ব্রাজিলে অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর ২৭ বছরের কারাদণ্ড

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৭ | আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩১

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে সামরিক অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ২৭ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড দিয়েছেন। নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতায় টিকে থাকার ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়ে বৃহস্পতিবার পাঁচ বিচারকের একটি বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) এই রায় নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।পাঁচ বিচারকের মধ্যে চারজন বলসোনারোকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং একজন খালাসের পক্ষে ভোট দেন। রায় ঘোষণার পর বলসোনারোর আইনজীবীরা এটিকে 'অতিরিক্ত কঠোর' বলে উল্লেখ করে আপিলের ঘোষণা দেন।
সুপ্রিম কোর্ট একইসঙ্গে তাকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত সব ধরনের সরকারি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ৭০ বছর বয়সী বলসোনারো বর্তমানে গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন, কারণ পালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় আদালত তাকে আগেই এভাবে আটক করেছিলেন। তবে তিনি রায়ের শেষ ধাপের শুনানিতে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন না।
বলসোনারো বরাবরই দাবি করে আসছেন যে, এই বিচার তাকে ২০২৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য সাজানো হয়েছে। তিনি এটিকে 'ডাইনি খোঁজা' বলেও অভিহিত করেছেন। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একমত পোষণ করেছেন এবং এই ঘটনাকে নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, 'আমার সঙ্গেও এমন করার চেষ্টা হয়েছিল, তবে তারা সফল হয়নি।'
বর্তমান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট অন্যায়ভাবে বলসোনারোকে কারাদণ্ড দিয়েছে এবং এ ধরনের 'উইচ হান্ট'-এর জবাব দেওয়া হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, 'আজকের মতো হুমকি ব্রাজিলের গণতন্ত্রকে ভয় দেখাতে পারবে না। রেকর্ডে থাকা প্রমাণ উপেক্ষা করে ব্রাজিলের কর্তৃপক্ষকে আক্রমণ করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।' আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আপিলে সাফল্য পাওয়া কঠিন হবে, কারণ সাধারণত অন্তত দুজন বিচারক খালাসের পক্ষে ভোট না দিলে রায় পুনর্বিবেচনা করা হয় না।
বলসোনারোর বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, যার সবগুলোই নির্বাচনে হার মানার পর ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার প্রচেষ্টাকে ঘিরে। প্রসিকিউটররা জানান, তিনি অনেক আগে থেকেই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন এবং সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী লুলা দা সিলভা, তার সহপ্রার্থী এবং একজন সুপ্রিম কোর্ট বিচারককে হত্যার পরিকল্পনার কথাও তিনি জানতেন।
আদালত আরও সাতজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে, যাদের মধ্যে সাবেক দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সাবেক গোয়েন্দা প্রধান এবং নিরাপত্তা মন্ত্রীসহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা রয়েছেন। যদিও সেনাবাহিনীর যথেষ্ট সমর্থন না পাওয়ায় অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, তবে ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি বলসোনারোর সমর্থকরা সরকারি ভবনে হামলা চালায়। এ সময় দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয় এবং দেড় হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত