সেনা সদস্য সেজে তিন বিয়ে, হাতিয়ে নিয়েছে অর্ধ কোটি টাকা

  নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৪ |  আপডেট  : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:০৩

বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌর এলাকার নন্দীগ্রাম কলেজপাড়ায় এক লাখ টাকা নিতে এসে ভুয়া সেনা সদস্য শ্রী সাগর কুমার নামে একজন স্থানীয়দের হাতে আটক হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সেনা সদস্য পরিচয় দেওয়া আটক ব্যক্তি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ভাদরন্ড গ্রামের মৃত জোগেন্দ্রনাথের ছেলে।

নন্দীগ্রাম কলেজপাড়ার ভুক্তভোগী সুখিল চন্দ্র বলেন, গত ফাল্গুন মাসে সেনা সদস্য পরিচয়ে সে আমার মেয়েকে বিয়ে করে। সে বলেছিলো আমার বাবা-মা কেউ নাই। বগুড়ার মাঝিরা ক্যান্টনমেন্টে সে চাকুরী করেন। বাড়ি গোপালগঞ্জে। একটি ভোটার আইডি কার্ডও সে দেখায়। পাশাপাশি বগুড়ার মাঝিরা ক্যান্টনমেন্টের সেনা সদস্যের আইডি কার্ডও দেখায়। সে বলে আমার কেউ নাই। আমি বিয়ের অনুমতি এখনো পায়নি তাই গোপনে বিয়ে করতে হবে। আমরা তার কথা বিশ্বাস করে নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা ও ১১ ভরি সোনার গহনা দিয়ে বিয়ে দিয়েছি। ১১ ভরি সোনার গহনার দাম আনুমানিক ২৪ লাখ টাকা। কয়েকদিন আগে রাজশাহীতে জায়গা কেনার কথা বলে আমার কাছে সে আরো এক লাখ টাকা চায়। বগুড়া বাসা ভাড়া নিয়ে তিন মাস আমার মেয়েকে রেখেছিলো। পরে আমার বাড়িতে মেয়েকে রেখে যায়। তিনদিন আগে নওগাঁ থেকে এসে এক মেয়ে বলে সে সাগরের বউ। বিয়ের কিছু ভিডিও এবং ছবি দেখায়। তখন আমি এক লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে সাগরকে আমার বাড়িতে আসতে বলি। এর মাঝে নওগাঁর ওই মেয়ে আমার এখানে আসে। পরে লোকজন ওই বাটপারকে নিয়ে বসার পরে সে স্বীকার করে তিনটি বিয়ে করেছে। তার চাকুরী করার কথা ভুয়া।

নওগাঁ থেকে আসা ভুক্তভোগী পাপিয়া মহন্ত বলেন, আমারদেরকেও সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে এ বছরের মার্চ মাসে বিয়ে করে। আমার বাবা তাকে নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা ও সাড়ে তিন ভরি সোনার গহনা দিয়ে বিয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন ভরি সোনার গহনার আনুমানিক দাম সাড়ে সাত লাখ টাকা। বগুড়া বাসা ভাড়া নিয়ে আমাকে বগুড়ায় রাখতো। সে বাসায় ১৫-২০ দিন পরপর আসতো। সে বলতো আমার বিয়ের অনুমতি নাই। ক্যান্টনমেন্টেই থাকতে হয়। পরে ক্যান্টনমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সাগর নামে কোনো সেনা সদস্য নাই। একটি মাধ্যমে এটাও জানতে পারি নন্দীগ্রামে সে আবারো বিয়ে করেছে।  

ভুয়া সেনা সদস্যের প্রথম স্ত্রী লক্ষ্মী রানী বলেন, আমি জানতাম না সে এসব করে বেড়াচ্ছে। আমাকে সে বলে আমি গাড়ি চালাই। নন্দীগ্রামে এসে দেখছি অনেক কান্ড ঘটেছে। আমার বাবা তাকে বাড়ি করার জন্য ২ শতক জায়গা দিয়েছে। টাকা ও গহনা দিয়ে বিয়ে দিয়েছে। আমার ছোট ছোট দুইটি ছেলে-মেয়ে আছে। এখন আমার কি করা উচিৎ বুঝতেই পারছি না।

ভুয়া সেনা সদস্য শ্রী সাগর কুমার বলেন, আমার এই দুই বউ ছাড়াও রাজশাহীতে আরেক বউ আছে। ওই পক্ষে নয় বছরের এক ছেলে ও তিন মাসের একটি মেয়ে আছে। সে এসব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, আমি প্রথমে আমার এলাকায় বিয়ে করি। সে রাজশাহীতে থাকে। পরে নওগাঁ সদরের পাপিয়া মহন্তকে বিয়ে করি। তার কিছুদিন পরে নন্দীগ্রামে বিয়ে করেছি। সেনা সদস্যের আইডি কার্ড ও পোশাক ঢাকা থেকে বানিয়ে নিয়েছি। এসব টাকা নিয়ে আমি আমার গ্রামে বাড়ি বানিয়েছি ও কিছু টাকা খরচ করেছি। আমার সব ভুল হয়েছে।

নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, সে এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ভুক্তভোগীরা মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত