কমিউনিটি লিডার হিসেবে রাষ্ট্রীয় “প্রবাসী সম্মাননা ২০২৫” পেলেন ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন 

  শ‌হিদুল ইসলাম, প্রতি‌বেদক, সি‌লেট

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:২৭ |  আপডেট  : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৪০

যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ এই দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে যে কয়জন ব্যক্তিত্ব অসাধারণ অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই,জেপি একটি উজ্জ্বল নাম। ব্যবসায়ী হিসেবে তার সাফল্য যেমন ঈর্ষণীয়, তেমনি সমাজসেবক ও মানবতাবাদী হিসেবে তার অবদান অনুকরণীয়। স্কটল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশি ঐতিহ্যকে প্রতিষ্ঠিত করা থেকে শুরু করে মাতৃভূমিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ সর্বত্র তার উপস্থিতি মানবকল্যাণের প্রতীক। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি যে অনন্য যাত্রা অতিক্রম করেছেন, তা শুধু একজন ব্যক্তির গল্প নয়, বরং দুটি জাতির মধ্যে ভালোবাসা ও সহযোগিতার এক জীবন্ত ইতিহাস। সম্প্রতি স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল হিসেবে তার পুনর্নিয়োগ এই মহান যাত্রার আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

অনুষ্ঠানের শুরুতে যুক্তরাজ্যের সফল ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও সমাজসেবীর ভূমিকা পালন করা ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই,জেপি “প্রবাসী সম্মাননা ২০২৫” প্রদান করা হয়। এটি শুধু তার পেশাগত সফলতার স্বীকৃতি নয়, বরং প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃত্ব, অধিকার আদায় এবং সামাজিক উন্নয়নে তার অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

প্রবাসী সম্মাননা ২০২৫ প্রাপ্ত এই কমিউনিটি লিডার প্রমাণ করেছেন যে দৃঢ়সংকল্প, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মিলিয়ে একজন মানুষ তার সমাজ ও দেশের উন্নয়নে কতটা প্রভাবশালী হতে পারে। ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই,জেপি আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা: সীমাবদ্ধতা নয়, সাহস, পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি নিয়েই গড়ে ওঠে নেতৃত্ব।

প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত সিলেট জেলার ১০৩ প্রবাসী বাংলাদেশিকে সম্মাননা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। রবিবার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদেরকে সম্মানিত করা হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ছিল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সম্মাননা প্রদান ও সেমিনার। সম্মাননা প্রদানের ৬ ক্যাটাগরির মধ্যে ছিল- সফল পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, কমিউনিটি নেতা, নারী উদ্যোক্তা, খেলাধুলায় সাফল্য অর্জনকারী ও বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে ভূমিকা রাখা।

সম্মাননা প্রদানের লক্ষ্যে এই ৬ ক্যাটাগরিতে প্রবাসীদের কাছ থেকে আবেদন ও জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে সিলেট জেলা প্রশাসন। এরপর বাছাই করা হয় ১০৩ প্রবাসীকে। সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় কিনব্রিজের উত্তরপ্রান্ত থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর রিকাবিবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে গিয়ে শেষ হয়। পরে অডিটোরিয়ামে প্রবাসীদের সংবর্ধনা প্রদান ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সরওয়ার আলম। সফলভাবে বাস্তবায়ন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মাসুদ রানা। প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের সচিব আব্দুন নাসের খান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সিলেটে এনআরবি বিনিয়োগ জোন হতে পারে। পাশাপাশি সিলেটে একটি এনআরবি স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবী, পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী ও পুলিশ সুপার কাজী আখতারুল আলম, প্রবাসী পক্ষে স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই,জেপি এবং বৃটিশ সুপ্রিম কোর্টের প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার নাজির আহমদ। সন্ধ্যায় প্রবাসীদের বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন একজন সফল ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও অসাধারণ মানবতাবাদী হিসেবে ব্রিটেন, ইউরোপ ও বাংলাদেশ জুড়ে অধিক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সাফল্যের পালকে যুক্ত হয়েছে এমবিই, ডিবিএ, এফআরএসএ, জেপি। সম্প্রতি তিনি স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।

তার জন্ম ১৯৫২ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার নালিহুরী গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে। মৌলভীবাজারে শিক্ষালাভের পর ১৯৬৭ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান এবং সেখানে রেস্তোরাঁয় কাজ করার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। লন্ডনে শিক্ষা অব্যাহত রেখে রেস্তোরাঁয় কাজ শুরু করার পর লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্যাটারিং শিল্পে উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি এডিনবরায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফেডারেশন অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ওয়ালী তছর উদ্দিন ক্যাটারিং ব্যবসায় তার দক্ষতার জন্য সুপরিচিত। বিখ্যাত ভেরান্ডা রেস্তোরাঁ, ল্যান্সার্স রেস্তোরাঁ এবং তার সর্বশেষ সফল উদ্যোগ ব্রিটানিয়া স্পাইস রেস্তোরাঁ পরিচালনা করছেন। সর্বোপরি তার ব্যবসায়িক কর্মপরিধি বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে আছে।

একজন বিজনেস লিডার হিসেবে তার সাফল্যময় কর্মপরিধি অনুসরণীয়। তিনি এডিনবরা অ্যান্ড লেইথ চেম্বার্স অব কমার্সের ইনস্টিটিউট অব ডিরেক্টরস ও রোটারি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক। তিনি যুক্তরাজ্যে কাউন্সিল অব দ্য ফরেন চেম্বার্স অব কমার্সের পরিচালক, ব্রিটেন ইন ইউরোপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও পরিচালক এবং ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন বিজনেস স্কুল অ্যাডভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। জুনিয়র চেম্বার তাকে ১৯৯২ সালে ইয়াং স্কট অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত করে।

ড. উদ্দিন ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফেডারেশন অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ইবিএফসিআই)-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মূলধারার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এই ব্যবসায়ী সংগঠনটি যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে বেশ কিছু অগ্রগামী উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ-ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও মহাপরিচালক হিসেবে ড. উদ্দিন এক্সপো বাংলাদেশ ২০০৫-এ যুক্তরাজ্যে প্রথম বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক বাণিজ্য মেলা পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের একশটি কোম্পানি, যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও অনাবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা এক্সপো বাংলাদেশ ২০০৫-এ অংশ নেয়।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন ২০০০ সালে কুইন মার্গারেট ইউনিভার্সিটি, এডিনবরা থেকে ডক্টরেট ইন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (অনারিস কসা) ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ২০০৭ সালে হেরিয়ট-ওয়াট ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লেটার্স (ডি. লিট.) এবং এডিনবরা ন্যাপিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব দ্য ইউনিভার্সিটি (ডি. ইউনিভার্সিটি) ডিগ্রি লাভ করেন।

ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন বলেন, সিলেট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে “সফল কমিউনিটি নেতা (Successful Community Leader)” ক্যাটাগরিতে প্রবাসী সম্মাননা–২০২৫ অর্জন করতে পেরে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ, সম্মানিত ও গর্বিত বোধ করছি। এছাড়াও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনাদের অব্যাহত ভালোবাসা, সহযোগিতা ও সমর্থনই আমার পথচলার প্রধান প্রেরণা ও শক্তি।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত