মাদারীপুরে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জাটকা বিক্রি হচ্ছে

  শফিক স্বপন

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৯ |  আপডেট  : ৮ মে ২০২৪, ০২:২১

মাদারীপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রকাশ্যে  বিভিন্ন হাট-বাজারে জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। জাটকা ইলিশ পরিবহন, বিক্রি ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের নজরদারির অভাবে জেলার বিভিন্ন আড়তে জাটকা বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব জাটকা বিক্রি বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাটকা ইলিশ রক্ষায় গত ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত নদীতে জাটকা মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই আট মাস জাটকা পরিবহন, বিক্রি ও বাজারজাতকরণও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বড় আকারের ইলিশ ধরতে কোনো বাধা নেই। 

জানা যায়, প্রতিদিন রাতে মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ ও পদ্মা নদী থেকে জেলেরা প্রতিনিয়ত জাটকা ধরে জেলার বিভিন্ন আড়ত ও হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। এ ছাড়াও শরীয়তপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক, নসিমনে করে প্রতিনিয়ত ইলিশের পাশাপাশি জাটকা নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। এসব জাটকা শহরের পুরান বাজার, ইটেরপোল, মস্তফাপুর এলাকার মাছের আড়তে নিয়ে আসার পর মাছ বিক্রেতারা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর এগুলো জেলার মিয়ারহাট, টেকেরহাট, কবিরাজপুর, শ্রীনদী, শিবচর, উৎরাইল, কাওড়াকান্দি, ভূরঘাটা, গোপালপুর, খাসেরহাট, সাহেবরামপুর, ডাসার, শশীকরসহ জেলার ছোট-বড় হাট-বাজারে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মাদারীপুর পৌরসভার শকুনী দৈনিক  বাজারের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘আড়তে জাটকা আসে বলেই আমরা কিনে বিক্রি করি। এখানে আমাদের দোষের কিছু নেই। আড়তদাররা যদি জাটকা আনা বন্ধ রাখেন তাহলে আমরাও জাটকা ইলিশ বিক্রি বন্ধ রাখবো।’

মাদারীপুর জেলার পুরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোসলেম মাতুব্বর বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। হয়তো দুই-এক জন বিক্রি করে। বড় এক মণ মাছের সঙ্গে চার-পাঁচ কেজি জাটকা মাছ থাকতে পারে।’

জেলার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, ‘ইলিশ মাছ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই জাতীয় সম্পদ রক্ষায় জাটকা ইলিশ রক্ষা করতে হবে। যদি জাটকা আহরণ ও পরিবহন রোধ করা না যায়, ভরা মৌসুমে ইলিশ মাছের সংকট দেখা দিবে। আমি মনে করি প্রশাসনের এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

মাদারীপুর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তপন মজুমদার বলেন, ‘আমরা জেলার নদী ও স্থল পথে জাটকা ইলিশ আহরণ ও পরিবহন বন্ধ করতে কাজ করছি। তবে কেউ যদি এর মধ্যেও জাটকা ইলিশ আহরণ বা বিক্রি করে তাহলে আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’

মাদারীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা বলেন, ‘জাটকা ইলিশ ধরা ও বিক্রি বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আমাদের অগোচরে জাটকা বিক্রি করছে।’ তা ছাড়াও জাটকা রক্ষায় নজরদারি আরো বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন বলেন, ‘জাটকা ইলিশ বিক্রির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমরা গত সপ্তাহে অভিযান পরিচালনা করে ৩০০ কেজির বেশি জাটকা জব্দ করে এতিমখানায় বিতরণ করেছি। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যদি জাটকা পরিবহন বা বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত