ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর: উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৮ | আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৩২
বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর ভারতের অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ থেমে নেই। ভারতের নিজের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ সেটা নিয়ে তাদের সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর বলে মনে করছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আজ শুক্রবার এক পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ (৬৪ দশমিক ১ শতাংশ) মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে। গতকাল প্রকাশিত ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার জরিপে এটি দেখা গেছে।
এই উপদেষ্টা লিখেন, ‘আমরা নিজেরাও দেখেছি, ছাত্রসংগঠন, মাদ্রাসা, রাজনৈতিক দলসহ বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রতিক দুর্গাপূজার সময় কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছে। সর্বশেষে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মম ও উসকানিমূলকভাবে হত্যার পরও বাংলাদেশের মুসলমানরা অসীম সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।’
গত মঙ্গলবার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার ও জামিন আবেদন নাকচ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, চিন্ময়কে গ্রেপ্তার এবং জামিন আবেদন নাকচ করায় ভারত উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার পর এ ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং দেবতার অবমাননা ও মন্দিরে চুরি-ভাঙচুরের একাধিক নথিভুক্ত ঘটনা রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। বিবৃতিতে বলা হয়, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই ঘটনাকে কিছু মহল ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। ভারতের এমন ভিত্তিহীন বিবৃতি সত্যকে বিকৃত করার পাশাপাশি দুই দেশের বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থী।
গত জুলাইয়ে ইসকন বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কৃত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালত কারাগারে পাঠান। সেদিন তার অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আইনজীবীদের সংঘর্ষে সরকারি এপিপি সাইফুল ইসলাম নিহত হন। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিক্ষোভকারীরাই সাইফুলকে কুপিয়ে হত্যা করেন।
এদিকে ভারতের সংসদেও গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়। লিখিত প্রশ্নোত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কৃতি বর্ধন সিং বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব বলে মনে করছে ভারত।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর ভারতের অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ থেমে নেই। ভারতের নিজের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ সেটা নিয়ে তাদের সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত