দেবীগঞ্জে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ  

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:০০ |  আপডেট  : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:১৩

পঞ্চগড়ে এমপিওভুক্ত এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছে। নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেও কাঙ্ক্ষিত সময়ে প্রদান করা হয়নি কোন তথ্য। তথ্য গোপন করে নিজের ও সহকারী শিক্ষকদের উদরপূর্তি করতেই এই টালবাহানা বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের নাম মনরঞ্জন রায়। তিনি জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সুকাতু প্রধান উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেড় বছরের বেশি সময় থেকে।প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মনরঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপসহ অব্যবস্থাপনার নানান অভিযোগ উঠতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে গত ২ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকের নিকট বেশ কিছু তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়। এর মধ্যে বিদ্যালয় মার্কেটে দোকানের সংখ্যা, দোকান থেকে মাসিক আয়, বিদ্যালয়ের মালিকানায় থাকা চাষ যোগ্য ও পতিত জমির পরিমাণ, বিদ্যালয়ের ৯ বিঘা আয়তনের পুকুর ও ৩ বিঘা আয়তনে মাঠ থেকে আয়, গত তিন শিক্ষা বছরে শ্রেণীভিত্তিক শিক্ষার্থী ভর্তি সংখ্যা ও আদায়কৃত ফি, ব্যয়ের খাত ও পরিমাণসহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়।

তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী ২০ কর্ম দিবসের মধ্যে তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রধান শিক্ষক নানা অযুহাতে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। গত আড়াই মাসে বিভিন্ন সময় তিনি তথ্য প্রস্তুত করছেন বলে প্রতিবেদককে অপেক্ষার অনুরোধ জানান। কিন্তু আড়াই মাস পরও তিনি কোন তথ্য দেননি।

আবেদনটি জমা দেওয়ার দিন প্রধান শিক্ষক মনরঞ্জন রায় বলেন, ‘এই সব কারণে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছে করে না। নানা হিসাব দিতে হয়।’নগেন রায়, ছাদেক, সিদ্দিক সরকারসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের তথ্য সব সময় হালনাগাদ থাকার কথা। এই বিদ্যালয়ে যখন যে দায়িত্বে আসেন তখন সে বিদ্যালয়ের টাকায় আয়েস করেন। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যুক্ত হন সহকারী শিক্ষকরা।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের আয়ের টাকা শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় হবে। কিন্তু এখানে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় না করে বরং কয়েক মাস পরপর প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা সরকার প্রদত্ত বেতনের বাইরে বিদ্যালয়ের আয়ের টাকা থেকে বোনাস নেন। এই রেওয়াজ আগে থেকেই চলে আসছে। এর আগে ধর্ম নারায়ণ যখন প্রধান শিক্ষক ছিলেন তখনও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে নিয়ে এভাবে লুটপাট হতো। এখনও লুটপাট হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের টাকায় শিক্ষকদের উপরি আয় হলেও বিদ্যালয়টির অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের কপালে জোটে না ন্যুনতম সহযোগিতা।’

প্রধান শিক্ষককে এইসব অনিয়ম বন্ধে যখনই চাপ দেওয়া হয় তখনই নিজেকে সনাতন ধর্মের হওয়ায় চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অভিভাবকসহ বিদ্যালয়টির বেশ কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনরঞ্জন রায় বলেন, ‘আপনি মনে হয় সভাপতিকে কল করেছেন। উনি আমাকে কল করেছিলেন। কাল সভাপতির সঙ্গে দেখা করব।’ এর কিছুক্ষণ পর তিনি আবারও ফোন করে আবেদনের কপিটি চান।

এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের আহবায়ক কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন মো. তোবারক হ্যাপি বলেন, ‘আমি প্রধান শিক্ষককে এই বিষয়ে বলেছি। বিষয়টি কি খুব জরুরী? সামনে মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।'

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত