‘জিয়ার সৈনিক এক হও’ বলে এনসিপির শ্রমিক সমাবেশে হামলা, আহত ১০

  বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৯ |  আপডেট  : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪১

বাগেরহাটের মোংলায় এনসিপির শ্রমিক সমাবেশ বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের নিয়ে এনসিপির নেতারা সমাবেশ স্থলে পৌঁছানোর আগেই তাদের ওপর হামলা হয়। এতে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায় ও নারী নেত্রীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল পৌনে ৬টায় পৌর শহরের শাহাদাৎ মোড় চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের সমর্থিত স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে এ সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। এসময় তাদের ওপর হামলা হলে শেষ পর্যন্ত সমাবেশ স্থলে না গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। হামলায় এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের এক নারী নেত্রীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা রাত সাড়ে ৮টায় মোংলা ত্যাগ করেন।

এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও’ স্লোগান দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুষ্কৃতকারীরা তাদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় এনসিপির শ্রমিক উইং মোংলা বন্দরে জাহাজে কর্মরত মজুরিভিত্তিক শ্রমিকদের নিয়ে পূর্ব ঘোষিত শ্রমিক সংঘ চত্বরে (মাঠে) মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের তলবি সাধারণ সভার ঘোষণা দেয়। কিন্তু এনসিপির নেতারা বিলম্বে এলে পৌনে ৬টায় সমাবেশ স্থলের দিকে যাত্রা করেন। শ্রমিক সংঘ সংলগ্ন শাহাদাৎ মোড়ে পৌঁছালে তাদের যাত্রা রোধ করে সেখানে আগে থেকে জড়ো হওয়া শ্রমিকদের একাংশ ও বিএনপি সমর্থকরা। তাদের কর্তৃক হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।

এর আগে সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে শ্রমিক সংঘ চত্বরে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশস্থল দেখতে গিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও শ্রমিক উইংয়ের স্থানীয় নেতা মো. তিতুমীর চোকদারসহ ৩-৪ জন হামলা ও মারধরের শিকার শিকার হন। এ ঘটনায় মোংলা বন্দরে শ্রমিক সংগঠন দখল নিয়ে বিএনপি ও এনসিপি মুখোমুখি অবস্থান নেয়।

এনসিপির এ কর্মসূচির প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে মোংলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক নেতারা। এসময় লিখিত বক্তব্যে নিজেদের অবস্থান ব্যাখা করেন তারা। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, পতিত আ’লীগের দোসর চক্র এনসিপির ওপর ভর করে মোংলা সমুদ্রবন্দরে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাগেরহাট জেলা যুবদলের সদস্য ও মোংলা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মো. আলাউদ্দিন নিজেকে মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের সভাপতি দাবি করে বলেন, বিগত ১৭ বছর আ’লীগ সমর্থক শ্রমিক নেতারা সাধারণ শ্রমিকদের জিম্মিসহ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। একইসঙ্গে এনসিপি সমর্থিত শ্রমিক নেতা তিতুমীরকে আ’লীগের দোসর হিসেবে উল্লেখ করেন।

বিএনপির এ সংবাদ সম্মেলন, ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভ মিছিল ও মঙ্গলবার বিকেলে মোংলায় শ্রমিক উইংয়ের সমাবেশ ঘিরে দুপুর থেকে শহর জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিকাল ৩টা থেকে শ্রমিক সংঘ চত্বর ও আশপাশে পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়। শহরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

অপরদিকে দুপুর থেকে মোংলা শহরের বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকদের একাংশের বিক্ষোভ মিছিল ও মহড়ায় শহর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাচীর ভেদ করে শ্রমিকদের কোনো পক্ষ সভাস্থালে পৌঁছাতে পারেনি।

এ বিষয়ে এনসিপির শ্রমিক উ্ইংয়ের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়কারী মোশারফ হোসেন স্বপন অভিযোগ করে বলেন, বিগত আ’লীগ আমলে বন্দরের শ্রমিক সংগঠন অকার্যকর রেখে সাধারণ শ্রমিকদের ওপর জুলুম করা হয়েছিল। এ সংগঠনের নির্বাচন ও তলবি সাধারণ সভায় অতিথি হিসেবে তিনি ও কেন্দ্রীয় নারী নেত্রীসহ আট নেতা যোগ দিতে এসেছিলেন। কিন্তু তাদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা জিয়ার সৈনিক হিসেবে স্লোগান দিয়ে এ হামলায় অংশ নেয়।

তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ও শ্রমিক উইং কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন।

এ বিষয়ে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে শ্রমিকদের দু’গ্রুপের মধ্যে হামলা ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। তবে কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ করেনি।

অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, পৌর শহরের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের মঙ্গলবার রাতে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘ (রেজি নং-২১৪৩) শাব্দিক অর্থে মোংলা বন্দরের শ্রমিক মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি একটি স্টিভেডর নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক দ্বারা পরিচালিত সংগঠন। এই শ্রমিকগণ স্টিভেডরদের নিয়ন্ত্রণে বন্দরে আগত সব বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস-বোঝাইয়ের কাজ করে থাকে। মোংলা বন্দরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্টিভেডরগণ এসব শ্রমিকদের নিয়োগ, পরিচালনা ও সকল পাওনাদি পরিশোধ করে থাকেন। মোংলা বন্দর কোনো শ্রমিক নিয়োগ বা পরিচালনা করে না। মোংলা বন্দরের শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি মূলত স্টিভেডর শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ।

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত