সীমিত এবং প্রসারিত লকডাউন  

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২১, ১২:০৫ |  আপডেট  : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৫

আজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সরকার ঘোষিত সীমিত লকডাউন। চলবে আগামি বুধবার পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের প্রসারিত বা কঠোর লকডাউন শুরু হবে। গত রোববার জারিকৃত সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সীমিত লকডাউনে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল থাকলেও ‘কঠোর লকডাউন’ কার্যকর করতে সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। সীমিত লকডাউনের এ তিনদিন রাজধানীতে শুধু পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা চলাচল করতে পারবে। এ সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। একই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে যে কঠোর লকডাউন শুরু হবে তার বিস্তৃতি হবে ব্যাপক। সারাদেশ এর আওতায় আসবে। কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারেব না। বন্ধ থাকবে সব অফিস-আদালত, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদন কেন্দ্র ও শপিংমল। তবে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহের নিমিত্তে কাঁচাবাজার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা রাখা হতে পারে। হাসপাতাল, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও তদসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, ওষুধের দোকান এবং গণমাধ্যমের গাড়ি  লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে।

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবারের লকডাউনকে কার্যকর করতে তারা কঠোর পদক্ষেপ নেবে। মানুষ যাতে নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না বেরোয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষপ নেবে পুলিশ। যানবাহন যাতে চলাচল না করে তা নিশ্চিত করতে এবার ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি রাজধানীর থানা সমূহকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এবার মাঠে থাকবে। ডিএমপি কমিশনার গত ২৭ জুন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করে কেউ রাস্তাঘাটে বেরোলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় এর নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বিভিন্ন মহল থেকেই বলা হচ্ছিল। সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণকে বাধ্য করার জন্য কঠোর পদক্ষোপ নেয়ার কথাও বলেছেন সচেতন ব্যক্তিরা। জনস্বাস্থ্যবিদগণ বারবার বলেছেন যে, ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মুখে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনই হতে পারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের একমাত্র উপায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, সরকার এবং অন্যান্য সংস্থার সতর্কবাণীকে থোড়াই কেয়ার করে এক শ্রেণীর মানুষ যে যার মতো চলাফেরা করছে। শত সতর্কবাণীকে উপেক্ষা করে গত ঈদুল ফিতরের সময় মানুষ পাগলের মতো ছুটে গেছে গ্রামে। তখনই বিশেষজ্ঞগণ আশংকা করেছিলেন যে, এই অপরিনামদশিতার ফল ভয়াবহ হতে পারে। সে আশংকা এখন বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। চলতি মাসের গোড়া থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করে। গত ২৭ জুন স্বাস্থ্য বিভাগ আগের চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১১৯ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে, যা শুরু থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এ নিয়ে সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালা ১৪ হাজার ১৭২। একই সময়ে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ২৮৭ জন। এ সময়ে মোট আক্রান্ত হয়েছে আট লাখ ৮৮ হাজার ৪০৬ জন। 

এটা ভেবে কেউ কেউ আত্মপ্রসাদ লাভের চেষ্টা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, ইতালী, ভারতের চেয়ে আমরা অনেক ভাল আছি। তাদের এ ভাবনা যে কতটা অমূলক তা গত মাসখানেকের চিত্রেই স্পষ্ট। রোগ বা ভাইরাস যে কাউকে ক্ষমা করে না সেটা না বললেও চলে। কখন এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে কেউ জানে না। আর সেজন্যই সর্তকতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। বলা হয়ে থাকে-‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান দ্য কিউর’। অর্থাৎ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম। করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ব্যাধি, কেবল সতর্কতার মাধ্যমেই যার থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব। আর তা করতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।

সরকারের যে কোনো পদক্ষেপ সফল করার ক্ষেত্রে জনগণের সম্পৃক্তি ও সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। জনগণ যদি সরকারের উদ্যোগ বা পদক্ষেপের সঙ্গে একাত্ম না হয়, কর্মসূচি সফল করতে সরকারকে যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা না করে, তাহলে সরকারের পক্ষে কানো কাজেই কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। আর তা যদি হয় জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত, তাহলে বিষয়টি হয়ে ওঠে আরো জরুরি। আমরা গ্রামনগরবার্তার সম্পাদকীয় কলামে বহুবার এসব কথা বলেছি। সরকারের বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপের সমালোচনার সাথে সাথে আমরা এটাও বলেছি, যেহেতু জনজীবন রক্ষার জন্যই সরকার স্বাস্থ্যবিধি, বিধিনিষেধ এবং লকডাউনের কর্মসূচি ঘোষণা করছে, তাই সেসব কর্মসূচি সফল করতে নিজেদের স্বার্থেই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা জনগণের অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু হতাশাজনক বিষয় হলো, সরকার কিংবা অন্যান্য সংস্থার সেসব আহবান জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কানে তোলেনি। এরচয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে!
 
একটি কথা বলা দরকার যে, সরকার করোনা সংক্রমণ রোধকল্পে যে বিধিনিষেধ বা লকডাউন ঘোষণা করছে, তা রাজনৈতিক লাভ- লোকসানের হিসাব থেকে নয়। জনগণকে বিপর্যয় থেকে রক্ষার  তাগিদই এখানে মূখ্য বিষয় হিসেবে কাজ করছে। তাই সবার উচিত হবে নিজের, পরিবারের এবং সর্বোপরি সমাজের সবার জীবনকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সরকার ঘোষিত পদক্ষেপ সমূহকে সমর্থন ও সহযোগিতা করা। সে সাথে সরকারের প্রতি আমাদের আহবান থাকবে- লকডাউনকে আক্ষরিক অর্থেই লকডাউন হিসেবে কার্যকর করতে যতটা কঠোরতা প্রয়োজন, ততটাই অবলম্বন করুন। কেননা, সবার ওপরে মানুষের জীবন। যে কোনো মূল্যে তাকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতেই হবে।  

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত