নতুন প্রজন্মের কাছে ‘মহুয়া গাছ’ এখন শুধুই গল্প

  মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম (উজ্জল)

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৩, ১৭:২৩ |  আপডেট  : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:৪৯

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘মহুয়া’গাছ । ৯০ এর দশকেও মহুয়া গাছ বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়তো। এখন আর তেমন দেখা যায় না। মহুয়া গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এই ফলের মনোমুগ্ধকর গন্ধেই জানান দিত এখানে মহুয়া গাছ আছে। গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা মহুয়া গাছে উঠে মহুয়া ফল সংগ্রহ করে মালা গেঁথে গলায় ঝুলিয়ে ঘুঁড়ে বেড়াতো আর এই ফল খেত। যা এখন আর এ অঞ্চলে চোখে পড়েনা। মহুয়া গাছ এখন স্মৃতি বিলাপ মাত্র। নতুন প্রজন্মের কাছে মহুয়া গাছ এখন শুধুই গল্প। 

উপজেলার সদরের তালসন গ্রামের পলাশ বকশি শখের বসে একটি মহুয়া গাছ লাগিয়ে পূর্বের স্মৃতি আগলে রেখেছে। বর্তমানে তার মহুয়াস গাছে ফুল ধরেছে। পলাশ বকশি জানায়, এই প্রজন্মের কাছে মহুয়া গাছ ও ফল একেবারেই অচেনা হয়ে গেছে। তাই আমি প্রায় ২০ বছর আগে একটা গাছ লাগিয়েছি যাতে করে আধুনিক এই যুগের ছেলে-মেয়ে সহ এলাকার সবাই যেন এ গাছ ও ফলের সাথে পরিচিত হতে পারে। তিনি আরোও জানান, একটা সময় ছিল যখন মহুয়া ফুলের তীব্র সুগন্ধে দূর থেকে উড়ে আসত নানা জাতের ও নানা বর্ণের পাখি। উতলা হয়ে কিচিরমিচির করত গাছের শাখায় বসে। উড়ে বেড়াত গাছের চার ধারে। সেই মহুয়া গাছ আজ আর সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। পলাশ বকশির মামা বাদল মৈত্র বলেন, ছেলে বেলায় মহুয়ার ফুল দেখেছি, স্বাদে বেশ মিষ্টি এই ফুলের রস। মৌমাছিরা উড়ে আসত মহুয়ার গাছে। মহুয়া ফুলের পাপড়ির এতটাই সুগন্ধ যে গাছতলায় শিয়াল এসে আনন্দে সুর করে ডাকতো।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, মহুয়া গাছের আর্বিভাব ভারত বর্ষে। এই মহুয়া গাছ প্রায় ৪০-৫০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা বিশিষ্ট একটি বৃক্ষ। এর পাতা মোটা লেদারি। সুগন্ধযুক্ত শাখার মাথায় গুচ্ছাকারে ফোটে, ফুলের রং লাল আর ফুলের রং কিছুটা হলুদ বর্ণের। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বলে মহুয়া ফল এ অঞ্চলের মানুষদের কাছে এক সময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। তবে এলাকা ভেদে এর নাম মহুয়া, মধুকা, মোহা, মোভা ও মহুভা নামেও বেশ পরিচিতি। মূলত ট্রপিক্যাল এরিয়া অর্থাৎ যে অঞ্চলে উষ্ণতা ও বৃষ্টি আছে সেখানেই বেড়ে ওঠে উঁচু এই গাছটি। বাংলাদেশের উঁচু অঞ্চলে এই গাছের দেখা এখনো মেলে। 

দেশের অনেক এলাকায় ভাতকে সুস্বাদু ও গন্ধযুক্ত করতে রান্নার সময় মহুয়া ফুল দেয়ার রেওয়াজও ছিল। চৈত্র মাসের শেষের দিক থেকে শুরু হয়ে বৈশাখ মাস জুড়ে পাওয়া যেত এই ‘মহুয়া’ ফল। উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, আমরা চেষ্টা করছি কোন এলাকায় যদি এই গাছের সন্ধান পাওয়া যায় আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করবো এর রক্ষনাবেক্ষন করতে এবং এ থেকে নতুন চারা তৈরি করে বেশি বেশি করে রাস্তার ধারে, খালের পাড়ে রোপন করতে। তিনি আরো বলেন, মহুয়া ফুলের ঔষধি গুণাগুণ প্রচুর। মহুয়ার তেল মাথার যন্ত্রণা উপশম করে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত