মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়িতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অসহায় পরিবারের জমি দখলের পায়তারা 

  লিটন মাহমুদ

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১৬:২৪ |  আপডেট  : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ২২:৩৫

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি উপজেলার যশলং ইউনিয়নের বায়হাল গ্রামে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এক অসহায় পরিবারের জমি জোরপূর্বক দখলের পায়তারার অভিযোগ ওঠেছে একই এলাকার বিবাদী বোরহান বেপারি গংদের বিরুদ্ধে।  

পেত্রিক এই সম্পতি নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা মোকদ্দমা চলমান থাকলেও সম্প্রতি জমির উপর সব ধরনের কার্যক্রম না করতে নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ দেয় সিনিয়র সহকারি জজ টঙ্গিবাড়ি আদালত। মোকদ্দমা নাম্বার -৩৭/২৩। মামলার বাদি হন একই এলাকার হিমেল মন্ডল গংরা।

আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৪ নং ওয়ার্ড বায়হাল এলাকার বিবাদী (১) খায়ের বেপারি (৭২) ,সামশুল বেপারি (৭৫) উভয় পিতা- মৃত আবিদ বেপারি , (৩) ফজল বেপারি ( ৬৫) পিতা - রেজেক হাওলাদার ।

সরেজমিনে গতকাল শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় , নিষেধাজ্ঞার জায়গায় দেদারছে বিল্ডিং নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বিবাদী গংরা। আদালতের নিষেধাজ্ঞার রায় কেবল কাগজে কলমেই।  বাদী পক্ষ কিছু বলতে এলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বিবাদীরা। দেন হুমকিও। 

নিরুপায় হয়ে টঙ্গিবাড়ি থানায় বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ করেন জোসনা বেগম ( ৫২)। ক্ষোভ প্রকাশ করে জোসনা বেগম জানান , অভিযোগ করে কি হবে। পুলিশ তো আসে না। অসহায়ের সাথে কেউ থাকে না। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়  , উপরে উল্লেখিত বিবাদীরা বাদি জোসনা বেগমের পৈতৃক সম্পত্তিতে ভবন নির্মান করছেন। ভবন নির্মাণে বাধা দেন বাদী জোসনা বেগমের বৃদ্ধা মা রেসিয়া বেগম (৬৯) । তার উপর বিবাদীগণ চড়াও হয়। তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। বৃদ্ধার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিন্হ দেখা যায়। অভিযোগ পত্রে সামশুল বেপারির পুত্র বোরহান বেপারি (৪০) কেও বিবাদী করা আসামি করা হয়। 

স্থানীয় সুত্রে জানা যায় , বোরহান বেপারি বাদি জোসনা ও তার মাকে প্রায়সই গালিগালাজ করেন। টঙ্গিবাড়ি থানার হাটখান মৌজার সিএস খতিয়ান ১৪৪ - এস এ ৫৩৪ ও ৫৪৪  দুই দাগে এবং আর এস ৭৯২ ও ৭৫০ দাগে মোট সম্পত্তি ৩৮ শতাংশ। পুরো সম্পত্তির মাত্র ৪ শতাংশ ভোগ দখলে রয়েছেন বাদি জোসনা বেগম ও তার মা রেসিয়া বেগম। বাকি সম্পত্তিতে ইচ্ছে মত ভোগদখল বিল্ডিং নির্মাণ সহ অন্যান্য গংয়েরা বসবাস করছেন।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভাবে বেশ কয়েকবার আপোষ মীমাংশা করার জন্য বসা হলেও বাদি পক্ষকে না জানিয়েই বসা হয়েছিল বলে স্থানীয় সুত্রে জানা যায়। আরো জানা যায় বিবাদীগণ পুলিশকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছেন এমন কর্মকান্ড। 

অশ্রুসিক্ত নয়নে বাদি জোসনা বেগমের মা রেসিয়া বেগম জানান , আমার সম্পত্তি বিবাদীরা জোর করে দখল করে আছে। আমি কখনো লিখে দেই নাই। তারা জাল দলিল তৈরি করে এসব করছে। আমাদের বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না। আমার জায়গা না বুঝিয়ে দিয়েই তারা বিল্ডিং করতাছে। আমার মোট জায়গা ৪৬ শতাংশ। আমারে তারা গালিগালাজ করে। হুমকি দেয়। আমারে কে দেখব। আমি আমার জায়গা ফেরত চাই।

এ বিষয়ে কথা হয় যশলং ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আমির হোসেনের সাথে। তিনি জানান, দু পক্ষের লোকেরই কাগজপত্র আদালতে দেওয়া আছে। বিষয়টি আদালত মীমাংশা করবে।  তবে বাদিগণ জায়গা কিছুটা পাবেন। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিবাদীদের পক্ষে বোরহান উদ্দিন বলেন ,  আমরা তাদের জায়গা দখল কিংবা তাদের জায়গায় কোন কাজ করছি না। আমরা অন্য দাগে কাজ করছি। তারা জায়গা পেলে আমরা ছেড়ে দিব।

টঙ্গীবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজিব খান বলেন, অভিযোগ পেয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আদালত মীমাংসা করবে। হুমকি ধামকির বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত