প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি 

  বিভুরঞ্জন সরকার

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩১ |  আপডেট  : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৬

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা,
আপনার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে সবিনয়ে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে দুচারটি কথা নিবেদন করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সবই জানেন এবং বোঝেন। কারণ আপনি শাসক নন, আপনি দেশহিতৈষী, মানবকল্যাণব্রতী। আপনি দরদি, আপনি হৃদয়বান। আমি জানি দেশের কোথাও দুঃখজনক ও খারাপ কিছু ঘটলে, অন্যায় ও মানবতার অপমান হলে আপনার হৃদয়েও গভীর রক্তক্ষরণ হয় । 

তাই আপনার কাছে বিনীত আরজ, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অন্যায়কারীদের আপনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
আপনিই আজ বাংলাদেশ। আপনি আমাদের অগ্রগামী বাংলাদেশের রূপকার, পথপদর্শক। 

আপনি যা পারেন, যা পারবেন আর কেউ তা পারে না, পারবে না। তাই সব কিছুতেই আমাদের আপনার ওপর ভরসা, আপনার ওপর নির্ভরতা। 

আপনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্ভব করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আপনি দেখিয়েছেন আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে সব কিছুই করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মোড়লদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পদ্মাসেতু নির্মাণ করে আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন, আত্মপ্রত্যয় থাকলে কি না করা যায়। 

নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়নে আপনার অবদান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং প্রশংসিত। অথচ আপনার সময়েই একের পর এক ভয়াবহ সব নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এসব ঘটনা আপনার ভাবমূর্তিতে কালি লেপে দিচ্ছে। তাই নারী নির্যাতকদের বিরুদ্ধে আপনাকে কঠোর হতে হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া চলবে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তানি অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ফলে। বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি হবে না, সব ধর্মবিশ্বাসী মানুষ সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করবে- এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর অঙ্গীকার। পাকিস্তানকে পরাজিত করে আমাদের মনোজগতে পাকিস্তানি উপনিবেশ তৈরি নিশ্চয়ই আমরা করতে চাইনি। অথচ কি সব হচ্ছে আজ বাংলাদেশে। 

রামুতে উত্তম বড়ুয়া, নাসিরনগরে রসরাজ, ভোলায় বিপ্লব বৈদ্য, গঙ্গাচড়ায় টিটু রায়, বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে যে উন্মত্ততা, উন্মাদনা ছড়ানো হলো, তা কি প্রত্যাশিত ছিল? মিথ্যা রটিয়ে, গুজব ছড়িয়ে শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্ট করার দায়ে কেন একজনকেও শাস্তি দেওয়া গেল না? কোথায় দুর্বলতা, কার দুর্বলতা? স্বার্থ, সুবিধা, সাম্প্রদায়িকতা যে হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে তা বোঝার জন্য কি বড় কোনো গবেষণার প্রয়োজন আছে? কিছু সময়ের বিরতি দিয়ে ঘটনাগুলো ঘটছে, অনবরত ঘটছে। কিন্তু প্রতিকার হচ্ছে না। 

ক্ষতিকর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা থেকে দূরে আছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। অথচ এখনো আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছুই জানে না। একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম বলতে পারে না, স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারের পার্থক্য বোঝে না, জাতীয় চার নেতার নাম জানে না, স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না - এমন প্রজন্ম দেশকে কোন উচ্চতায় নেবে? 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের আজ কি হাল! আওয়ামী লীগ কি মানুষের প্রয়োজনে মানুষের পাশে আছে? থাকলে দেশে এতসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে কীভাবে? 

আজ তাই আপনাকে আওয়ামী লীগেও শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। দলে অনেক আবর্জনা ঢুকে গেছে। জঞ্জাল সাফ না করলে আপনার সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। ভাঙ্গা বা অচল গাড়ির চেয়ে খালি গ্যারেজ ভালো। শক্ত হাতে দলে পরিচ্ছন্নতা অভিযান না চালালে আপনাকেই বারবার বিব্রত হতে হবে। 

সামাজিক অনাচার, দুর্নীতি, দুষ্কর্মের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার খবর গণমাধ্যমে এলে তাদের প্রশ্রয় না দিয়ে ধরুন। দল থেকে বহিষ্কার করুন। এদের প্রতি অনুকম্পা দেখালে 'দুষ্টু'দের আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

মাননীয় নেত্রী, মানুষের সব আশাভরসার কেন্দ্রস্থল আপনি। আওয়ামী লীগ এবং আপনি অবশ্যই অবিভাজ্য। তবে এটাও ঠিক যে, আপনি এখন আওয়ামী লীগের চেয়ে এগিয়ে। আপনার সঙ্গে তাল মেলানোর উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে আওয়ামী লীগকে। নেতৃত্ব ও মন্ত্রীত্বকে যেন কেউ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভেবে অনাচারে অভ্যস্ত হয় না ওঠে সেজন্য মাঝে মাঝে রদবদল আনা প্রয়োজন। কাউকে জবাবদিহিতার বাইরে রাখলে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে পারে। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উচ্চ নৈতিকতারও অধিকারী হতে হবে। নৈতিকতার চরম অবক্ষয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কালো পর্দায় ঢেকে দেবে। সোনার বাংলার জন্য সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে। আমাদের হেরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের জিততেই হবে। আপনার নেতৃত্ব বাঙালিকে নতুন নতুন বিজয় উপহার দেবে।

দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে আপনার কঠোর মনোভাব গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

আপনার সুস্বাস্থ্য ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।

শ্রদ্ধাসহ -- 
বিভুরঞ্জন সরকার
ঢাকা

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত