পিতার অভিযোগ
নন্দীগ্রামে গৃহবধূ মিষ্টি আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে

প্রকাশ: ৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৪৮ | আপডেট : ৭ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২১

বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের ওমরপুর গ্রামের গৃহবধূ খাদিজা খাতুন মিষ্টি আত্মহত্যা করেনি, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পিতা। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন মৃত খাদিজা খাতুন মিষ্টির পিতা মুকুল হোসেন।
এ বিষয়ে মুকুল হোসেন বলেন, আমি মালয়েশিয়ায় থাকায় আমার বড় মেয়ে খাদিজা খাতুন মিষ্টির শ্বশুর ওমরপুর আশরাফুল উলুম কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি আব্দুল হান্নান আমার স্ত্রীর সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ পরকীয়ায় জড়িত ছিলো। আমি দেশে আসার পর হঠাৎ একদিন আমার স্ত্রী বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজির করে না পেয়ে থানায় জিডি করলে ফোন কল ট্র্যাকিং করে মুফতি আব্দুল হান্নানকে (বিয়াই) ধরলে তাকে উদ্ধার করে দেয়। এর কিছুদিন পরে আমার স্ত্রী আবারো বাড়ি থেকে চলে গিয়ে আমাকে তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে একদিন আমার মেয়ে ফোনে কান্নাকাটি করে জানান যে, ওই মাদ্রাসার হুজুর মোশাররফ হোসেন মার সাথে আমার শ্বশুরকে বিয়ে পড়িয়ে তাদের সম্পর্ক জায়েজ করে দিয়েছে। এরপর থেকে আমার মেয়ের সংসারে অশান্তি শুরু হয় এবং তাকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়।
এরপর আমার জামাই (ফোরকান আলী) বিদেশ থেকে আসলে তাদের সংসারে অশান্তি আরো বৃদ্ধি হয়। কারণ মা মেয়ে একই পরিবারে সংসার করাটা কঠিন এবং আমার মেয়ে এগুলো অন্যায় মেনে নিতে না পারায় তারা সকলে মিলে পরিকল্পিতভাবে গত ২৫ সেপ্টেম্বর আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে বলে আমার বিশ্বাস। এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে তারা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার কথা ছড়িয়ে দেয় কিন্তু তারা আমাকে কিছুই জানায়নি। ওই গ্রাম থেকে অপরিচিত একজন ফোন করে আমাকে খবর দিলে দ্রুত ওমরপুর গ্রামে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখি লাশ মাটিতে শোয়ানো। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে এমনটা মনে হয়নি। লাশ ঝুলে থাকতে এলাকার কেউ দেখে নাই। তারা চিকন সুতলি দেখিয়ে বলে এই সুতলি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আসলে এই সুতলি দিয়ে আত্মহত্যা করা অসম্ভব। কারণ আমার মেয়ের ওজন ৭৩ কেজি ছিলো। এরপর থানা পুলিশ এসে লাশ থানায় নিয়ে যায়। আমি বাদী হলে থানা পুলিশ আইনি প্রক্রিয়ায় লাশ পোস্টমর্টেম শেষে আমাদেরকে হস্তান্তর করে। এরপর আমরা তার দাফন কাফন সম্পন্ন করি। সুতরাং আমার মেয়ের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর সাথে জড়িত সকলের বিচারের দাবি করছি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু আগেও ওই মাদ্রাসায় পরকীয়া ঘটনার বিচার বসেছিলো কিন্তু ওই এলাকার কিছু ব্যক্তির কারণে সঠিক বিচার হয়নি। মোশাররফ হোসেন হুজুর আমাকে মাদ্রাসার রুমে শাসাশাসিও করেছে কিন্তু আমি মেয়ের সংসার নষ্ট হওয়ার ভয়ে কিছু বলিনি। এখন যেনো কেউ প্রভাব খাটিয়ে এই পোস্টমর্টেমের আসল রিপোর্ট নষ্ট করতে না পারে এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাই। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসলে এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলের সঠিক বিচার পাবো বলে আমি আশাবাদী। মুকুল হোসেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন।
ফোরকান আলী জানান, আমার স্ত্রী ঘরের তীরের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে বিষয়টি নন্দীগ্রাম থানা পুলিশকে অবহিত করেছি। এরপর থানা পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এটি আত্মহত্যার ঘটনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফইম উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত চলছে। হত্যা না আত্মহত্যা তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই নিশ্চিত জানা যাবে।
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত