যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আগের চেয়ে এ বছর আরও বাড়বে : অর্থমন্ত্রী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৫৩ |  আপডেট  : ৮ মে ২০২৪, ০৯:৫০

যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আগে যা ছিল তার চেয়ে এ বছর আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন,‍ যারা এসেছেন তারা সবাই চাচ্ছেন, বাংলাদেশে কী করে তাদের ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করবেন।

তাদের আমরা সেই সুযোগের কথা বলেছি। আমি বারবার বলেছি, বাংলাদেশ নজিরবিহীন সুযোগের দেশ। এখানে বিনিয়োগ করলে লোকসানের কোনো আশঙ্কা নেই। যুক্তরাষ্ট্র মূলত কৃষি ও সার্ভিস খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন কোবোস, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অতুল কেশব, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রপ্তানি কাউন্সিল ও ইউএসবিবিসির রোর্ড সদস্য কেভিন রিওপক, মেটার দক্ষিণ এশিয়ার জননীতিবিষয়ক পরিচালক সারিম আজিজসহ প্রায় ৩০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোন ব্যবসাটা ব্যর্থ হয়েছে, আপনারা বলেন? এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগ, যে কোনো খাতেই আসুক না কেন, কোনটা ব্যর্থ হয়েছে যে খালি পকেটে তারা চলে গেছেন? আমি বারবার বলেছি, বাংলাদেশ নজিরবিহীন সুযোগের দেশ। এখানে বিনিয়োগ করলে লোকসানের আশঙ্কা নেই।  এটা ব্যবসার জায়গা।

মার্কিন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করতে চান, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তারা সবক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চান—কৃষি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও মোটরগাড়ি। যারা এখানে দেখা করতে এসেছেন, তারা বিভিন্ন শিল্প ও বিনিয়োগ খাত থেকে এসেছেন। তাদের কেউ ইলেকট্রনিক্স, কেউ বিদ্যুৎ খাত এবং কেউ বিমা খাতে কাজ করেন। তারা সবাই চাচ্ছেন, বাংলাদেশে কী করে তাদের ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করবেন। তাদেরকে আমরা সেই সুযোগের কথা বলেছি। এখানে অনেক সুযোগ আছে।

তারা নাকি ১২ বছর ট্যাক্স হলিডে চেয়েছে প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা এভাবে আইন না করে দিয়ে একেক খাতের জন্য একেক রকম ট্যাক্স হলিডে, যেটা যেটা প্রয়োজন, চাহিদাটা আগে তুলে ধরেছি। মেড ইন বাংলাদেশ—এই ধারণাটা তারা যদি সম্প্রসারিত করেন, তাহলে বাংলাদেশের উন্নতি হবে, যারা বিনিয়োগ করবেন, তাদেরও ভালো হবে। এখন এই ধারণাটার মধ্য দিয়ে আমরা চাই, এ দেশে দ্রুততার সঙ্গে কর্মসংস্থান খাতে উন্নয়ন করতে।  

আমাদের শ্রমশক্তি কোথায় যাবে প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, এই শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে আমরা সুযোগটা তৈরি করেছি। সেখানে এই পরিভাষাটি ব্যবহার করলে আপনারা জবাবও পেয়ে যাবেন। সেখানে কোন খাত থেকে আপনারা ট্যাক্স হলিডে পাবেন, কোন খাতে ট্যাক্স কমানো ও নমনীয় করা হবে। এখন এগুলো আমরা করে ফেলেছি।  

বৈঠকে তারা কী বলেছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তারা বলেছেন যে আমাদের সুযোগ করে দেবেন, আমরা বিনিয়োগ করব, এ দেশকে আরও উন্নতির শিখরে নিতে চাই। সেজন্য তারা যে সুযোগ সুবিধা আছে সেগুলো চাচ্ছে।  

কী কী সুযোগ সুবিধা চাচ্ছে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে ইনকাম ট্যাক্সের সুযোগ সুবিধা। তবে তারা এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারে নাই কোনটা তাদের প্রয়োজন। আমরা বলেছি আমাদের এখানে অনেক সুযোগ আছে। এগুলো যদি আরো সুনির্দিষ্ট করতে হয় তাহলে তাদেরকে আরো সময় দিতে হবে বসতে হবে। এনবিআরের সঙ্গে বসে নেগোসিয়েট করলে আগে যেমন হাঙ্গামা ছিল ওয়ার টু জেড, এখন এরকম নাই। এখন প্রতিযোগিতায় চলে আসছে ৷ কিছু কিছু জায়গায় আপত্তি আছে সেগুলো দেখতে হবে।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে - ‘অর্থমন্ত্রীকে পাওয়া যায় না, আমাদের অর্থনীতি ভালো না’ এমন প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, যিনি বলেছেন আমাদের অর্থনীতি ভালো না তিনি অর্থনীতি পড়েন না। সারা পৃথিবীর স্বীকার করে বাংলাদেশ রোল মডেল।  এখন বাংলাদেশের আর কত অর্থনীতি ভালো হবে সেটা বলেন।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা সহজ নয়, এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা বলেছি, আপনারা বিনিয়োগ নিয়ে আসেন। কোনো চিন্তা করবেন না। যে সমস্যা আছে সেগুলো ঠিক করে নেব। আমাদের এখানে আমেরিকার বিনিয়োগ কী ছিল! আমাদের যে-সকল পলিসি আছে সেখানে তারা আরো সুনির্দিষ্ট সহায়তা চায়। তারা সব সময় সহায়তা চাইবেই, আমরাও দিতে চাই। আমি আশা করছি, আমেরিকার বিনিয়োগ আগে যা ছিল তার চেয়ে এ বছর বাড়বে।

আমেরিকা এ পর্যন্ত কেমন বিনিয়োগ করেছে এবং কোন কোন খাতে আগ্রহ দেখিয়েছে, জানতে চাইলে অর্থনীতি সম্পর্ক বিভাগের সচিব সরিফা খান বলেন, আজকের আলোচনায় বিনিয়োগ বিষয় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। বিশেষ করে তারা বাংলাদেশে সয়াবিন রপ্তানি করে। বাংলাদেশের কৃষিখাতে অগ্রগতিতে তারা কৃষিখাত নিয়ে আগ্রহী। সয়াবিনের উৎপাদন ও রপ্তানিতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে আমাদের কৃষিখাতে কর অব্যাহতি আছে। সেজন্য তারা এটাকে স্বাগত জানিয়েছে। আরেকটা হলো ভিসা কোম্পানি এসেছিল, তারা বাংলাদেশে ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস লেনদেন বিষয় ডিল করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্যাশলেস লেনদেনে প্রণোদনা চেয়েছে যাতে করে আমাদের এ খাত আরও উন্নতি করে।  

তিনি বলেন, ডিজিটাল পেমেন্টকে উৎসাহিত করার জন্য আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে। তারা বাংলাদেশকে অ্যানালাইসিস করে বলেছে, বাংলাদেশ ৯ম কনজুমার মার্কেট। ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বে নবম কনজুমার মার্কেটের গ্রোদের শেয়ার হতে চায়। তারা এজন্য বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের মেটলাইফ কোম্পানি বাংলাদেশে ১৯৫২ সাল থেকে ব্যবসা করছে, তারা জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগের সবচেয়ে ভালো ক্ষেত্র। তারা আমাদের রাজস্ব বোর্ডের পলিসিতে সন্তুষ্ট। মূলত তারা কৃষি ও সার্ভিস খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী এবং ভবিষ্যতে আরো বড় বিনিয়োগকারী প্রতিনিধিদল আনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।  

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত