বৈজ্ঞানিক বিবেচনা থেকে লকডাউন কমপক্ষে ২ সপ্তাহ হওয়া উচিত: ডা. লেলিন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩ এপ্রিল ২০২১, ২২:১৮ |  আপডেট  : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৪০

বৈজ্ঞানিক বিবেচনা থেকে লকডাউন দিলে সেটা কমপক্ষে ২ সপ্তাহ হওয়া উচিত, এক সপ্তাহের (৭ দিন) লকডাউন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে উল্লেখ করেছেন হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।

শনিবার (৩ এপ্রিল) তিনি গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন। ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে একসপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে। করোনা ভাইরাসের সুপ্তিকাল ১৪ দিন। অর্থাৎ করোনা ভাইরাস শরীরে ১৪ দিন পর্যন্ত ঘাপটি দিয়ে থাকতে সমর্থ। শরীরে প্রবেশের ১৪তম দিনেও ভাইরাসটি রোগ তৈরিতে সক্ষম। এজন্য বৈজ্ঞানিক বিবেচনা থেকে লকডাউন দিলে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ হওয়া উচিত। একসপ্তাহের লকডাউন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কেমন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের মূলনীতি হলো- একজন মানুষের শরীর থেকে ভাইরাসকে অন্যের শরীরে প্রবেশে বাধা দেওয়া। এজন্য মাস্ক পরতে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। শারীরিক দূরত্ব তৈরির শেষ ও কঠোরতম পন্থা হচ্ছে লকডাউন। এসময়ে মানুষ ঘরবন্দি থাকবে। একের সঙ্গে অন্যের দেখা হবে না। কঠোর হওয়ার আগে অনেক ধরনের পদক্ষেপ দ্বারা জনচলাচল সীমিত করা যায়। যেমন সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মেলা, ক্রীড়া-আয়োজন, উৎসব স্থগিত করা। দোকানপাট, বিপণিবিতান, শপিংমল ইত্যাদির সময়সীমা কমিয়ে আনা যায়। যেসব অফিস অনলাইনে করা সম্ভব সেগুলো সেভাবে করা। সরকারি অফিসের সঙ্গে বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ছোট অফিসের জনবল কমিয়ে আনা ও শিফটিং চালু করা। লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামানো। এরকম আরও অনেক সেক্টরভিত্তিক পরিকল্পনা করা যেত। সেগুলো কিছুই করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, করোনার তীব্রতা ঠেকাতে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সুবিন্যস্ত পরিকল্পনার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। ২৮ মার্চ সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে। সেখানে ব্যাপক অস্পষ্টতা লক্ষ্যনীয়। সরকারি কর্মকান্ডে স্ববিরোধীতা বিদ্যমান। একদিকে সমাবেশকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে অন্যদিকে লক্ষমানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে সরকারি উদ্যোগে মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলো। নানা নামে বিশাল বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানায় বাধ্য করার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তাররোধে সরকার একদিকে যেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি অন্যদিকে আবার বিস্তারসহায়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দিয়েছে। সবমিলিয়ে করোনার সংক্রমণ সুনামিতে রূপ নিয়েছে।

এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল গত একবছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে রুখতে কর্তৃপক্ষ অনেক পরিণত পদক্ষেপ নেবে এবং জনভোগান্তির কথা মনে রাখবে। কিন্তু আমরা দেখলাম করোনাকে মোকাবিলায় কার্যকর অস্ত্রগুলোর সময়োপযোগী ব্যবহার না করে একবারে সর্বশেষ অস্ত্রটি ছুঁড়ে দেওয়া হলো। এতে করোনাবধের সঙ্গে মানুষের ভোগান্তিও বাড়বে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত