জাতীয় বাজেট ২০২১-২২

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৪ জুন ২০২১, ১৪:০৯ |  আপডেট  : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯

২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে গতকাল ৩ জুন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে তার বাজেট বক্তৃতায় দুইশ পৃষ্ঠার এ বাজেট উপস্থাপন করেন। এখন এ ঘোষিত বাজেটের ওপর সংসদ সদস্যগণ আলোচনা করার পর তা গৃহিত হবে এবং আগামী ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হবে। সংসদে আলোচনা-সমালোচনার পরে হয়তো বাজেটের অনেক সংশোধনী আসবে। তবে তার আগেই বাজেট নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা শুরু হয়ে গেছে। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয় আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। গতানুগতিক ধারা মোতাবেক সরকারি দল বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে। আর বিরোধী দলের নেতারা বাজেটকে সমালোচনা করে জনকল্যাণমুখী নয় বলে অভিহিত করেছেন। কোনো কোনো বিরোধী দল ঘোষিত বাজেটকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যানের কথাও জানিয়েছে। তবে, এটা সর্বজনবিদিত যে, এসব প্রত্যাখ্যানের কোনো কার্যকারিতা নেই। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সরকার জাতীয় সংসদে ঘোষিত বাজেটকে অনায়াশেই পাশ করিয়ে নিতে সক্ষম হবে। 

আকারের দিক থেকে এবারের বাজেট বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। আর পঞ্চাশ বছর পরে সে বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকায়। এটা নিশ্চয়ই আমাদের জন্য আত্মশ্লাঘার বিষয়। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যে এখন অনেক অগ্রসর এবং একটি শক্ত অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। 

নতুন বাজেটের প্রতিক্রিয়া বাজারে পড়াটা স্বাভাবিক। এবারও তাই হবে। শুল্ক আরোপ এবং প্রত্যাহারের কারণে কিছু পণ্যের দাম যেমন বাড়বে, তেমনি কিছু পণ্যের দাম কমবে। যদিও আমাদের দেশে পণ্যেরে দাম উঠা-নামার ক্ষেত্রে করারোপ বা প্রত্যাহারের চেয়ে ফড়িয়া-ব্যবসায়ীদের মর্জি অনেক বেশি প্রভাব রাখে। 

এবারেরে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ৩২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং জরুরি প্রয়োজনে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে আরো দশ হাজার কোটি টাকা। করোনা মোকাবিলার লক্ষ্যে এ বারাদ্দ- একথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। দেশের আশি শতাংশ মানুষকে এ বছর করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে। তবে, অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, শুধু লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণাই যথেষ্ট নয়, তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষত আমাদের স্বাস্থ্য খাতে যেসব অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেছে এবং এখনো ঘটছে, সেসব বিষয় মাথায় রেখে ঘোষিত বাজেট কার্যকর করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়াই হবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কাজ। 

বাজেটে আয় দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা, মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ঘাটিেত ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ঘাটতির এ টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস এবং বৈদশিক ঋণ ও অনুদান থেকে মেটানো হবে। অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৮.৮ শতাংশ এবং বিদেশি ঋণ প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। কেউ কেউ ব্যয়ের ৪৫ শতাংশ ঋণ থেকে আহরণের বিষয়টিকে ‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ সাথেই তুলনা করছেন। তদের মতে করোনার এই সংকটের সময়ে এই বিশাল আকৃতির বাজেট ঘোষণা না করে বাস্তবায়নযোগ্য একটি সুসম বাজেট দেয়াই ছিল যুক্তিযুক্ত। কেননা, গত অর্থ বছরের আভিজ্ঞতায় দেখা যায়, অনেক খাতেই ঘোষিত বাজেটের অর্ধাংশ খরচ হয়নি। অনেক প্রকল্প অসমাপ্ত রয়ে গেছে। বিশাল বাজেট ঘোষণা করে জাতিকে বৈদেশিক ঋণের জালে আবদ্ধ করাকে কেউ কেউ হটকারী চিন্তাভাবনার ফসল বলেও মনে করছেন। তবে, এ বাজেটের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ১২ হাজার থেকে ২০ হাজারে উন্নীত করা। এজন্য সরকার অবশ্যই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। 

আমরা মনে করি, ঘোষণার চেয়ে বাস্তবায়ন অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ঘোষিত বাজেটকে পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে- এ প্রত্যাশা সবার মতো আমাদেরও। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত