দেবীগঞ্জে অবৈধ ভাবে সার মজুদ করায় ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড  

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৩ |  আপডেট  : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:১৪

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় একটি বাজারে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুদ করা বিভিন্ন প্রকারের ২ হাজার ১৫১ বস্তা সার জব্দ করেছে। এসময় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের লক্ষীরহাট বাজারে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।

সরেজমিনে অভিযানে গিয়ে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লক্ষীরহাট বাজারে অবস্থিত ‘মেসার্স শিখা মনি ট্রেডার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে যৌথবাহিনী। শুরুতে সার মজুদের বিষয়টি অস্বীকার করলেও সেনা সদস্যরা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে দুটি পৃথক গোডাউনে বিপুল পরিমাণ সার মজুদের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে ২৬৮ বস্তা ইউরিয়া, ১ হাজার ৩৬৩ বস্তা এমওপি, ১০০ বস্তা টিএসপি (ফসফেট) এবং ৪২০ বস্তা ডিএপি সার উদ্ধার করা হয়। লক্ষীরহাট বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার তিনটি গোডাউনে এসব সার মজুদ করা হয়। জব্দ সারের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অভিযান শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার   মাহমুদুল হাসান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির মালিক সহিদুল ইসলাম বাবুলকে অবৈধভাবে সার মজুদ করায় সার ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৬ এর ধারা ১২ অনুযায়ী ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। সেই সাথে জব্দকৃত সার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে কৃষকদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে সমুদয় টাকা সহিদুল ইসলামকে প্রদান করার আদেশ দেন। এছাড়া অভিযুক্তের নিজস্ব জমিতে ব্যবহারের জন্য জব্দকৃত সার থেকে ২৪০ বস্তা সার তাকে প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে লাইসেন্স ছাড়া একজন ব্যক্তির কাছে এত বিপুল পরিমাণ সার মজুদ থাকার ঘটনায় এলাকাজুড়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ মতে, বিপুল পরিমাণ সার জব্দের পরও দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে শিথিলতা দেখিয়েছেন। সারের অবৈধ মজুদ ঠেকাতে সরকার সার (ব্যবস্থাপনা) (সংশোধন) আইন ২০১৮-এ শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যেখানে ২০০৬ সালের সার ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা ৮ সংশোধন করে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ত্রিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের পরিবর্তে দুই বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের শাস্তি রাখা হয়। এই ধারায় নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষের নিকট হতে নিবন্ধন গ্রহণ ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তি সার উৎপাদন, আমদানি, সংরক্ষণ, বিতরণ, বিপণন, পরিবহন করতে পারবেন না বলা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুযোগ থাকা স্বত্বেও এই ধারা অনুসরণ না করে অপেক্ষাকৃত যে ধারায় লঘু শাস্তি প্রদান করা যায় তা অনুসরণ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক কৃষক বলেন, যিনি ২০–২২ লাখ টাকার সার গুদামজাত করতে পারেন তার কাছে ৩০ হাজার টাকা দণ্ড সাধারণ ব্যাপার। বিচারের নামে প্রহসন হলে অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। অভিযুক্তের পরিবার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ইউএনও নমনীয়তা দেখিয়েছেন। 

স্থানীয় কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনদিন সার নেওয়ার জন্য লক্ষীরহাটে গিয়েছিলাম। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সার পাইনি। কিছুদিন আগে সার সংকটে কৃষকদের হিমশিম খেতে হয়েছে। অথচ আজ এত সার উদ্ধার হওয়ার পরও মাত্র ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও)  মাহমুদুল হাসান বলেন, বিচারক কি সাজার দিবেন সেটা প্রশ্ন করা অনুচিত। এটা আদালত অবমাননার শামিল।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত