নাস্তিক্যবাদ প্রচারের অভিযোগে পাঠাগার থেকে শত শত বই লুট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১২ |  আপডেট  : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫৭

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা শহরের ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগারের চার শতাধিক বই লুট এবং পাঠাগার বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।  স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুদিন ধরে বন্ধ পাঠাগারটি বন্ধ। পাঠকরা বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে ঢাকা-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উপজেলার বাঁশহাটি এলাকায় অভয়ারণ্য পাঠাগারে এই ঘটনা ঘটে।  অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তারা জাফর ইকবাল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন লেখকের প্রায় চার শতাধিক বই লুটপাট করে। এ ঘটনায় পাঠাগার কর্তৃপক্ষ প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। 

জানা গেছে, বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন অভয়ারণ্য পাঠাগার নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেন- “ধনবাড়ীতে নাস্তিক্যবাদের কোনো জায়গা হবে না। এটাই ফাইনাল বক্তব্য আমাদের। নাস্তিক বানানোর এক কারখানার সন্ধান পেয়েছি আমরা। অতি দ্রুত আপনাদের কারখানায় তালা লাগিয়ে ধনবাড়ী ছাড়ুন। অনেকদিন অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করে ভন্ডামি করেছেন আপনারা। আর এই সুযোগ পাচ্ছেন না। কথা ক্লিয়ার।” 

তার ফেসবুক পোস্টের দিনই রাত ৮টার দিকে ২০/২৫ জন খেলাফত মজলিসের যুব সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাঁশহাটি এলাকায় অভয়ারণ্য পাঠাগারে হামলা চালায়।পাঠাগারে প্রবেশ করে তারা উচ্চস্বরে বলতে থাকে, এ পাঠাগার নাস্তিকদের আস্তানা। এখানে নাস্তিকদের বই পড়ানো হয়। শত শত যুবককে নিষিদ্ধ বই পড়িয়ে  নাস্তিক বানানো হচ্ছে। সমাজকে নষ্ট করা হচ্ছে। সুতরাং এ পাঠাগার ভেঙ্গে দেওয়া হবে। পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর পাঠকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়।

এসময় পাঠাগারটির সাধারণ সম্পাদক দূর্জয় চন্দ্র ঘোষ পাঠাগারে উপস্থিত ছিলেন। পরে পাঠাগারে খেলাফত মজলিসের লোকজনের উপস্থিতি দেখে থানার ডিএসবির সদস্য আদনান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় নেতাকর্মীরা তার ওপরেও উত্তেজিত হয়। পরে খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা পাঠাগারে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, ডা. জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের চার শতাধিক বই রিকশায় নিয়ে যায়।

বই লুটপাটের পর আবার ওই নেতা তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘জয়বাংলা কর্মসূচি। বি:দ্র: যাদের বোঝা দরকার তারা বুঝতে পারছে’। 

অভয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘রাতে ২০-২৫ জন হুজুর পাঠাগারে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। এসময় তারা ভেতরে ঢুকেই বলে ওই? সব বই ব্যাগে তুল। এনে কোনো বই থাকবো না। জাফর ইকবাল নাস্তিক, জাফর ইকবালের সব বই নে। এখান থেকে মানুষ নাস্তিকের বই পড়ে। এসময় মব সৃষ্টিকারী একজন বলে, তোদের এ পাঠাগার থাকব না। তোদের এখানে জাফর ইকবালের বই থাকব ক্যা, প্রথম আলোর বই থাকব ক্যা। এটা ওপর থেকে নির্দেশ আছে ভেঙে দেওয়ার, পুড়িয়ে দেওয়ার। এ বলে বইগুলো সব নিতে থাকে তারা। তখন গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতিতে তারা পুড়িয়ে না দিয়ে চার শতাধিক বই লুটপাট করে। ২০২২ সালেও অভয়ারণ্য পাঠাগারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।’

অভয়ারণ্য পাঠাাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র বলেন, রাতে তারা পাঠাগারের বই লুটপাট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারা বইগুলো পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বইগুলো নিয়ে গেছে। এখনও বইগুলো উদ্ধার হয়নি। তবে জানতে পেরেছি বইগুলো ইউএনও অফিসে রয়েছে। 

এ বিষয়ে উপজেলা যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন বলেন, পাঠাগারটি সদস্যরা ইসলামবিদ্বেষী লেখা ফেসবুকে পোস্ট করতো। পাঠাগারে হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবালসহ বিভিন্ন লেখকের বই ছিল যেগুলোতে নারীদের অধিকার, ইসলাম বিদ্বেষ নিয়ে লেখা ছিল। সেসব বইগুলো নিয়ে ইউএনও অফিসে জমা দিয়েছি। 

ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহীন মাহমুদ বলেন, কিছু লোকজন রাতে পাঠাগার থেকে বই নিয়েছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। বইগুলো তারা ইউএনও কার্যালয়ে রেখে গেছে। তবে সেখানে কি পরিমাণ বই রয়েছে সেটা জানি না। দুই পক্ষকেই আসতে বলা হয়েছিল। একপক্ষ এলেও আরেকপক্ষ উপস্থিত ছিল না। পরে উভয়পক্ষকে রোববার কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে। 

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত