অভিনয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে যা শোনালেন আলমগীর

  বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২২, ১১:২১ |  আপডেট  : ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৫৩

বাবা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’–এর অন্যতম প্রযোজক। মা পুরোদস্তুর গৃহিণী। মা–বাবা কেউ চাননি অভিনয়ে আসুক তাঁদের সন্তান। কিন্তু ১৯৭২ সালের ২৪ জুন ‘আমার জন্মভূমি’ চলচ্চিত্রে শুটিংয়ের মধ্য দিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান আলমগীর। এরপর কীভাবে যে অভিনয়ের ৫০ বছর পার করে দিয়েছেন, টেরই পাননি। বৃহস্পতিবার তাঁর ব্যবসায়িক কার্যালয়ে বসে শোনালেন পাঁচ দশকের অভিনয়জীবনের গল্প।

ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিলাম। অন্য কোনো পেশায় গেলে হয়তো ভালো ক্যারিয়ারও হতো। কিন্তু ছোটকাল থেকে মাথায় পোকা ছিল। পাগলামিও ছিল সিনেমা নিয়ে। এই অঙ্গনে কাজ করতে গেলে একটু পাগলামি থাকতে হয়। উত্তমকুমার, দিলীপ কুমার, রাজ্জাক ভাই—তাঁদের দেখে দেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতাম, ইশ্, আমি যদি তাঁদের মতো হতে পারতাম। আমার বাবা সেই ১৯৫৬–এর দিকে ‘মুখ ও মুখোশ’-এর ওয়ান অব দ্য প্রডিউসার ছিলেন, এরপর আমার পরিবারের আর কেউ সিনেমার সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমি সামহাউ পাগলামি থেকে চলচ্চিত্রে এসেছি। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো ফিল্মে আসতে পারতাম না। যদিও তিনি সিনেমা প্রযোজনা করেছেন কিন্তু পরবর্তীকালে আর এটাকে লাইক করতেন না।
 
বাবা ভেবেছিলেন, তাঁর বড় ছেলে ডাক্তার হবে। মা ভেবেছিলেন, বড় উকিল হতে পারব। আমি নাকি খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারি। আর আমি চেয়েছিলাম, পাইলট হতে। বাস্তবে কোনোটাই হতে পারিনি, আবার পেরেছিও। তবে সেটা চলচ্চিত্রের পর্দায়। আমার মা খুব ঠান্ডা মানুষ ছিলেন। তাঁকে জীবনে কোনো দিন নামাজ কাজা করতে দেখিনি। দুই বেলা কোরআন শরিফ পড়তেন। মায়ের একটা শখ ছিল, আমাদের রান্না করে খাওয়ানো। তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর গৃহিণী। যখন বাবা মারা গেলেন, তার এক–দেড় মাস পরই তো ফিল্মে এলাম। মা খালি একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুই পারবি?’ বলেছিলাম, আম্মা, চেষ্টা করে দেখি না। তবে আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন বড় বোন ও তাঁর হাজব্যান্ড। বলেছিল, ‘ছবির নাম যেহেতু “আমার জন্মভূমি”, স্বাধীনতা নিয়ে, দেশের ছবি, ইতিহাস হয়ে থাকবে, করো। তবে একটাই করো। আর না।’

এফডিসিতে এখন যেটা ঝরনা স্পট, ওটা তখন ছিল পুকুর। ওই পুকুরপাড়ে প্রথম দিনের শুটিং। কোনো সহশিল্পী ছিল না। একটা গানের শুটিং ছিল, একক গান। কণ্ঠ দিয়েছিল সাইফুল ইসলাম (মডেল-অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের বাবা)। ক্যামেরায় ছিল মাহফুজুর রহমান খান, পরিচালক আলমগীর কুমকুম। গানের প্রথম লাইন ছিল ‘পায়ের নিচে কোমল মাটির ছোঁয়া’। শুটিংয়ের আগে চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ ছিল না। দু-একজনকে চিনতাম, তার মধ্যে স্টিল ফটোগ্রাফার নজরুল, এডিটর আতিক, ইসমাইল হোসেন, শিবলী ভাইকে চিনতাম, তাঁর ছোট ভাই ছিল আমার ক্লাসফ্রেন্ড। তবে শুটিংয়ে প্রথম দিন কিছুই ফিল করিনি। কারণ, গানের প্রতি আমার অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করত। রিদমটা বুঝতাম। রিদম মতো সব করে দিয়েছি। বন্ধু মাহফুজ ক্যামেরায় থাকায়, পরিবেশটাও আপন মনে হয়েছে। 

তখন তো পরিচালকেরা শুটিংয়ের আগে কীভাবে একজন আর্টিস্টকে মোটিভেট করতে হয়, কন্ট্রোলে নিতে হয়, জানতেন। শুটিংয়ের ১৫-২০ দিন আগে কুমকুম ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা ফ্রেন্ডলি হয়ে গেল। অফিসে ডাকতেন, যেতাম। আড্ডাবাজি করতাম। আই ওয়াজ ভেরি অ্যাটাচড উইথ দেম। আমাদের সময় তো অনেক ডিরেক্টর ছিলেন, তাঁরা অভিনয় করে দেখাতেন, বুঝিয়ে দিতেন।’

 চলচ্চিত্রের সঙ্গে ৫০ বছর পার করা এই অভিনেতা নিজের অভিনয় জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে আরও বলেন, ‘এখনও সু-অভিনেতা হতে পারিনি। কারণ শিল্পী হওয়া এত সহজ নয়। অভিনয়ে পূর্ণমান ১০০-তে নিজেকে পাস মার্কস দিতে রাজি, এর বেশি নয়।’

জনপ্রিয় এই অভিনেতার চলচ্চিত্র যাত্রার ৫০ বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তার সহকর্মী, পরিবার থেকে শুরু করে অনেকেই।

গুণী অভিনেত্রী ববিতা বলেন, ‘অভিনয়ে ৫০ বছর পরিপূর্ণতা লাভ করা একজন শিল্পীর জন্য বিরাট ব্যাপার বলেই আমি মনে করি। কারণ কিছুদিন আগে আমার জীবনেও এমন সময় এসেছিল। আলমগীর ভাই অপূর্ব একজন মানুষ। তিনি সবসময়ই শিল্পীদের খোঁজখবর রাখেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তার প্রযোজিত প্রথম সিনেমা ঝুমকা ও নির্দোষ সিনেমায় কাজ করার। এছাড়া বেশকিছু সিনেমাতে আমরা একসঙ্গে অভিনয় করেছি। আমার প্রযোজিত পোকা মাকড়ের ঘর বসতি সিনেমায় অভিনয় করেও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। অথচ এই সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য তিনি কোনো সম্মানী নেননি। এমন মহান মানুষের অভিনয় জীবনের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমার শ্রদ্ধা, সম্মান, শুভেচ্ছা।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত