বিজয়ের মাস শুরু
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৪ | আপডেট : ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৪
শুরু হলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সময় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। যাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন হয়েছে, বিজয়ের মাসে সেসব লাখো শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাবে বাঙালি জাতি।
প্রতি বছরের মতো এবারও বিজয়ের মাস নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করবে।
স্বাধীন জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূখণ্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য-খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা। ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয়ের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এ দিনে।
বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হওয়ার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এ অর্জন হওয়ায়—বেদনাবিধুর এক শোক গাঁথার মাসও এ ডিসেম্বর।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাঙালি বীর সন্তানদের সঙ্গে যুদ্ধে একের পর এক পরাজিত হতে থাকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী। ১ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গেরিলা হামলা বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশে সেনাবাহিনীর আরও ভয়াবহ চেহারা প্রকাশ পেতে থাকে। বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে জিঞ্জিরাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে এক দিনেই হত্যা করা হয় ৮৭ জনকে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আরও ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে বাংলাদেশকে। শেষ কামড় দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে পাকিস্তানি বাহিনী।
শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হয়ে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
কর্মসূচি
আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবারের বিজয় উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার বাণী প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশসহ সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য সাময়িকী ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। ওই দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন বেসরকারি বেতার বা টিভি চ্যানেলে সঠিক মাপ এবং রংসহ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধি-বিধান জনসাধারণের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করবে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে। তবে ১৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে আলোকসজ্জায় আলো জ্বালানো যাবে না। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলায় একত্রিশ বার তোপধ্বনি করা হবে।
ওই দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে (সকাল ৬টা ৩৪ মিনিট) রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ ছাড়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যরা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধারা ও বিদেশি কূটনীতিকরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে।
১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
দেশের সব জেলা এবং উপজেলায় ৩ দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা আয়োজন এবং শিশুদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে বিদেশি অধ্যাপক, প্রথিতযশা নাগরিক, স্থানীয় প্রশাসন, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা, শিল্পী-সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, সাংবাদিক, গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড একক বা যৌথভাবে এবং চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো ঐদিন সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সুবিধাজনক সময়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া অনুষ্ঠান— ফুটবল ম্যাচ, টি-টুয়েন্টি, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, কাবাডি ও হা-ডু-ডু খেলাধুলার আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশে টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসভিত্তিক অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে।
এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হলসমূহে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং গণযোগাযোগ অধিদফতরের উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মিলনায়তন বা উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। জাদুঘর ও বিনোদনমূলক স্থান শিশুদের জন্য সকাল-সন্ধ্যা উন্মুক্ত রাখা এবং বিনা টিকিটে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে এবং দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা বা পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র, ডে-কেয়ার ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রীতিভোজের আয়োজন করবে। ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও রঙিন নিশান দ্বারা সজ্জিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডাক অধিদফতর মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।
একই সঙ্গে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহ আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত বা প্রার্থনার আয়োজন করা হবে জানানো হয়।
এদিকে, শনিবার (২৯ নভেম্বর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজয় মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করলেও চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে পরদিন সব কর্মসূচি স্থগিত করার কথা জানান।
এদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিজয় মাসের প্রথম দিনে গণসংগঠন গুলোর অর্থাৎ উদীচী যুব ইউনিয়ন ছাত্র ইউনিয়ন সন্ধ্যা ছয়টায় শিল্পকলা একাডেমির গেট থেকে আলোর মিছিল করে শেখা চিরন্তনীতে যাবে। আমরা সম্মিলিতভাবে ঐ কর্মসূচিতে যোগ দেবো। সারা দেশেও এ ধরনের শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে বিজয়ের মাসের কর্মসূচি শুরু হবে।
এদিকে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও কর্মসূচি নিয়েছে। এরমধ্যে ১৪ ডিসেম্বর রবিবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৬টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত, সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ। এরপর মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ও রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশে যাত্রা। সকাল সোয়া ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিয়াসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত এবং শান্তি কামনায় দোয়া/প্রার্থনা করা হবে।
এদিকে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা ২০ মিনিটে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৬টায় উপাচার্য ভবন সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে জমায়েত এবং সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে যাত্রা। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ, নৃত্যকলা বিভাগ এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের যৌথ ব্যবস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিয়াসহ বিভিন্ন হল এবং আবাসিক এলাকার মসজিদে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য দোয়া করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে কলা ভবন, কার্জন হল, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও স্মৃতি চিরন্তনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে।
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত