অভিনেতা আলী যাকেরকে হারানোর এক বছর
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১০:০৭ | আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২
আজ শনিবার, ২৭ নভেম্বর। কারো কাছে তিনি ছিলেন বাতিঘর, কারো কাছে অনুপ্রেরণার উৎস, আবার কারো কাছে তিনি দারুণ অভিনেতা বা নির্দেশক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি ছিলেন একজন সহজ মানুষ, সফল ব্যক্তিত্ব। তিনি গুণী মানুষ আলী যাকের।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) এই অভিনেতা, নির্দেশককে হারানোর এক বছর পূর্ণ হলো। গেল বছরের এই দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন, মৃত্যুর দুদিন আগে করোনাতেও আক্রান্ত হন তিনি।
আলী যাকের ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ তাহের ছিলেন চট্টগ্রাম সদর স্ট্রিটের মহকুমা প্রশাসক, মা রিজিয়া ছিলেন গৃহিণী। তিনি চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে হলেও বাবার চাকরির কারণে দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরেছেন তিনি। ১৯৭৭ সালে সারা যাকেরকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের দুই সন্তান। ছেলে অভিনেতা ইরেশ যাকের ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়া।
আলী যাকের সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯৬২ সালে নটর ডেম থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক করেন তিনি। মায়ের চিকিৎসার জন্য কলকাতা গিয়ে তিনি শম্ভু মিত্র আর উৎপল দত্তের বেশ কটি নাটক দেখেছিলেন। সেই থেকে ভালোবাসা তৈরি হয় নাটকের প্রতি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যুক্ত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে। স্নাতক শেষে করাচিতে এক ব্রিটিশ এজেন্সিতে ট্রেইনি এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকায় এশিয়াটিকে চাকরি শুরু করেন।
স্বাধীন বাংলা বেতারের একজন শব্দসংগ্রামী ছিলেন আলী যাকের। স্বাধীনতার পর ঢাকায় ফিরে দায়িত্ব নেন এশিয়াটিকের। অভিনেতা ও নির্দেশক মামুনুর রশীদের আহ্বানে যুক্ত হন মঞ্চনাটকে। ১৯৭২ সালে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে অভিনয় দিয়ে শুরু হয় তার মঞ্চে যাত্রা। ১৯৭২ সালের জুনে আলী যাকের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। তখন থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নাগরিকই ছিল তার ঠিকানা। বাকি ইতিহাস, সৎ মানুষের খোঁজে, দেওয়ান গাজীর কিস্সা, কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, গ্যালিলিও, ম্যাকবেথসহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকে অভিনয় ও নির্দেশনা দেন তিনি।
টেলিভিশনে ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর দেয়াল’সহ অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। ৫০টির বেশি বেতার নাটকে অভিনয় ছাড়াও লিখেছেন টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটক। তার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘সেই অরুণোদয় থেকে’, ‘নির্মল জ্যোতির জয়’ প্রভৃতি।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ আরও অনেক সম্মাননা।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত