সঙ্কটের বিহ্বলতা : অগস্ত্যযাত্রীর কথকতা

  নূহ-উল-আলম লেনিন

প্রকাশ: ২ এপ্রিল ২০২২, ১২:০২ |  আপডেট  : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৫

মানবজাতি ইতিহাসের এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। সমগ্র পৃথিবীজুডে্ ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, জঙ্গিবাদের রক্তাক্ত উত্থান, ইজরাইলে জায়নবাদের, ভারতে হিন্দুত্ববাদের,যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবাদী বর্ণবাদ,ইউরোপে সংকীর্ণ আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ এবং মুসলমান প্রধান দেশগুলোতে হিংসা হানাহনি রক্ষণশীলতার প্রবল প্রতাপ  এক চরম অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা এবং অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। যতদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল ততদিন বাইপোলার বা দুইমেরু বিশ্ব ছিল উত্তেজনার উৎস।

 সোভিয়েত ও সমাজতন্ত্রের পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব বাদী একমেরু বিশ্ব ও পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন মানবজাতির ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়,'! তিনদশক যাওয়ার পর এখন দেখছি একমেরুর জায়গায় বহুমেরু এবং বিশ্বায়নের জায়গায় কর্পোরট সংকীর্ণতাবাদ মানবসভ্যতাকে অভিনব সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

নতুন প্রজন্মের কাছে উন্নততর ভাবাদর্শের শূন্যতা, চরমপন্থার মনস্তত্ত্বের প্রসার, সেকুলার রাষ্ট্রচিন্তার প্রায়োগিক দুর্বলতা ও ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির কাছে আত্মসমর্পণ অথবা আপসকামিতা, লাগামহীন দুর্নীতি- দুর্বৃত্তায়ন,সুশাসনের অভাব এবং বহুত্ববাদী মানবিক মূল্যবোধের সংকোচন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের পথ অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। 

বিশেষত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এই সঙ্কটের প্রধান শিকার। আমাদের আয়তচোখে এক অদ্ভুত  অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে।,দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ গডে্ তুলতে গেলেই বিপদ! রাজনীতি অর্থ উপার্জনের সহজতম পথ হওয়ায় সংসদের অধিকাংশ সদস্য ব্যবসায়ী।

 অর্থের লোভ , ক্ষমতার লোভ,স্তাবকতা,ধর্ম নিয়ে ব্যবসা এবং দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাওয়া, শিক্ষার মানের অবনতি এবং ভয়াবহ মাদকাসক্তি আমাদের তরুণদের বিপুল সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে।

যে যত বড্ বক্তৃতাই দিন না কেন বাস্তবতা হচ্ছে তরুণদের সামনে অনুসরণেযোগ্য কোনো রোল মডেল নাই। রাতারাতি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক একটি শ্রেণীর বিলাস-ব্যসন এবং অনৈতিক জীবন-যাপন প্রচন্ড নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে তরুণদের মধ্যে। এর সুযোগ গ্রহণ করে জঙ্গিবাদের দীক্ষাগুরুরা। 
 
আমাদের সকল উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং সরকারের সাফল্যগুলোকে ম্লান করে দেয় দুর্নীতিবাজ- দুর্বৃত্তদের কর্মকাণ্ড!এক প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে সমাজের ভেতর সৃষ্টি হচ্ছে অসহায়ত্ববোধ।শুভ ও শ্রেয়োবোধ জাগ্রত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা সর্বোপরি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিরন্তর উদ্যোগ সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর কথায়, " আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধির" দৃশ্যমান লক্ষণ দেখছি না। এটা মনে রাখা জরুরি যে উন্নয়নই জনগণের চিত্তজয় অথবা নির্বাচনে জয়লাভের একমাত্র হাতিয়ার নয়। 

বিশ্বপরিসরে অশুভ আর অকল্যাণের নব উত্থান এবং প্রবল তান্ডব মানুষের-----আমাদের এক অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।জীবনের এই সায়াহ্নবেলায় , অগস্ত্যযাত্রার পথে সংকোচিত হয়ে আসছে আমার জগৎ। দুচোখের আলো নিভে আসছে। মানুষের মুক্তিসাধনার সহযাত্রীদের অধিকাংশই রণেভঙ্গ দিয়ে আখের গুছাতে ব্যস্ত। ক্রমেই একা হয়ে পড়েছি ।

তবুও রবীন্দ্রনাথের মন্ত্রগুপ্তি: মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ,--এই বাণী মনে রেখে সান্ত্বনা খুঁজি।  ভাবি "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে  তবে একলা চলো রে।" যতক্ষণ শ্বাস আছে এই চলা থামবে না। 

লেখকের, ফেসবুক স্ট্যাটাস ২০১৭
আমাদের কথা: সময় পরিবর্তন হলেও বক্তব্যের বিষয় অপরিবর্তিত।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত