চার হচ্ছে, সেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীবৃন্দের এমন একটি পরিবেশ বান্ধব প্রাকৃতিক সম্পদকে হারাতে আমরা অপ্রস্তুত । যদি মানণীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেন এবং সত্যিকার অর্থেই রাড়িখালে বিশ্ববিদ্যালয় হয় । তবে এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু রাড়িখাল নয় বিক্রমপুর নয় , সারা বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে , শুধু সুন্দর ও স্বাস্হ্যকর পরিবেশের জন্য ছাত্র ছাত্রীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেখা করতে চাইবে । আড়িয়ল বিলে এয়ারপোর্ট হলে গরীবের কি লাভ হবে ! এখানে ঘনবসতিপূর্ন কিছু বাড়িঘর, কিছু সুউচ্চ বিল্ডিং বা জায়গা জমির কিছু বাড়তি দাম ছাড়া সাধারণ জনগণের কোন উপকারে আসবে না । আড়িয়ল বিল নিয়ে  আরও অনেক লিখা যায় ।

উপসংহারে বলবো মুন্সীগন্জ জেলা তথা বিক্রমপুরকে যদি সত্যিকার অর্থে সুন্দর করতেই হয় তবে বিক্রমপুরকে অনেক কম বাজেটে আরও সুন্দর সুন্দর পরিকল্পনা প্রকল্প হাতে নিয়ে  আধুনিক উন্নত শহরে পরিণত করা সম্ভব ।  এখন সরকারের যে কাজটি করা অতীব জরুরী । আড়িয়ল বিল দখল হয়ে যাচ্ছে । বিল দখল করে প্রতিদিন নতুন নতুন বাড়িঘর তৈরী হচ্ছে । বিলের মাটি ঠিকাদারেরা চুরি করে বিক্রী করছে । এখনই বিল সংরক্ষণের জন্য সীমানা বেষ্টনি দিয়ে বিলকে সুরক্ষা করা অতীব প্রয়োজন বলে মনে করি । তা না হলে বিল আর থাকবেনা । কলকাতার কৌতুক অভিনেতা  আমি " ঢাকার ভানুর " কৌতুক । চোর ঘরে ঢুকে আলমারির সব কিছু নিয়ে যাওয়ার পরেও যেমন করে ভানু বলেছিলেন আরে মোশয়, আমার ঘরের সব চুরি হয়ে যাচ্ছে, আমি চেয়ে থাকবোনাতো চেয়ে থাকবেন কি আপনি ? আড়িয়ল বিলের এয়ারপোর্ট ভাবনা যেন একদিন ভানুর কৌতুকের চেয়ে থাকা ভাবনার প্রতিচ্ছবি হয়ে না উঠে ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত