আগুন ও ককটেল হামলাকারীকে গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৫৩ |  আপডেট  : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১:০০

যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপ করতে এলে গুলির নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।পাঁচদিন আগে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার একই ধরণের নির্দেশনা দিলে সেটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

রোববার বিকালে বেতার বার্তায় কমিশনার এমন নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অপরাধ বিভাগের একজন উপকমিশনারসহ তিনজন কর্মকর্তা। তবে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।

জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি ওয়্যারলেসে বলেছি যে কেউ বাসে আগুন দিলে, ককটেল মেরে জীবনহানির চেষ্টা করলে তাকে গুলি করতে। এটা আমাদের আইনেই বলা আছে।”

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারের রায় ঘনিয়ে আসায় ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর বিক্ষোভ ও ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি দেয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকা আওয়ামী লীগ।

এই কর্মসূচি ঘিরে ১০ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসে-ট্রেনে আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে আসছে।

শেখ হাসিনার মামলার রায় সোমবার ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে। এ দিনটি ঘিরে আওয়ামী লীগ অনলাইনে রোববার থেকে দুই দিন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।শনিবার রাত থেকেই ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

একজন উপকমিশনার বলেন, “স্যারের মেসেজটা ছিল যদি কেউ পুলিশের ওপর ককটেল মেরে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে যেন গুলি করে হলেও তাকে থামানো যায়।”

উপকমিশনার তার মতো করে নির্দেশনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “ব্যাপারটা হচ্ছে, যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে মাঠে কাজ করা পুলিশেরও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অতীতেও এ ধরনের রাজনৈতিক জ্বালাও-পোড়াওয়ের সময় অন্যতম ‘টার্গেট’ হয়েছিল পুলিশ।

“সেই প্রেক্ষাপট থেকে পুলিশ সদস্যদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য স্যার এমন নির্দেশনা দিয়ে থাকতে পারেন।”

বিকেলে ডিএমপি সদর দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কক্ষে কয়েকজন কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলেন। ওই কর্মকর্তা দণ্ডবিধির বই থেকে ৯৬ থেকে ১০৬ ধারাগুলো বের করে দেখান, যেখানে আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকারের কথা বলা হয়েছে।

দণ্ডবিধির ৯৬ ধারায় বলা হয়েছে, “ব্যাক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগকালে কৃত কোনকিছুই অপরাধ নহে।”

গত সপ্তায় চট্টগ্রামে কয়েকটি ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ পর দিশেহারা নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। গেল ১১ নভেম্বর দুপুরে বেতার বার্তার মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেন সিএমপি কমিশনার।

এর পরদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিএমপি কমিশনারের এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানায় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

সংস্থাটি বলেছে, দেশের সংবিধান যেকোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং আইনের আশ্রয় পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। সন্দেহভাজন অপরাধীকেও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া হত্যা বা গুলি চালানোর নির্দেশ ‘কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়’।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত