বগুড়ায় কৃষকদের সেবায় আধুনিকায়ন
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩, ১১:০৭ | আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:০১
নিয়মিত কৃষি সেবা প্রদানের পাশাপাশি ৫টি বিশেষ কৃষি সেবা হিসেবে ‘প্ল্যান্ট ডক্টর মোবাইল টিম’, ‘ছাদ কৃষি লার্নিং সেন্টার’, ‘ফারমার্স আইটি স্কুল’, ‘ভ্রাম্যমান কৃষি পাঠাগার’ এবং ‘কৃষকের গল্প’ শিরোনামে অনলাইনভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ চালু করেছেন নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবু। প্ল্যান্ট ডক্টর মোবাইল টিমের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ কৃষি সেবা যেমন ফসলের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনে প্রেসক্রিপশন দেওয়া, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও জাত সম্প্রসারণ, কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কে সচেতন করা, নিরাপদ ও জৈব কৃষি উপকরণ প্রদর্শন, কৃষি উদ্যোক্তা গঠন, কৃষি লিফলেট বিতরণসহ আধুনিক ও রপ্তানীমুখি কৃষি গড়ে তোলার কাজ করছেন। প্রতি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্টদিনে একটি ইউনিয়নের কৃষকদের দিনব্যাপী সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার কৃষক-কৃষাণী এই সেবার আওতায় এসেছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জায়গা আবাদের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে সকলকে উৎসাহিত করার জন্য এবং ছাদ কৃষিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস ভবনের ছাদে স্থাপন করা হয়েছে ছাদ কৃষি লার্নিং সেন্টার।
এখানে বিভিন্ন ধরনের দেশী-বিদেশী ফল, ফুল, সবজি ও শোভাবর্ধনকারী গাছ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছের সাথে বাংলা নাম, ইংরেজি নাম ও বিশেষ গুনাগুণ বৈশিষ্ট্যসহ নেমপ্লেট লাগানো রয়েছে। যেখানে একজন দর্শনার্থী একা একা ঘুরে ঘুরেই নানা কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানছেন এবং শিখছেন। এছাড়াও রয়েছে ছাদ কৃষি শুরু করার প্রাথমিক করণীয় এবং প্রাথমিক উপকরণ কর্ণার। যেখানে যেকোনো দর্শনার্থী খুব সহজেই বিভিন্ন উপকরণ সম্পর্কে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান লাভ করতে পারছেন। এছাড়াও পরিত্যক্ত বোতল ও বস্তা ব্যবহার করে খুব সহজেই সেগুলোকে কিভাবে চাষের আওতায় নিয়ে আসা যায় সেই অভিনব প্রযুক্তিগুলোও এখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে। প্রতিদিনই এখানে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, কৃষি সেবাগ্রহীতা ও ছাত্র-ছাত্রীসহ অনেকেই আসছেন। তাঁরা এই সেন্টারটি ঘুরে ঘুরে দেখছেন এবং মুগ্ধ হয়ে নিজেরাও ছাদ কৃষি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এই সেন্টারে ছাদ কৃষির পাশাপাশি মাঠ কৃষিরও নানা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রায় তিন শতাধিক সেবা গ্রহীতা সেন্টারটি পরিদর্শন করেছেন। আইটি সম্পর্কিত কৃষি সেবাগুলো সহজে প্রাপ্তির জন্য নন্দীগ্রামে তাঁর উদ্যোগে চালু হয়েছে ফারমার্স আইটি স্কুল। ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি সেবা কার্যক্রমকে আরো সহজীকরণ করতে কাজ করছে এই স্কুল।
এতে একদিকে কৃষি সেবা পেতে সময় এবং শ্রম কম লাগছে। অপরদিকে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তিও কম হচ্ছে। প্রতি মাসের প্রথম কর্মদিবসে তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক সেশনের মাধ্যমে স্কুলটি পরিচালনা করা হয়। কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন অ্যাপ ডাউনলোড করে কিভাবে সেবা পাওয়া যায় তা দেখানো হচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক কৃষি সেবা যেমন অনলাইনে সার সুপারিশ, হটলাইন নাম্বারে ফোন দেয়া, অনলাইনে কৃষি আবহাওয়া বার্তা, ভিডিও কলিং ও কৃষি ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হওয়াসহ নানা অনলাইনভিত্তিক কৃষি সেবাগুলো এখানে শেখানো হচ্ছে। কৃষির নানা আধুনিক তথ্য এবং প্রযুক্তিগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবুর আরো একটি ভিন্নধর্মী উদ্যোগ ভ্রাম্যমাণ কৃষি পাঠাগার। উপজেলা কৃষি অফিস চত্বরে সপ্তাহে একদিন করে বসে এই কৃষি পাঠাগার। প্রায় ৬ শতাধিক বই এবং পুস্তিকার সমন্বয়ে পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হয়। এই পাঠাগারে বসে বই পড়ার যেমন সুযোগ রয়েছে তেমনি বাড়িতে নিয়ে গিয়েও বই পড়া যাবে। এছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে কৃষিতে আগ্রহী করার জন্য এই ভ্রাম্যমাণ কৃষি পাঠাগারটি বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ক্যাম্পাসে যাচ্ছে এবং তাদের কৃষি বই পড়ায় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে তিনি কৃষি ও কৃষকের অনলাইনভিত্তিক কৃষি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গঠন করেছেন ‘কৃষকের গল্প’ শিরোনামে ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজ। এখানে বিভিন্ন সফল কৃষকের সফলতার গল্পের ভিডিও ডকুমেন্টারি, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, সমসাময়িক কৃষি, প্রশ্নোত্তর পর্বসহ নানা কৃষিবিষয়ক আলোচনা করা হয়। যাতে করে অনলাইন ব্যবহারকারী কৃষি অনুরাগী ব্যক্তিগণ খুব সহজেই তাঁদের কৃষি সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন। এই দুটি মাধ্যমে প্রায় ২১ হাজার ৬শ’র মতো কৃষক এবং কৃষি অনুরাগী মানুষ সরাসরি যুক্ত আছেন। এখানে এখন পর্যন্ত ৮৫টি কৃষি ডকুমেন্টারি রয়েছে। যার মধ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং জৈব কৃষির উপর রয়েছে একাধিক ডকুমেন্টারি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, নিয়মিত কৃষি সেবা প্রদানের পাশাপাশি নতুন এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে কৃষি বিভাগ এবং কৃষক-কৃষাণীদের মাঝে সেবা আদান-প্রদানের এক নিবিড় সংযোগ স্থাপন হয়েছে। কৃষির সাথে সম্পৃক্ত সকল শ্রেণীপেশার মানুষের দৌরগোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছানোর পাশাপাশি আধুনিক, নিরাপদ, বাণিজ্যিক কৃষি গঠন ও কৃষি উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এই উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো।
এছাড়াও বিভাগীয় কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি নন্দীগ্রামের কৃষিতে যুক্ত করে চলেছেন নানা ধরনের নতুন নতুন ফসল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্ট্রবেরী, সৌদী খেজুর, সূর্যমুখী ও অফসিজন তরমুজ। তাঁর হাত ধরেই নন্দীগ্রামে তৈরি হচ্ছে অনেক সফল কৃষি উদ্যোক্তা। এছাড়াও নিরাপদ এবং জৈব সবজি উৎপাদনের জন্য জৈব সার, ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন বেড়েই চলছে। করোনাকালে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য স্থাপন করেছেন পারিবারিক পুষ্টি বাগান। পুকুরপাড়কে কাজে লাগিয়ে আবাদ করা হচ্ছে নানা ধরনের সবজি। এ বছর নন্দীগ্রামে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদসহ আউশের আবাদ সম্প্রসারণ, মরিচ, বেগুন, শশা, লাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, ক্ষীরা ও মিষ্টি কুমড়াসহ নানা ফসলে সমৃদ্ধ হচ্ছে নন্দীগ্রামের কৃষি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবু জানান, উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো কৃষি বিভাগ এবং কৃষকদের মাঝে সেবা আদান-প্রদানের এক নিবিড় সংযোগ স্থাপন হয়েছে। এতে কৃষক-কৃষাণীরা ঘরে বসেই কৃষির নানা সমস্যার সমাধানসহ আপডেট পেয়ে উপকৃত হচ্ছে ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত