দৃষ্টিহীন লেখক আবার কলেজের প্রফেসর! ল্যাপটপ,স্মার্টফোনে সিদ্ধহস্ত, বাজাতে পারেন গিটারও

  অরিজিৎ মণ্ডল:

প্রকাশ: ৩ মে ২০২১, ১১:০২ |  আপডেট  : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৪১

তিনি কলেজের প্রফেসর। তাঁর লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকবার। তিনি গিটার বাজান, তিনি ল্যাপটপ অপারেট করেন। অবাক লাগছে? এই কাজগুলো তো যে কেউই করতে পারেন। তাহলে আজ কেন এসব বলা? 

যার কথা আমি বলছি সেই মানুষটি সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন! ঠিকই শুনছেন। একেবারে জন্ম থেকেই দুই চোখে দৃষ্টি নেই তাঁর। আজ আপনাদের বলব, সেই মানুষটা কীভাবে এতটা কঠিন পথ পেরিয়ে এক চরম সাফল্যের দিশা খুঁজে পেলেন। যার কথা এতক্ষণ বলছিলাম তাঁর নাম সঞ্জীব রজক। বাড়ি মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ এলাকার সদরহাটে। মা মিনা রজকের কাছ থেকে জানতে পারলাম, ছেলের ছোটবেলায় তিনি স্বামীকে হারিয়েছিলেন। জীবনের অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ছেলের হাত ধরে আজ আলোর মুখ দেখেছেন। 

ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করতে গেলে স্কুল থেকে জানায়, ‘দেখতে পায় না কীভাবে পড়াশোনা  করবে?’ বিমর্ষচিত্তে ফিরে আসেন বাড়িতে, পরে কয়েকজন সজ্জন ব্যক্তির সহায়তায় ছেলেকে ‘ব্লাইন্ড স্কুলে’ ভর্তি করেন। তার জীবন কাহিনি আমাদের বলতে বলতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তিনি। বলেন, ‘সঞ্জীবকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি এটাই আমার ভগবানের থেকে অনেক বড় পাওয়া।’

সঞ্জীব জানান, তাঁর নিজের ইচ্ছাশক্তি আর আশেপাশের মানুষের সহায়তায় হাজার প্রতিকূলতা,  প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আজ তিনি সাফল্যের পথে। বাবাকে হারানোর পর মা-ই জীবনের চলার পথের সঙ্গী ছিলেন। এক কথায় মায়ের চোখ দিয়েই দেখতে পেতেন সঞ্জীব। পরবর্তীকালে নিজের চেষ্টায় গ্র্যাজুয়েশন করেন, মাস্টার্স এবং এমফিল করেন। তারপর সাফল্যের হাতছানি। বাংলার অধ্যাপক হিসাবে সুশীল কর কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। গিটার বাজানো শেখেন, আমাদের বাজিয়েও শুনিয়েছেন নিজেরই লেখা গান।

নিজের লেখা তৃতীয় নয়ন, মহাভারতের ছড়া, সাতকাহন, স্মৃতির জলসাঘরে এরকম অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। তার পর বন্ধুদের হাত ধরে বিবাহিত জীবন শুরু করেন সঞ্জীববাবু, বর্তমানে তাঁর এক ৪ বছরের ফুটফুটে কন্যাসন্তান রয়েছে। সাধ করে তার নাম দিয়েছেন সহজিয়া।
 
সঞ্জীবের স্ত্রী তৃষ্ণা রজক স্বামীকে নিয়ে কেমন আছেন? জানতে চাইলে উত্তর আসে ‘আমি, সঞ্জীব আর আমাদের মেয়ে আমরা তো তিন বন্ধু, নিজেদের সমস্যা, কষ্ট, সুখ সবটাই ভাগ করে নিয়ে আমি খুব সুখী ওর সঙ্গে।’ সত্যিই স্বামী-স্ত্রী-সন্তান এই সম্পর্কগুলো মিলেমিশে 'বন্ধুত্ব' হলেই বোধ হয় জীবনের চলার পথ আরও স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠে।

বন্ধুত্বের কথা বলতে মনে পড়ল, সঞ্জীবদার খুব কাছের বন্ধুকে পেয়েছিলাম। নাম দেবদীপ ধীবর, বন্ধুর কথা জানতে চাইলে এক কথায় জানান, ‘সঞ্জীব আমার কঠিন বন্ধু।’ পরে 'কঠিন'-এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, জীবনে অনেক বার ভেঙে পড়েছিলাম কিন্তু কিছুদিন আগে আমার শরীর খুব খারাপ হয়, সবাই আশা ছেড়ে দেয়। আমিও ভাবছিলাম যে আর তো মাত্র কটা দিন তার পর সব শেষ। হঠাৎ আমার এক কাছের বান্ধবী বলে, সঞ্জীবকে তোর কথা জানা। ওর কথা মতো আমি সঞ্জীবকে ফোন করে বলি। ও আমাকে একটাই কথা বলে, "আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি তুই আমার সামনে দাড়িয়ে আছিস। আমি চোখে জল ধরে রাখতে পারিনি সেদিন, আজ আমি সুস্থ, ওর কাছে এসেছি। ও আমার জীবনের 'কঠিন' সময়ের বন্ধু।

শেষে সঞ্জীব সবার উদ্দেশ্যে বার্তা দেন, ‘জীবনে চলার পথে প্রত্যেকের জীবনে হাজার সমস্যা, হাজার প্রতিকূলতা আসবেই, ভেঙে না পড়ে এগিয়ে যেতে হবে, আর সমস্যার দিকে বেশি না ভেবে সাফল্যের পথ কীভাবে আসবে সে দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত। এভাবে চললে জীবনে যতই সমস্যা আসুক একদিন সাফল্য আসবেই।’সৌজন্যে- আজকাল
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত