টিআইবি

দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন লড়ছেন ১৭ জন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১৪:১৭ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১১

প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মতো দ্বিতীয় ধাপেও আলোচনায় আছেন মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের মনোনয়ন। এ ধাপের লড়াইয়ে চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন রয়েছেন ১৭ জন। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট অক্ষুণ্ণ রয়েছে। রোববার (১৯ মে) ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। 

সংস্থাটি জানায়, দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ১৬০ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০.৫১ শতাংশই ব্যবসায়ী, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৮.৭৩ শতাংশ, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৯.২৬ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫১.৬৩ শতাংশই নিজেকে গৃহিণী বা গৃহস্থালি কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।

যেখানে প্রথম ধাপে পেশা হিসাবে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০ শতাংশই ছিলেন ব্যবসায়ী, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৭ শতাংশ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৪ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।

দ্বিতীয় দাপে ১৬০টি উপজেলার মধ্যে ১৫৭টির প্রার্থীর হলফনামা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে, বাকি তিনটি করেনি। প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া আট ধরনের তথ্যের বহুমাত্রিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. মো ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অধিকাংশ প্রার্থী ক্ষমতাসীন দলের। অনেকেই ক্ষমতাসীনদের আত্মীয় স্বজন। প্রার্থীদের মধ্যে পুরুষের অধিক্য রয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য একই রকম। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী। বিশেষ করে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের হলফনামায় যেসব তথ্য রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যতটুকু আছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। রাজনীতির সঙ্গে সম্পদ বৃদ্ধির একটি যোগসূত্র দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতা ও আয় বৃদ্ধির সঙ্গে রাজনীতির সরাসরি সম্পৃক্ততা দেখা যাচ্ছে। যে কারণে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারছে না। রাজনৈতিক দল হিসা গণতান্ত্রিক ও শুদ্ধাচার চর্চা দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক আদর্শ এখানে বড় বিষয় নয়।

সার্বিক পর্যালোচনায় প্রতিষ্ঠানটির বলছে, ১০ বছরে একজন চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫৩৩৬ শতাংশ, ৫ বছরে এই বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১০৯০০ শতাংশ। অন্যদিকে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ১১৬৬৬ শতাংশ, স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৮৯৬৮ শতাংশ। ৫ বছর হিসাবে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা পেছনে ফেলেছেন সংসদ সদস্যদের। একজন সংসদ সদস্যের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৩০৬৫ শতাংশ, যেখানে একজন চেয়ারম্যানের বেড়েছে সাড়ে ১১০০০ শতাংশের বেশি।

টিআইবি মনে করে, সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪২.৪৯ শতাংশ আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন ১০ শতাংশ প্রার্থী। চেয়ারম্যান ও অন্যান্য প্রার্থীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য আয় বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২৩.৬২ শতাংশ এর আয় সাড়ে ষোল লাখ টাকার উপরে। অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে এটা মাত্র ৩.২৫ শতাংশ। আবার, চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২১ শতাংশের আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, অন্যান্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ চেয়ারম্যান পদে অপেক্ষাকৃত ধনীরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

৬.৪৫ শতাংশ প্রার্থীর কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে। প্রায় ৩ গুণ হয়েছে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা। প্রায় ২৫ শতাংশ প্রার্থীর ঋণ কিংবা দায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩১০.৯৪ কোটি টাকা ঋণ একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর। প্রার্থীদের ১৩.১৩ শতাংশ বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচিত হননি এমন প্রার্থীদের গত ৫ বছরের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, অনির্বাচিতদের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে নির্বাচিতদের। অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে দ্রুত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে শুধু নির্বাচিতদের নিজেদেরই নয়, তাদের স্ত্রী/স্বামী ও নির্ভরশীলদের আয় ও সম্পদ বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। আবার যেসব জনপ্রতিনিধি দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন তাদের আয় ও সম্পদ বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতাও স্পষ্ট।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত