ফের ডিম দিয়েছে খানজাহানের দিঘির কুমির, বাড়তি আনন্দ দর্শনার্থীদের

  বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৫ মে ২০২২, ২১:২২ |  আপডেট  : ৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৭

বাগেরহাটে খানজাহান আলীর (রহ) মাজার সংলগ্ন দিঘির কুমির ‘পিলপিল’ আবারও ডিম দিয়েছে। মাজারের পূর্ব ঘাটে বিনা ফকিরের বাড়ি সংলগ্ন পাড়ে গর্তে ডিম দিয়েছে কুমিরটি। এখন সেগুলো তা দিচ্ছে মা কুমির। তবে এই ডিমে বাচ্চা ফোটা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। কারণ বিগত দিনে এই কুমির কয়েকবার ডিম দিলেও একটিও বাচ্চা ফোটেনি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাসখানেক আগে কুমিরটি বিনার ঘাট সংলগ্ন পাড়ে ডিম পেড়ে তা দিয়ে বসেছে। তবে বিষয়টি কয়েক দিন আগে জানতে পেরেছেন মাজারের ফকিরেরা। এবার মা কুমিরটি দিঘির পূর্ব পাড়ে গর্ত খুঁড়ে ৭০টির মতো ডিম পেড়েছে। ওই ডিম ধুলামাটি দিয়ে ঢেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য এখন তা দিচ্ছে কুমিরটি। মাঝে মধ্যে খুব অল্প সময়ের জন্য কুমিরটি দিঘিতে নেমে আবার ফিরে আসছে ডিমে তা দিতে। কুমির ডিম পাড়ার খবরে দর্শনার্থীও বেড়েছে মাজারে। দর্শনার্থী কেউ কাছে গেলেই তেড়ে আসছে কুমিরটি। কুমিরটির অবস্থানেরআশপাশ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছেন মাজারের খাদেমরা।

কুমির দেখতে আসা ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার জান্নাতুল ফেরদাউস মম বলেন, ‘ছোট বেলা থেকে বাগেরহাটের খানজাহান আলীর (রহ) মাজার ও দিঘির গল্প শুনেছি। দিঘির কুমির দেখার খুব শখ ছিল আমার। আজ স্বচক্ষে দেখলাম, খুব ভালো লাগছে। তবে কুমিরের ডিমগুলো দেখতে পারলে আরও ভালো লাগত।’

ইব্রাহিম ইসলাম নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘মাজারে অনেকবার এসেছি। কিন্তু কুমিরের দেখা মেলেনি। ডিম পাড়ার সুবাদে আজ কুমিরটিকে দেখলাম। খুশি হয়েছি। আমার সঙ্গে যারা রয়েছে তারাও খুশি হয়েছে।’

বিনা ফকির বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে কুমিরটি ডিম পেড়েছে। এবার মনে হয় ৫০ থেকে ৬০টি ডিম দিয়েছে। তিন মাস এখানে থাকবে। ডাঙ্গায়ই খাবার দিতে হয়। মুরগির গোশ পিস পিস করে দেই, তাই ও খায়। পানিতে ওর কোনো খাবার নেই। তবে এত কষ্ট করে ও ডিমে তা দেয়, কিন্তু ডিম দিয়ে কোনো বাচ্চা ফুটে বের হয় না। এটার জন্য আমার খারাপ লাগে।’

বিনা ফকির আরও বলেন, ‘মা কুমিরটি যখন এখানে এসে ডিম পাড়ে পুরুষ কুমিরটিও তখন ওর কাছাকাছি থাকে। কখনো মাটির ওপরে আসে না। তবে দিঘির মধ্যেই সে থাকে।’

খানজাহান আলী (রহ.) মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির বলেন, ‘খানজাহান আলী (রহ) দিঘির পানি র¶ার জন্য কুমির লালন পালন করতেন। ছয়শ বছরের বেশি সময় ধরে খানজাহান আলী (রহ) লালনকৃত কুমিরের বংশধর এই দিঘিতে ছিল। কিন্তু সেই কুমিরগুলো এখন আর বেঁচে নেই। মাদ্রাজ থেকে আনা এই কুমিরটি কয়েক বছর ধরে ডিম পাড়লেও তাতে বাচ্চা ফুটছে না। কুমিরের বংশবৃদ্ধি না হলে দিঘিটি তার সাড়ে ছয়শ বছরের ঐতিহ্য হারাবে। তাই দিঘিতে কুমিরের বংশবৃদ্ধি ও সংর¶ণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

খানজাহান জাহান আলীর (রহ.) আমল থেকে এই দিঘিতে ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’ নামে মিঠাপানির কুমির (মার্স ক্রোকোডাইল) বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে। তবে সেই কুমিরের শেষ বংশধরটিও মারা গেছে। ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ফার্ম থেকে মিঠা পানির ছয়টি কুমির এনে দিঘিতে ছাড়া হয়।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত