স্বাধীনতা ও বিজয়ের জীবন্ত স্মারক ৭১টি ফলন্ত তালগাছ হত্যা করছে পল্লী বিদ্যুৎ
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩, ১৩:২৩ | আপডেট : ৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৫৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের জীবন্ত স্মারক শতাধিক ফলন্ত তালগাছ হত্যা করছে পল্লী বিদ্যুৎ। বিজয়ের প্রথম বছরেই ১৯৭১ সালে একদল বৃক্ষপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের নিদর্শন হিসাবে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর রেলষ্টেশনের উত্তর পাশে শতাধিক তালগাছ রোপন করে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নশরতপুর কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ আ ত ম শামছুল হক, মুক্তিযোদ্ধা মুনছুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, জাহাঙ্গীর আলম, নজরুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুনীল কুমার সরকার নের্তৃত্বে স্বাধীনতার জীবন্ত স্মারক রচনা করেন। নিবেদিত প্রাণ এসব মুক্তিযোদ্ধা শতাধিক তালগাছ রোপন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন আ ত ম শামছুল হক ধারণা করেছিলেন শতাধিক তালগাছ রোপন করলে কমপক্ষে ৭১টি তালগাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আর সে লক্ষ্যেই তালগাছ রোপন করেছিল। বগুড়ার পশ্চিমাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আ ত ম শামছুল হকের হাত ধরে প্রায় শতাধিক ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় লাগানো তালগাছ গুলো আজ ৫২ বছর পরেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বিজয়ের চিহ্ন ও আলো ছড়াচ্ছিল। ফল দান করছিল। এই তালগাছ গুলোর দিকে তাকালেই মুক্তিযোদ্ধা সহ এলাকার মানুষের চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। নশরতপুর রেলস্টেশনের যাত্রী সাধারণ, হাট বাজারের ক্রেতা সাধারণ অপরূপ দৃষ্টিতে অবলোকন করতো এই মায়াবি তালগাছগুলো। হঠাৎ করে বিগত কয়েক বছর পূর্বে বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার মুরইল বাজার সংলগ্ন এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের একটি সাব-স্টেশন নির্মাণ হলে নশরতপুর রেলস্টেশনের দুই পাশে যথেষ্ট জায়গা থাকার পরও এই গাছ গুলোর উপর দিয়ে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ সরবরাহ লাইন টানা হয়। তারপর থেকে শুরু হয় ক্রমান্বয়ে এসব ফলন্ত তালগাছ কেটে ফেলা। বহুবার মুক্তিযোদ্ধারা বাধা দিয়েছে কিন্তু কেউ কোন কর্ণপাত করেনি। ধীরে ধীরে হত্যা করা হচ্ছে বিজয়ের ও স্বাধীনতার জীবন্ত স্মারক।
বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে সারা দেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তালগাছ রোপন করা হচ্ছে। অথচ দেশের বীর সৈনিক জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের রোপিত সুস্থ সবল তাজা ফলন্ত ৫২ বছর বয়সী স্মৃতির তালগাছগুলো নির্বিচারে ধ্বংশ করছে পল্লী বিদ্যুৎ। বৃক্ষ নিধন আইনকে উপেক্ষা করে পল্লী বিদ্যুতের প্ল্যানিং ইঞ্জিনিয়াররা না দেখে না শুনে না জেনে এই জীবন্ত স্মারক ফলন্ত গাছগুলোর উপর দিয়ে হাইভোল্টেজ লাইন টেনে নির্বিচারে তালগাছ গুলো কেটে ফেলছে। এই গাছগুলো রোপনের পর মায়ের মমতা দিয়ে বেড়ে তুলেছিল মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহাদৎ হোসেন। জীবন সায়ান্নে এসে শাহাদৎ হোসেন দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলে। কারো হাত ধরে লাঠি ঠুকে ঠুকে এসে বলতেন বাবা দেখতো আমার তালগাছগুলো দেখতে কেমন লাগছে। সবাই তখন শাহাদৎ হোসেনের প্রশংসা করতো। শাহাদৎ হোসেন অন্তরের চোখ দিয়ে এই তালগাছগুলো দেখতেন। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তো। যারা তালগাছ ও শাহাদতের প্রশংসা করতো তাদের বুকে জড়িয়ে ধরতো। আজ মরহুম শাহাদৎ হোসেন বেঁচে নেই কিন্তু বেঁচে ছিল তালগাছ গুলো। স্বাধীনতা ও বিজয়ের স্মারক তালগাছ গুলো পল্লী বিদ্যুৎ লাইন শ্রমিকরা মাথা কেটে ফেলায় ধীরে ধীরে গাছ গুলো মরে যাচ্ছে। জীবন্ত স্মারক তালগাছের মাথার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিদ্যুতের ৫/৬টি খুঁটি সরিয়ে দিলে এখনো ৩০টি তালগাছ বাঁচানো সম্ভব।
বীরমুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক ও মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক সুনিল কুমার সরকার জানান, ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময় স্বাধীনতা ও বিজয়ের জীবন্ত স্মারক হিসেবে তালগাছ গুলো রোপন করা হয়েছিল। পল্লী বিদ্যুৎ এর লোকজন নির্বিচারে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি বিজরিত তালগাছ গুলো কেটে ফেলছে। তাদের রোপনকৃত তালগাছ গুলো রক্ষা করতে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আকুল আবেদন জানান জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধারা। এব্যাপারে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জি এম মনোয়ারুল ইসলাম ফিরোজীর সাথে এ প্রতিনিধির মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তালগাছের মাথার সাথে বিদ্যুৎ এর লাইন সংর্স্পশ হওয়ায় গাছ গুলোর মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ আইন মতেই এটা করা হয়েছে। তবে চেষ্টা করা হবে কিছু তালগাছ রক্ষা করার।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত