মুন্সীগঞ্জ বাসীদের ১৩ উন্নয়নের কথা প্রতি জানালেন বিদায়ী ডিসির খোলাবার্তা মাধ্যমে 

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৮ |  আপডেট  : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৩০

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মুন্সীগঞ্জ জেলায় যোগদান করি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যখন দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক ঠিক সে অবস্থা থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই ছিলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করার জন্যে যোগদানের পর জুলাই আন্দোলনের সকল অংশীজনকে সাথে নিয়ে একসাথে কাজ শুরু করা হয়। জুলাই ২৪ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করা ও দোয়া-মাহফিল আয়োজন করা হয়। মুন্সীগঞ্জ জেলায় জুলাই ২৪ এ ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের তালিকা সংগ্রহ ও চূড়ান্ত করা হয়। জুলাই ২৪ এ ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদগণের ছবি ও তথ্য এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা নিয়ে অফিস করিডোরে 【জুলাই স্মৃতি গ্যালারী】স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে জুলাই ২৪ এ ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে মুন্সীগঞ্জ এর শহিদগণের ছবি ও তথ্য এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা নিয়ে ‘চব্বিশের রক্তকথা’ নামক পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। জুলাই/২৪ এ ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে মুন্সীগঞ্জ জেলার ১৪ জন শহিদদের স্মরণে সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে 【এক শহিদ এক বৃক্ষ】 কর্মসূচির আওতায় ১৪ টি সোনালু বৃক্ষরোপণ করা হয়। শহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে সংরক্ষণ এবং আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, মুন্সীগঞ্জের উদ্যোগে জুলাই শহিদদের কবর সংরক্ষণ ও বাঁধাই করা হয়। 

মুন্সীগঞ্জ জেলাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে ৬টি উপজেলার মোট ৬২ টি প্রত্নতাত্বিক ও দর্শনীয় স্থান নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে উপস্থাপনের মাধ্যমে 【প্রত্নকথা】 নামক একটি ভ্রমণ গাইড প্রকাশ করা হয়।

ভূমি বিষয়ক মৌলিক জ্ঞান সম্বলিত 【ভূমিকথা】 পুস্তিকাটি সর্বস্তরে ভূমি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশ করা হয়। মুন্সীগঞ্জের সকল উপজেলার প্রায় ১১ হাজার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বইটি বিতরণ এবং পুস্তিকাটির উপরে জেলাব্যাপী কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। 

কালেক্টরেট জামে মসজিদ এর নির্মাণ সম্পন্ন করে ৩১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে উদ্বোধন করা হয়।

ঢাকার খুব নিকটবর্তী জেলা হলেও মুন্সীগঞ্জে বিগত সময়ে অবকাঠামোগতভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যোগদানের পর থেকেই জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় মুন্সীগঞ্জের উন্নয়ন নিয়ে জেলার সকল দপ্তরের সাথে আলোচনা করা এবং মুন্সীগঞ্জ এর অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, মুন্সীগঞ্জ এর আমন্ত্রণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আদিলুর রহমান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা লে. জে. (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নৌবাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ০৬জন সচিবের উপস্থিতিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রতি মাসেই সকল অংশীজনকে সাথে নিয়ে মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত সভা আয়োজন করা হচ্ছে এবং মুন্সীগঞ্জের অবকাঠামো উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহঃ 

১ মুন্সীগঞ্জ পুরাতন ফেরিঘাট- মুক্তারপুর- শ্রীনগর (ছনবাড়ি) পর্যন্ত ০৪ (চার) লেনের রাস্তার সাথে পুরাতন ফেরিঘাট থেকে কাটাখালী পর্যন্ত সংযুক্তকরণ। 
২ সিরাজদিখানে নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন
৩ কাটাখালী খাল খনন প্রকল্প 
৪ মুন্সীগঞ্জ এর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন
৫ জেলা শিল্পকলা একাডেমি সংস্কার 
৬ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ
৭ আড়িয়ল বিল রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত প্রকল্প 
৮ ট্রমা সেন্টার মেরামত 
৯ লৌহজং পুরাতন উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে পার্ক নির্মাণ
১০ জেলার গুরুত্বপূর্ণ খালসমূহ পুনঃখনন ও সৌন্দর্যবর্ধণ
১১. ০৪ টি নতুন পুলিশ তদন্তকেন্দ্র স্থাপন
১২. বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবণ নির্মাণ 
১৩. মুন্সীগঞ্জ ও মিরকাদিম পৌরসভায় বর্জ্য শোধনাগার এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ

অধিকাংশ প্রকল্প অনুমোদন অথবা বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে পুরো মুন্সীগঞ্জের সার্বিক চিত্র পরিবর্তন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

‘সিরাজদিখানের পাতক্ষীর’-কে মুন্সীগঞ্জ জেলার ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি স্বরূপ সনদ গ্রহণ করি। লৌহজং এর কাঠের ঘর, মিরকাদিমের ধবল গরু, আড়িয়ল বিলের মিষ্টি কুমড়াকে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রায় ৪৮ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের কমফোর্ট জোন ‘HerSpace’ স্থাপন করা হয়েছে, যার ২১টি ইতোমধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে । 

বছরব্যাপী শিডিউলে ব্যস্ত সময় পার করেছে মুন্সীগঞ্জের ক্রীড়াসমাজ। জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচ, জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ, তারুণ্যের উৎসবের আওতায় কাবাডি, ফুটবল, সাঁতারসহ নানা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে।

আমার চোখে জুলাই বিপ্লব কর্মসূচির আওতায় জেলা পরিষদের অর্থায়নে বিডি ক্লিনের সহায়তায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়েছে। 

মুন্সীগঞ্জের কর্মকালে আমি আমার যোগ্যতা ও সাধ্যমতো মুন্সীগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার এই কর্মকালে আমার কোনো কাজ বা আচরণে যদি কেউ মনঃক্ষুণ্ন হয়ে থাকেন আমাকে নিজগুণে ক্ষমা করবেন। 

মুন্সীগঞ্জের মানুষের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। মুন্সীগঞ্জের মানুষের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা আমি আজীবন মনে রাখব। আমার সকল অপরাগতার জন্য আমি দুঃখিত। আমার ও আমার পরিবারের জন্য সকলে দোয়া করবেন। 

মুন্সীগঞ্জবাসীর জন্য রইল আমার নিরন্তর শুভকামনা।
মুন্সীগঞ্জ ভালো থাকুক সবসময়। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত