জমি দখলমুক্ত করার দাবিতে বাগেরহাটে মানববন্ধন
প্রকাশ: ২ জুন ২০২২, ১০:০৮ | আপডেট : ৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৪২
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে হতদরিদ্রদের জমি দখল করে জোরপূর্বক মৎস্য ঘের করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। মাছ চাষের সুবিধার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেরিবাঁধের নিচ থেকে পাইপ দিয়ে লবন পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে ধানি জমিতে। যার ফলে ধান চাষও করতে পারছেন না জমির মালিকরা। তেলিগাতী ইউনিয়নের মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকার দুইশ বিঘা জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ঘের করছেন যুবলীগ নেতা বদিউজ্জামান মজুমদার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাহার হাওলাদার ও তার লোকজন। এমনকি ঘেরের স্বার্থে সরকারি রাস্তা কাটারও অভিযোগ রয়েছে দখলকারীদের বিরুদ্ধে। প্রভাবশালীদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে জমির মালিক ও স্থানীয় কৃষকরা। নিজেদের জমি দখল মুক্ত করার দাবিতে বুধবার (০১ জুন) দুপুরে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধনে জমি দখল মুক্ত করাসহ ভূমিদস্যুদের বিচার দাবি করেন তারা।
তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয় কুমার মন্ডল বলেন, মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকায় প্রায় দুইশ বিঘা জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে মাছের ঘের করছেন পার্শ্ববর্তী প করণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজ্জাক মজুমদারের ভাইয়ের ছেলে ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান মজুমদার ও তেলিগাতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহার হাওলাদার। এদের সাথে স্থানীয় খলিল হাওলাদার, জাহাঙ্গীর হাওলাদার, বেলায়েত হাওলাদারসহ বেশ কয়েকজন রয়েছে। এই দুইশ বিঘার জমির মধ্যে এই দখলদারদের কোন জমি নেই। এর মধ্যে স্থানীয় অর্ধশত মানুষের ৮০ থেকে ১০০ বিঘা এবং অন্য এলাকার কয়েকজনের একশ বিঘা জমি রয়েছে। বদিউজ্জামান ও বাহাররা জমির মালিকদের হাড়ির টাকাও দেয় না। আবার হাড়ির টাকা চাইতে গেলে অনেক খারাপ ব্যবহার করে নিরিহ জমির মালিকদের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। এমনকি টাকা চাইলে কাউকে কাউকে মেরে ফেলারও হুমকী দিয়েছেন তারা। মৎস্য ঘেরে বাগদা চাষের জন্য বেঁরিবাধ কেটে লবন পানি প্রবেশ করিয়ে ধানেরও ক্ষতি করছেন তারা। এই অবস্থায় দখলদারদের কাছ থেকে কৃষকদের মুক্ত না করতে পারলে জমির মালিকরা না খেয়ে মরবে বলে দাবি করেন স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি।
ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক আব্দুল বারেক হাওলাদার বলেন, মিস্ত্রিডাঙ্গা মাঠে আমার সাড়ে ৫ বিঘা জমি রয়েছে। কয়েক বছর ধরে বদিউজ্জামান ও বাহাররা আমারসহ এলাকার অনেকের জমি দখল করে ঘের করে। তারা হাড়ির টাকা দেয় না, আবার লবন পানি ওঠানোর কারণে আমরা ধানও চাষ করতে পারি না। যার ফলে আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। আমরা চাই যে যার জমিতে ঘের করবে, তারা এই কেন জোর করে মাছ চাষ করবে।
ঘেরের মধ্যে তিন বিঘা জমি থাকা ফনিভূসন হাজরা বলেন, একটা মঘের মুল্লুক চলছে। নিজের জমি থাকতে চাল কিনে খাই। তারা যেভাবে লবন পানি উঠায় আমরা ধান চাষই করতে পারিনা।
শুধু আব্দুল বারেক হাওলাদার ও ফনিভূসন নয়, এমন বক্তব্য জমির মালিক আব্দুল মান্নান আকন, অমল হাওলাদার, জামেনা বেগম, আলীম খানসহ অনেকের।
তেলিগাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খান জালাল আহমেদ লাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি এলাকার নিরহ মানুষদের জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কারণে কৃষকরা ধানও ফলাতে পারেন না। কৃষকরা বিভিন্ন দপ্তরে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু কোন ফল হয়নি। স্থানীয় কৃষকদের জমি দখল মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।
তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তার বলেন, অন্য ইউনিয়ন থেকে এসে গায়ের জোরে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকার মানুষের জমি দখল করে খাচ্ছে। এলাকার মানুষ আমার কাছেও অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি সরেজমিন পরিদর্শণ করেছি। দখলদারদের কারণে স্থানীয়রা খুবই বিপদে রয়েছে। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে পারেন না এদের। এরা এত বেপরোয়া যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেরিবাঁধের নিচে পাইপ দিলে মাঠে লবন পানি ঢোকায়। এলাকার মানুষকে বাঁচাতে এখনই এই জমি দখল মুক্ত করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।
প করণ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান মজুমদার বলেন, কৃষক ও স্থানীয়রা যে অভিযোগ করেছে তার কোন ভিত্তি নেই। ওই ঘেরে আমার বাবা ও চাচাদের ১২ বিঘা জমি রয়েছে। আমরা কারও জমি জোরপূর্বক দখল করিনি। ঘেরে অন্য যাদের জমি রয়েছে, তাদেরকে নিয়মিত হাড়ির টাকা দিয়েই ঘের করা হয়। একটি প্রভাবশালী মহল এই ঘের করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন।
তেলিগাতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহার হাওলাদার বলেন, এই ঘেরে প্রায় ৬০ জন লোকের জমি রয়েছে। এদের মধ্যে ৫৪ লোক আমাদের সাথে রয়েছে। আমরা কারও সাথে জোর জবরদস্তি করিনি। সবাই স্ব-ইচ্ছায় আমাদের কাছে জমি লিজ দিয়েছেন বলে দাবি করেন বাহার।
প করণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রাজ্জাক মজুমদার বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। ওখানে আমাদের নিজেদের জমি রয়েছে। আমার ভাগ্নে ওই জমি দেখভাল করে। এছাড়া অন্য মালিকদের জমির জন্য হাড়ির টাকা দেওয়া হয়।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘের সংক্রান্ত দুটি অভিযোগ পেয়েছি। রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শণ এবং স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত