ভারতের আগ্রাসন

কাউনিয়ায় তিস্তার চরে আগের মত ঘাস পাওয়া যায় না

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৫২ |  আপডেট  : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৩:৪০

বালু জমিতে উৎপাদিত ফসলে পরিবারের চাহিদা মেটাতে না পারায় গবাদি পশু পালনে ঝুঁকেছে চরাঞ্চলের মানুষ। চরে জন্মানো ঘাস-পাতা এদের মূল খাদ্য হওয়ায় খরচও কম হতো। পাশাপাশি তেমন যতœ না নিলেও প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে ওঠে পশু গুলো। চরের গরু-ছাগল-মহিষের চাহিদা বেশি থাকায় লাভবান হচ্ছে পালনকারীরা। কিন্তু বর্তমানে ভারতের আগ্রাসনে তিস্তার বুকে জেগে উঠা চর গুলো কিপ্টামি করছে, আগের মত ঘাস পাওয়া যায় না। ফলে বিপাকে পরেছে চরের পশু পালনকারী চাষিরা।


সরেজমিনে উপজেলা বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, রূপালী চাঁদ আকাশে উঁকি মারছে. চাঁদের আলোয় পাশের শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর পানি গুলো স্বচ্ছ ডাবের পানির মত ঝিকমিক করছে। সে পানিতে আলো আঁধারির মাঝে একটি ডিঙি নৌকায় একজান ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। নৌকা থেকে ভেসে আসছে ভাটিয়ালী সুর। মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না। তার গানের সুর যেন তিস্তার দূ কোল জুড়ে এক গভীর ভাবের সৃষ্টি করে। দু পাড়ের বুনো ঘাস আর নানা জাতের ফসল গুলো যেন তন্ময় হয়ে তার গান শুনছে। ভায়ারহাটের চরে কথা হয় ছলিমুদ্দিনের সাথে, তিনি জানান আগে গরু-ছাগল-মহিষ চরে ছেরে দিয়ে পালন করতো, তখন নদীর চরে চরে ঘাসে ভরপুর ছিল, পশু গুলো ছেরে দিলে কেউ বাধা দিতো না। এখন নানা ফসলের চাষ হওয়ায় এবং অধিক পরিমানে কিটনাশক ব্যাবহারে আগের মতো ঘাস জন্মায় না। তিস্তার চর ইদানিং কিপটা হয়ে গেছে, আগের মত ঘাস পাওয়া যায় না। পাশে থাকা অপর কৃষক রহিম মন্ডল বলে তিস্তার চর কে দোষ দিওনা, তিস্তার উপর ভারতীয় আগ্রাসনে আস্তে আস্তে নদী তার যৌবন হারিয়ে ফেলছে। ছলিমুদ্দিন বলেন এ বছর অনেক ধার দেনা করে আলু লাগিয়ে ছিলাম কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় তার অর্ধেক দামও তুলতে পারেনি। তাই এ বছর কোরবানীর জন্য আশায় বুক বেঁধে দুইটি গরু পালন শুরু করেছি। এখন ঘাসের অভাবে কি হবে জানি না। মৎস্যজীবী আছিমুদ্দিন জানান, নদীতে পানি নাই, তাই মাছও নাই। তিস্তার তীর ছিল মাছ আর ভাতের এক বাঙালী জনপদ। এখন সময় পাল্টেছে। তিস্তার বুকে আজ কাঁদার জন্যও কয়েক ফোটা জল নেই। নেই মাছ নেই ঘাসের পালা। সংসার চালানো দায়। তিস্তার সেই ভরা যৌবন এখন আর নেই। এক সময়ের ¯্রােতস্বিনী তিস্তার বুকে এখন বালুচর। স্টীমারের বদলে ঘোরার গাড়ি, নৌকার বদলে ঠেলা গাড়ি! ভারত সরকার তিস্তার পানি প্রবাহে বাঁধ দিয়েছে। চরের মানুষ এখন গবাদি পশু পালন শুরু করছে এতে করে পশু বিক্রির বাড়তি আয়ে তাদের সংসার চলায়। চরাঞ্চলসহ উপজলায় বেড়েছে গরু-ছাগল-মহিষের সংখ্যা। চরাঞ্চলের মানুষ গবাদি পশু পালন করেই বন্যা, খরা, নদীভাঙ্গন সহ প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে আছে। চরে ছাগল চরানো মালেকা বেওয়া জানান, চরের ঘাস খেয়েই চলছে তার খামার। ১টি ছাগল থেকে ১ লিটার পর্যন্ত দুধ পান তিনি। তিনি এবার কোরবানিতে একসাথে ৬টি ছাগল বিক্রি করবেন। বলছিলেন বর্ষাকালে তার সমস্যা হয় না। নদীতে পানি আসলে নৌকা করে ছাগলগুলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যান। কিন্ত এখন চরে ঘাস কমে গেছে। নদীরক্ষা কমিটির সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান জানান, আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দেশের ক্ষতি করে ভারত একতরফা ভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে পারে না। কিন্তু ভারত এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশেকে মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তিস্তা নদীর আশেপাশের জীব বৈচিত্র ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত