সরকারে ধর্মভিত্তিক দলের লোকেরা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা: রিজভী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:২৫ |  আপডেট  : ৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:৩৫

 নতুন ইস্যু তৈরি করে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।তিনি বলেন, ভ্রান্ত কথা বলে মিথ্যা পরিসংখ্যান দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। গত ১৫ বছর কারা আপোষহীন লড়াই করেছে তা সাধারণ মানুষ জানে।

শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-অ্যাবের নবগঠিত কমিটির সদস্যদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন রিজভী।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছে জনগণ। এই সময়ের জন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা মোটেই কোনো কঠিন কাজ নয়। আমি আশা করি নির্বাচন কমিশন সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। জনগণ তো ভোট দিতে প্রস্তুত। সুতরাং নতুন কোনো ইস্যু তৈরি করে জনমনকে এবং মানুষের চোখকে বিভ্রান্ত করার যারা চেষ্টা করছেন তারাও জনগণের কাছে আজ ধরা খেয়ে যাবেন।’

এখনো অনেক ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘অনেক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মধ্যে দিয়ে আমাদের এখন এগোতে হচ্ছে। অন্ধকারের গুহা থেকে, একদলীয় দুঃশাসনের সেই ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদ থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের মুক্ত বাতাস নিয়ে এসেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তারই পথ ধরে আরেক ভয়ঙ্কর গণতন্ত্রের হত্যাকারী এরশাদের কাছ থেকে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছেন খালেদা জিয়া।

‘যুগ যুগ ধরে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে বিনষ্ট ও ধ্বংস করতে আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীরা যেভাবে চক্রান্ত করে সেই চক্রান্ত এখনো থেমে নেই। তারা নানাভাবেই চক্রান্ত করছেন। চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্য নানা ধরনের মাস্টারপ্ল্যান করে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু এদেশের জনগণ সব অন্ধকার দূরীভূত করে সবকিছু অশুভ পরিকল্পনাকে প্রতিহত করে দেশের স্বাধীন পতাকাকে নিশ্চিত করবে।’

দুর্গাপূজা নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা দেখতে পেলাম ভারতে অশুরের মূর্তি বানানো হয়েছে ড. ইউনূসের চেহারা দিয়ে। তার মুখমণ্ডল দিয়ে। এগুলো নিম্নরুচির পরিচয়। এটা একেবারেই অপসংস্কৃতির পরিচয়। ভারতে আমরা শুনেছি সঙ্গীত-শিল্পকলার চর্চা হয়, সেই দেশ এতো নিম্নরুচির পরিচয় দেবে এটা আমরা কল্পনা করতে পারি না।’

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরির নানা প্রক্রিয়া চলছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘দেশের জনগণ, দেশের মানুষ হিন্দু-মুসলমান জনগোষ্ঠী সবাই টের পেয়েছে কোথা থেকে কী হচ্ছে। তাই সবাই একত্রিত হয়ে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের উৎসব পালন করেছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মোদি সাহেব যদি ভারতে অন্ধকারের যুগে নামিয়ে নিয়ে আসেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ সেই অন্ধকার গ্রহণ করতে পারি না। এ দেশের মানুষ কী হিন্দু, কী মুসলমান, আলেম-ওলামা-মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন-মাদরাসার ছাত্র প্রত্যেকে পূজামণ্ডপ পাহারা দিয়েছে।

‘এটা হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য। এই সম্প্রীতির ঐতিহ্য আমাদের দীর্ঘদিন আমাদের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমান তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন আমরা দীর্ঘদিন সম্প্রতির বন্ধনে আবদ্ধ। তাই আমাদের মধ্যে কেউ বিভাজন তৈরি করতে পারবে না। তারা নিজের দেশে যাই করুক, যতই অন্ধকার নামিয়ে নিয়ে আসুক কিন্তু আমাদেরকে সেটি করতে পারবে না।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনে কোনো দিকে হেলবে না মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘দেশের মানুষ ১৬ বছর ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা ভোটকে তালা দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিলেন। নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছেন। গরু-বাছুরকে ভোটকেন্দ্রে ঘোরাফেরার সুযোগ দিয়েছেন, ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেননি। দিনের ভোট রাতে করেছেন র‌্যাব, ছাত্রলীগ-যুবলীগকে দিয়ে। ভোটাররা যেতে পারেনি। দীর্ঘ ১৬ বছর প্রকৃত ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারেনি। সেই নিশ্চয়তা বিধান করবে এবারের নির্বাচন কমিশন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ সরকার, সে কোনোদিকে হেলবে না। কোনাদিকে যাবে না।’

দল অনুগত প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল, একটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের লোকজনকে খুব কৌশলে নানাভাবে বসানো হচ্ছে, বসানো হয়েছে। এটা দিয়ে কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। জনগণ প্রত্যক্ষ করছে আমরাও প্রত্যক্ষ করছি কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে এই সমস্ত বিশেষ রাজনৈতিক দলের মনোভাবাপন্ন প্রশাসক ও আমলাদের বসানো হচ্ছে। তারা কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে দেবে না।

‘তাই আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের প্রতি আমাদের ও দলের আস্থা সব রেখেই বলব আপনারা এমন ব্যক্তিদের নিয়োজিত করুন যারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে কোনো দলের আজ্ঞাবহ হবে না। আরেকটি নতুন ফ্যাসিবাদের শাসন এ দেশের মানুষ আর দেখতে চায় না।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত