বঙ্গবন্ধুঃ এক মহাকাব্যিক নেতা

  নূরুদ্দীন দরজী

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২১, ১৫:৩০ |  আপডেট  : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৪৩

পৃথিবীতে অনেক বিস্ময়কর মহামানবিক ও গুণান্বিত মানুষ জন্ম নিয়েছেন। তাঁরা তাাঁদরেজীবন ও কর্ম এবং আদর্শের কারণে যুগে যুগে প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁরা হয়ে রয়েছেন  সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান। মানুষ তাঁদেরকে স্মরণ করে, তাঁদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। তাঁরা মানুষকে মাথা উঁচু করে করে পথ চলতে শিখিয়ে গেছেন, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে অনুপ্রািণিত করেছেন । তাাঁরা মরেও অমর। 

বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমনি একজন সেরা মানুষ, মহান নেতা। ইতিহাসেরি এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব তিনি। একটি জাতিকে তিনি মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন, ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। মানুষের হৃদয় আকাশের তিনি এক ধ্রুবতারা।  বিশ্ববাসীর জন্য তাঁর অবদান অসামান্য। তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন উপাখ্যান বাঙালি মাত্রের‌ই মানসপটে আঁকা রয়েছে। বাংলাদেশের এবং বাঙালির তিনি মহানায়ক, জাতি তাই গর্বিত তাঁকে নেতা হিসেবে পেয়ে। বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ একটি অভিন্ন সত্ত্বা। বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবনকাহিনী মানুষের কৌতহল বৃদ্ধি করে। বিগত হাজার বছরে তাঁর মতো হয়ে কেউ আর আসেনি প্রিয় এ বাংলাদেশে।  তাঁর মতো অন্য কেউ এত ভালোবাসতে পারেনি বাংলাদেশ ও বাংলার মানুষকে। বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল এ দেশ হবে সোনার বাংলা। যেখানে কেউ না খেয়ে থাকবে না, কেউ গৃহীন বস্ত্রহীন থাকবে না।  তাঁর কাছে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ছিল বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ।  

বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় জীবন্ত প্রতীক হলেও মীরজাফরের বংশধররা তাঁকে বাঁচতে দেয়নি। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তৈরি করেছে প্রবল প্রতিবন্ধকতা । তাঁর জীবনভর সংগ্রামে অর্জিত বাংলাদেশের‌ই কতিপয় বেঈমান, ও বিশ্বাসঘাতক নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করেছে।  তাঁর ভালোবাসা ও বিশ্বাসকে অমর্যাদা করে তাঁকে হত্যার মাধ্যমে  বাংলার বুকে সৃষ্টি করেছে নৃসংশতার এক ঘৃণ্য উদাহরণ; যে  ট্টাজেডির শোকগাঁথা বাঙালির হৃদয়ে চির বহমান।  বেঈমানের দল বঙ্গবন্ধুকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে ঘুরেছে দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কিন্তু কিছুই করতে পারেনি, ব্যর্থ হয়েছে তারাই  শেষ পর্যন্ত। বাংলাদেশের আপামর জনগণ এবং বিশ্ববাসীর ভালোবাসায় সিক্ত বঙ্গবন্ধু আজ জীবন্ত হয়ে বেচেঁ রয়েছেন সবার মাঝে, বেঁচে থাকবেন অনন্ত কাল ধরে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর কাছে এক উদাহরণ, রোলমডেল। ষড়যন্ত্রকারী শয়তানের প্রেতাত্মারা নিক্ষিপ্ত হয়েছে আস্তাকুঁড়ে। জ্বলেপুড়ে মরছে তারা অনির্বাণ অন্তরজ্বালায়।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যারমাধ্যমে তাঁর নশ্বর দেহটি বাঙালির কাছ থেকে পৃথক করা হয়েছে মাত্র। দেহটি তাঁর মাটিতে মিশে গেছে। কিন্তু তাঁর চেতনা, আদর্শ দীপ্তমান। তাঁর অর্জিত ফসল  ভোগ আর উপভোগ থেকে তারা বি ত করতে পারেনি দেশের মানুষকে। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর জন্য চিরজাগ্রত, চির উন্নত। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হয়নি, কারণ তিনি মৃতুঞ্জয়ী। তিনি আর ও বেশি জীবিত। এ বাংলার নদীর কলতানে,সাগরের গর্জনে, পাখিদের সুমিষ্ট গানে, চাঁদের কিরণে, বাতাসের শনশন আওয়াজে, আকাশের নীলিমায়, শিশিরভেজা ভোরে, বঙ্গবন্ধ মিশে আছেন। বাঙালির হাসি-কান্নায়, আনন্দ-বেদনায়, বিরহ-মিলনে ও সকল ভালোবাসায় তিনি  দেদীপ্যমান। তিনি বাংলার মধ্য গগণে সূর্যের ন্যায় বিলিয়ে যাচ্ছেন কিরণ।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে পিতার আদর্শের পথে হেঁটে তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে সোনার বাংলা আজ উন্নয়নের চরম শিখরে। পিতার স্বপ্ন-সাধ পূরণে তাঁর‌ই কন্যা বিশ্ব সভায় বাংলাদেশকে পরিণত করেছেন স্বমহিমায় ভাস্বর একটি উন্নত দেশের কাতারে। শেখ হাসিনা অবসান করার শপথ নিয়েছেন সকল অভাব-অনটন, দুঃখ-ব না ও নির্যাতন যন্ত্রনা দূর করার। বঙ্গবন্ধুকন্যা বিশ্ব দরবারে আজ যুগান্তকারী উন্নয়ন যাদুকর। আন্তজার্তিক কূটনীতিতে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে বিস্ময়কর সব সাফল্য। বিশ্ব তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে রয় বাংলাদেশ পানে।

বাঙালি জাতির আধুনিক স্বপ্ন রূপকার, বাংলার চিরজাগ্রত কন্ঠস্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশ আত্মাহীন দেহ। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনত াএনে দিয়েছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্ম দিয়েছেন। বাঙালিজাতিকে তিনি যুদ্ধ করতে শিখিয়েছেন।  তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, নেতৃত্বের বলিষ্ঠতা, মানবিক গুণাবলী ও সাহস বাংলাদেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিজেদের  স্বাধীতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল। আজ বাঙালি স্বাধীন জাতি, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। শুধুই তাঁর কারণে বাংলাদেশ আজ স্বার্থক রাষ্ট্র। একটি আত্মমর্যাদাশীল গৌরবময় রাষ্ট্র।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, বঙ্গবন্ধুর বিরোধীতাকারী একাত্তরের পরাজিত নরাধমরা কিছু কিছু এখনো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে রয়েছে যারা সুযোগ বুঝে ছোবল মারতে চেষ্টা করে। আবার তারা মাথা উঁচিয়ে দেখাতে চেষ্টা করে তাদের কুৎসিত মুখগুলো । এদের সম্পূর্ণ নির্মূল এখনো হয়নি। এদের নির্মূল করতে  দেশপ্রেমিক সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নইলে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ হুমকির মুখে পড়বে। তাই  বঙ্গবন্ধুকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। এ পথে সকলে এগিয়ে যাবো এই হোক ১৫ই আগষ্টের জাতীয় শোক দিবসে আমাদের প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যয়।

 লেখকঃকলামিস্ট-প্রাবন্ধিক।  সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত