'স্বাধীনতার ৫১বছরেও আধুনিকতার ছোঁয়া নেই’

হাজারও সমস্যার একটি নাম কাউনিয়া জংশন স্টেশন   

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২২, ১৯:৩১ |  আপডেট  : ১৫ মে ২০২৪, ১৮:৩৫

বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা কাউনিয়া স্টেশনে ২৪ঘন্টায় ৩টি আন্তঃ নগর ট্রেনসহ ২০টি ট্রেন চলাচল করে। উত্তর জনপদের যোগাযোগের নাভি হিসেবে পরিচিত কাউনিয়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে বছরে প্রায় কোটি টাকা আয় হলেও স্টেশনটিতে স্বাধীনতার ৫১ বছরেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখো গেছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা বালাই নেই আছে শুধু যাত্রী দুর্ভোগ আর নাগরিক বিড়ম্বনা। স্টেশনটিতে যাত্রী দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের। প্লাটফর্মের চাল দিয়ে দেখা যায় আকাশ, বৃষ্টি হলে যাত্রীদের নাকাল অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে চলছে জনবল সংকট। ঝুকিপূর্ণ অভারব্রীজ দিয়ে চলছে যাত্রী পারাপার। 

তিন জেলার যাত্রী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়ত করলেও আন্তঃ নগর ট্রেনের আসন সবচেয়ে কম এই স্টেশনে। এছাড়াও এসি বাথ কেটে অন্য স্টেশনে দেয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরা থাকলেও নষ্ট পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন, ফলে টোপলা টানা পাটি, ইভটিজিংকারী সহ অপরাধীদের সনাক্ত করা যায় না। ফ্যান গুলো চলে না, বিদ্যুৎ চলে গেলে ভূতুড়ে এলাকায় পরিনত হয়, মোম জালিয়ে কাজ করেন স্টেশন মাষ্টার। স্টেশনে নেই কোন ইলেকট্রেশিয়ান। আইপিএস টি ব্যাটারীর অভাবে নষ্ট, গণ শৌচাগারের অভাব, নাম মাত্র ২টি যাত্রী বিশ্রামাগার থাকলেও তা অপরিচ্ছন্ন ও ব্যবহার অনুপযোগি। স্টেশনে সুপার নেই, চুক্তিভিত্তিক সুইপার দিয়ে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ। ২টি টিউবয়েলই নষ্ট, ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাব। মুসাফির খানায় নেই ফ্যান ও বাতি, সেটি এখন হকারদের দখলে। গরু-ছাগলের বিচরণ ভুমি স্টেশনের রেল লাইন ও প্লাটফর্ম। এসব যেন দেখার কেউ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ২নম্বর প্লাট ফর্মের চালে টিন নেই, ১নম্বর ফ্লাট ফর্মের চালে টিন লাগালেও নিম্ন মানের কাজ হওয়ায় ঝড়ে সেটি দিয়ে বৃষ্টি হলেই টুপ টুপ করে পানি পড়ে। এতে করে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পোহাতে হয়। 

আন্তঃ নগর ট্রেনের অপেক্ষমান যাত্রী আবুল কালাম জানান টিকেটের কালেবাজারী তো রয়েছেই সেই সাথে রয়েছে নেশা খোরদের উৎপাত সহ নানা অব্যবস্থাপনা। বিভিন্ন স্থানে গমনকারী যাত্রীদের অভিযোগ, গণ শৌচাগার না থাকায় মহিলা যাত্রীদের বিড়ম্বনার শেষ নাই। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই সেখানে। একটি ১ম শ্রেণীর ওয়েটিং রুম থাকলেও কোন আয়া নেই । পরবর্তীতে ২য় শ্রেনীর একটি ওয়েটিং রুম তৈরী করা হলেও পরিস্কার পরিচ্ছনতার অভাবে তা ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় রেলওয়ে কর্মচারী মজনু মিয়া জানান, এই স্টেশনের কর্মচারী ও যাত্রীদের জন্য একটি মেডিকেল ছিল তার কোন আস্তিত্ব নেই। ফলে ট্রেনে কাটা রোগি ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বি ত হচ্ছে। চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগকৃত স্টেশন মাষ্টার আঃ বারী তালুকদার জানান ১০টি আন্তঃ নগর ট্রেন, ৮টি  কমিউটার, ২টি লোকাল ট্রেন চলে এই রেল জংশন দিয়ে। দীর্ঘদিন থেকে ২টি মেইল ট্রেনসহ ৬টি ট্রেন বন্ধ রয়েছে। ফলে লোকাল যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে, কমেছে স্টেশনের আয়। এছাড়াও পন্য পরিবহনের জন্য কোন ট্রেন এখন নেই। স্টেশনটি চরম জনবল সংকটে, কর্তৃপক্ষকে বলে কোন কাজ হয়নি। এই স্টেশন থেকে সরকার আয় করছে কোটি টাকার উপর অথচ আধুনিকতার বালাই নাই। সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে উর্দ্ধতন কর্তৃপ¶কে জানান হয়েছে। 

অপেক্ষমান যাত্রী রবিউল ইসলাম জানান, শুনেছি স্টেশনটি আধুনিক হবে, সেটি কবে হবে কেউ বলতে পারে না। ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার শাহ সুফি নুরমোহাম্মদ এর সাথে ০১৭১১৫০৬১৩৬ এই নম্বরে কথা হলে তিনি জানান, কিছু সমস্যা আমার একতিয়ারে নেই, আর বাকি সমস্যা গুলো দ্রুত সমাধান করা হবে। যাত্রী সাধারন কাউনিয়া জংশন স্টেশনটি কে একটি আধুনিক মডেল স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী,বাণিজ্যমন্ত্রী সহ রেলমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত