কাউনিয়ায় তিস্তার চরে
শৌচাগার ও সুপেয় পানির সমস্যা, নারী শ্রমিক বৈষম্যর শিকার

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৩৪ | আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০০:৫২

পৃথিবীতে যা কিছু কল্যানকর, অর্ধেক করিয়াছে নারী আর অর্ধেক তার নর। কিন্তু কাউনিয়ায় তিস্তার চরে সেই নারী শ্রমিকরাই আজ অবহেলিত। কাজ করতে গিয়ে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে যে নারী শ্রমিকরা ফসল ফলায় সেই নারী শ্রমিকদের জন্য চরে নেই কোন শৌচাগার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। কৃষি জমির মালিকগণ নারী শ্রমিকের শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করে না। প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে নারী শ্রমিকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সরেজমিনে তিস্তার বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে চরে কাজ করা নারী শ্রমিকদের ভোগান্তির নানা চিত্র। কথা হয় নারী শ্রমিক রহিমা বেওয়া, তালাক প্রাপ্ত মর্জিনাসহ কয়েক জনের সাথে। তারা জানান নারীর শ্রমের কোনো স্বীকৃতি নেই বললেই চলে। সংসারে একটু সুখের আশায় পেটের দায়ে নারীদের নিজ ঘরে শ্রম দেওয়ার পরে তিস্তার চরে কৃষি জমিতে গিয়ে শ্রম বিক্রি করেন তারা। সেখানেও পুরুষের তুলনায় তারা পায় কম মজুরী। অশিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত নারী শ্রমিকের শ্রমকে কাজে লাগিয়ে তিস্তার চরে অনেকেই বিভিন্ন ফসলের প্রজেক্ট করেন কিন্তু তাদের সমস্যার কথা কখনও বিবেচনা করা হয় না। তিস্তার চরে আলু তুলতে আসা নারী শ্রমিক খাদিজা, খোতে, বিলকিস এর সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে তড়িঘড়ি করে উঠেন তারা। এরপর ঘরের কাজের পাশাপাশি রান্নার কাজ শেষ করেন। তারপর বাড়ির সকলের খাওয়ার ব্যবস্থা করে এবং নিজের খাবার পোটলায় বেঁধে বেরিয়ে পড়েন তিস্তার চরে কাজের উদ্দেশ্যে। আর বাড়ি ফিরেন সেই সন্ধ্যায়। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত কাজ চরের জমিতে কাজ করলেও সেখানে নেই মিষ্টি ও সুপেয় পানি আর শৌচাগার। এই সমস্যা এলাকার প্রতিটি চরে প্রতিদিনের সমস্যা হলেও ব্যাক্তিগত বা সরকারী কৃষি বিভাগের নজরে আসেনি। চরে পুরুষ শ্রমিক প্রাকৃতিক ডাক সারতে পারলেও বিপাকে পড়েতে হয় নারী শ্রমিকদের। চরে নারী শ্রমিকদের শিশুদের দুধ খাওয়ান সহ নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। কাউনিয়ায় নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য নিত্যদিনের। তিস্তার চরে কৃষি জমিতে নারী-পুরুষ উভয়েই কাজ করেন। সেখানে অনেক পুরুষকর্মীদের বেতন নারী কর্মীদের দ্বিগুণ। অনেক নারী শ্রমিক স্বামী কর্তৃক নিগৃহ হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করেন। জীবন বাঁচাতে চরে এসে কাজ করছেন। নারী শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্যর শিকার হলেও এর বিরুদ্ধে তারা কোনো প্রতিবাদ করে না। নারী শ্রমিক নিয়ে সরকারের নানা দপ্তরের কার্যক্রম বেশ হতাশাব্যঞ্জক। প্রকৃত অর্থেই নারীকে দেশ, সরকার, প্রতিষ্ঠান, পরিবার-সব কিছুর বাধা ঠেলে এগোতে হয়। তবে এ কথাও মানতে হবে, অবস্থার পরিবর্তনও হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আকতার তিস্তার চরে নারী শ্রমিকদের সমস্যার বিষয়ে বলেন, এটি আসলেই কষ্ট দায়ক। তিনি বড় আকারে প্রজেক্ট করা চাষিদের নারীদের জন্য অস্থায়ী শৌচাগার নির্মানের জন্য বলেছেন। দু একজন ঘর দিয়ে তৈরী করেছেন। তিস্তার চরের নারী শ্রমিকদের দাবী সরকারী ভাবে তিস্তার চরে নারী শ্রমিকদের জন্য অস্থায়ী শৌচাগার নির্মানের।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত