কামরুদ্দীন আহমদ বিক্রমপুরের অন্যতম কৃতি সন্তান  

  মো. জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৫০ |  আপডেট  : ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩০

বিক্রমপুরের শ্রীনগর উপজলার ষোলঘরের সন্তান কামরুদ্দীন আহমদ দেশের অন্যতম রাজনীতিক, কূটনীতিক ও মুক্তবুদ্ধির লেখক । তাঁর লিখিত গ্রস্থ A Social History of Bengal(1957), A Socio-political History of Bengal, The Birth of Bangladesh,পূর্ব বাংলার সমাজ ও রাজনীতী (১৯৭৬), বাংলার মধ্যবিত্তের আত্মবিকাশ (দুই খন্ড), স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর (১৯৮২), বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মকাহিনী । তাঁকে ও তাঁর সময়কে বুঝতে হলে এ বই গুলি পড়া আবশ্যক। তিনি যে কত বড়  মাপের মানুষ ছিলেন, তার বইগুলি পাঠ করে আমি উপলব্ধি করেছি।

তিনি ষোলঘরের মিয়াপাড়ার পৈত্রিক বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন ১৯১২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। ১৯২৯ সালে তিনি বরিশাল জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক এবং ১৯৩১ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আই এ পাস করে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে বিএ (অনার্স)-এ ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৩৫ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকার আরমানিটোলা হাই স্কুলে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৪ সালে আইনশাস্ত্রে  ডিগ্রি পাস করে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন মুসলিম লীগ দিয়ে শুরু হলেও ১৯৪৭ সালের পরে মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল কার্যকলাপের দরুন দল ত্যাগ করেন। ১৯৪৮ সালের সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ছিলেন কামরুদ্দীন আহমদ। পরবর্তীকালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগ বিরোধী রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলে তিনি অফিস সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি রাজনীতির অঙ্গন ত্যাগ করে কূটনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৫৭-৫৮ সালে কলকাতায় পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার ও ১৯৫৮-৬১ সালে বার্মায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সাল থেকে আইন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি শ্রমিক আন্দোলন ও ট্রেড ইউনিয়ন নিয়েও কাজ করেছেন। পাকিস্তান ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে  আইএলওসহ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

তিনি ছিলেন ঢাকার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে মুক্তবুদ্ধি চর্চার অগ্রদূত। জ্ঞানতাপস জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের সাথে ছিল তাঁর দারুন সখ্যতা। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন তাঁর ভাবশীষ্য।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাঁকে অফিস থেকে ধরে নিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক করে রাখে। ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তিনি মুক্ত হন। তাঁর কনিষ্ঠপুত্র নিজামউদ্দীন আজাদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম নেতা। ১৯৭১ সালে কমিউনিস্ট পার্টির বিশেষ গেরিলা গ্রুপের অন্যতম সদস্য।আজাদ সশস্ত্র গেরিলা দল নিয়ে ত্রিপুরা বর্ডার দিয়ে দেশে প্রবেশকালে পাকিস্তানি সৈন্যদের এ্যাম্বুশে পড়ে সম্মুখযুদ্ধে কুমিল্লার বেতিয়ারায় শহীদ হন।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য কামরুদ্দীন আহমদকে প্রস্তাব দেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালে কারাগারে আটকাবস্থায় নির্যাতন ও আদরের সন্তান বিয়োগের মানসিক যাতনায় প্রধান বিচারপতির গুরুদায়িত্ব পালনে তাঁর শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম নন বলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এমন লোভনীয় প্রস্তাব গ্রহণ না করার মতো লোক ক’জন আছে?
স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা অব্যাহত রাখেন। ১৯৭৬-৭৮ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ছিলেন।
১৯৮২ সালের ৬ ফেব্রুারি তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।

 লেখকঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ব্যাংকার বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি.-এর পরিচালক।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত