শ্রীপুরে আসামী গ্রেপ্তারে ভাংচুরের অভিযোগ,পুলিশের ভয়ে পুরুষশুন্য বাড়িঘর

  গাজীপুর প্রতিনিধি:

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২২, ২০:৩০ |  আপডেট  : ১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৫৯

গাজীপুরের শ্রীপুরে মামলার আসামী ধরতে গিয়ে তালা, দরজা, পানির কল, রান্নার চুলা, ফ্রিজ ভাংচুর, নারীসহ লোকজনদের মারধোর ও শিশুদের টানা হিঁচড়া করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার ২৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে শ্রীপুর থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গামের ভুক্তভোগীরা। ওই এলাকার কমপক্ষে ২০ বাড়ির পুরুষরা এখন পুলিশের ভয়ে বাড়িছাড়া।

রোববার ২৪ এপ্রিল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, একদল সাংবাদিক ওই এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী শিশুদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন। সেসব বাড়িতে শিশু-কিশোর এবং নারী ছাড়া পুরুষদের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। বাড়িগুলো পুরুষশুণ্য হয়ে পড়েছে।

ফরিদপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের কন্যা ফারজানা ও আফছানা জানায়, শনিবার মধ্য রাত আনুমাণিক ১টার দিকে ইউনিফর্ম পরিহিত বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের বাড়ির গেট ভেঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করে। তারা প্রথমে ডাকাত সন্দেহ করে ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পায় পুলিশের সদস্য। তার মা ঘর থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে দেওয়ার অনুরোধ করে ঘরে যায়। চাবি নিয়ে এসে দেখে পুলিশ সদস্যরা শাবাল দিয়ে বারান্দার গেটের তালা ভাঙছে। পুলিশ গালিগালাজ করে ঘরে থাকা তার বাবাকে মারধোর করে। এসময় বাধা দিলে তার মাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে রোল দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরে খালি গায়ে তার বাবা আলমগীর হোসেনকে ধরে নিয়ে যায়।

আব্দুল খালেকের বাড়ির মনির হোসেনের স্ত্রী হালিমা খাতুন জানান, গভীর রাতে বাইরে লোকজনের আনাগোণা শোনে তারা বের হন। এসময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে ঘরে যেতে বলে। রাত ১১টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত চারবার তাদের বাড়িতে আসে পুলিশের সদস্যরা। পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন ঘরের তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে আলনা, ফ্রিজ ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে। অজ্ঞাত উদ্দেশ্যে তোষকের নিচে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। এক পর্যায়ে অসুস্থ [চিকেন পক্সে আক্রান্ত] ছেলে জুবায়ের হোসেনকে (১২) বিছানা থেকে টেনে হিঁচড়ে নামায়। তারা রান্না ঘরের চারটি চুলা, পানির পাইপ কলসহ ভেঙ্গে ফেলে। এসময় “পুলিশের গায়ে হাত দেওয়ার মজা বুঝে নে” বলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করে।

পানির কল, ফ্রিজ, রান্নার চুলা ভাঙচুর ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর বাড়িতে এখন রান্না বাড়াও বন্ধ রয়েছে। আজ (রোববার) রাতেও পুলিশ সদস্যরা এসে নারী পুলিশ দিয়ে বাড়ির নারীদেরকেও ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে গেছে। সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহীনুর ইসলাম এবং উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক কয়েক পুলিশ সদস্য ও তাদের সাথে থাকা সোর্স মাসুদ ও মামুনকে নিয়ে আমার বাড়ীতে এসেছে। “আমরা রাষ্ট্রৈর কাছে এ ঘটনার ন্যায় বিচার চাই।”

স্থানীয় লাইছুদ্দিনের বাড়িতে বেড়াতে আসা শামসুন্নাহার বলেন, পুলিশের পরিচয়ে রাত আনুমাণিক ১২টার দিকে জানালা-দরজা ও গেটে বেধড়ক আঘাত করতে থাকে। গেট ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে ইসাহাক নামে স্থানীয় এক কারখানা শ্রমিককে বেদম পিটিয়ে ধরে নিয়ে যায়। সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হামলায় আহতের ঘটনায় বাড়ির পুরুষ সদস্যরা শনিবার ২৩ এপ্রিল ভয়ে পালিয়ে গেছে।

আব্দুল খালেকের ছেলে আমিনুল জানায়, রাত ১২টার পর কাজ শেষে কারখানার ভেতরে গাড়ি রেখে বাড়ির সামনে এসে দেখতে পান শুধু টর্চ লাইটের আলো। হঠাৎ স্থানীয় আমিনের ছেলে মাসুদ ও মামুন পুলিশের সাথে থেকে তাকে ধরতে বললে সে নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। এসময় মাসুদ ও মামুন পুলিশের সাথে তাদের বাড়ির অসবাবপত্র ভাংচুর করে। পরে তার মা অমিনা খাতুনকে হাতকড়া লাগিয়ে পুলিশ পাকা সড়ক পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়।

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক বলেন, ওই রাতে তিনি ওই এলাকায় ডিউটিরত ছিলেন। পুলিশের একাধিক টীম আসামী ধরতে গিয়েছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু রায়হানের নাম বলে তিনি বক্তব্য এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই’র) ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু রায়হান জানান, বাড়িতে হামলা বা ভাঙচুরের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা এবং সাজানো। যারা পুলিশের ওপর হাত উঠাতে পারে তারা এমন ঘটনাও সাজাতে পারে। আমরা বেল আসামী ধরতে গিয়েছিলাম। আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম ও ইসাহাক নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রোববার (২৪ এপ্রিল) আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

এসব বিষয়ে কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আজমীর হোসেন জানান, বাড়িঘরে ভাঙচুরের ঘটনা তার জানা নেই। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।

প্রসঙ্গত, গাজীপুরের কাপাসিয়ার মাহমুদা নামে এক নারী শ্রীপুরের ফরিদপুর গ্রামের রমজান আলী মুন্সির কাছ জমি কেনা বাবদ টাকা বায়না করেন। ওই নারীর ভাষ্যমতে, ৫ লাখ ১০ হাজার টাকায় বায়না করেন। পরে জমি কেনা বেচা না করার সিদ্ধান্তে উভয়পক্ষ শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রমজান আলী মুন্সির বাড়িতে এএসআই শাহীনুর ইসলামের আহবানে সালিশ বৈঠকে বসেন। সেখানে চার লাখ টাকা ওই নারীকে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এসময় বাকি আরও ১ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়ে বাগবিতন্ডা হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত হওয়া টাকাগুলো একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব করেন রমজান আলী মুন্সীর ভাতিজা লাইছুদ্দিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এএসআই শাহীনুর ইসলাম উপস্থিত গণ্যমান্য লোকদের সামনে প্রকাশ্যে লাইছুদ্দিনকে মারধোর করে রক্তাক্ত আহত করেন। পরে সালিশে উপস্থিত উত্তেজিত কয়েকজন ওই এএসআই’র ওপর হামলা করে তাকেও আহত করেন। উভয়েই স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত