জম্মু-কাশ্মীরে গত পাঁচ বছরে আর্থিক বিনিয়োগ অর্ধেকের বেশি কমেছে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:০৯ |  আপডেট  : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:২৪

ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে গত পাঁচ বছরে আর্থিক বিনিয়োগ অর্ধেকের বেশি কমেছে বলে জানিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৭-১৮ সালে জম্মু-কাশ্মীরে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট বিনিয়োগ হয়েছিল ৮৪০ কোটি ৫৫ লাখ রুপি। সেখানে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে ৩৭৬ কোটি ৭৬ লাখ রুপি হয়েছে। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে বিনিয়োগ কমেছে ৪৬৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা (৫৫ শতাংশ)। ভারতের লোকসভায় এই তথ্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই।

১৩ ডিসেম্বর লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে গত পাঁচ বছরে জম্মু-কাশ্মীরে বিনিয়োগ কমার হিসাব দেন নিত্যানন্দ রাই। তিনি জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতিবছর বিনিয়োগ কমছে জম্মু-কাশ্মীরে। এই অঞ্চলে বিনিয়োগ কমা শুরু হয় ২০১৮-১৯ সালে। আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৫০ কোটি রুপি বিনিয়োগ কমে যায়।

২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়। একটি জম্মু-কাশ্মীর এবং অপরটি ওই রাজ্য ভেঙে গঠন করা পার্বত্য অঞ্চল লাদাখ।

যে বছরে জম্মু-কাশ্মীর দুই টুকরা হয়, সেই ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯৬ কোটি ৬৪ লাখ রুপি। ২০২০-২১ সালে এই বিনিয়োগ বেড়ে হয় ৪১২ কোটি ৭৪ লাখ রুপি। কিন্তু ২০২১-২২ সালে আবারও বিনিয়োগ কমে ৩৭৬ কোটি ৭৬ লাখ রুপি হয়। জম্মু-কাশ্মীর ভেঙে যাওয়ার পরে রাজ্যের আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র লাদাখ রাজ্য বেরিয়ে যাওয়ার ফলে বিনিয়োগ কমে গেছে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে ২০১৭ থেকে কেন ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ কমছে, তার কোনো ব্যাখ্যা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দেননি।

কাশ্মীরে বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা সংসদ সদস্যের তিনজনই ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য। রামাপতি রাম ত্রিপাঠী ও ব্রিজভূষণ শরন সিং উত্তর প্রদেশ থেকে নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় গেছেন। পূর্ব ভারতের ওডিশা থেকে নির্বাচিত হয়ে গেছেন প্রতাপচন্দ্র সারেঙ্গী। সারেঙ্গী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘেরও একজন দীর্ঘদিনের কর্মী। এঁরাই জম্মু-কাশ্মীরে বিনিয়োগ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান। নিজের দলের সংসদদের প্রশ্নের উত্তরে নিত্যানন্দ রাই লোকসভায় জানান, জম্মু-কাশ্মীরে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে।

নিত্যানন্দ রাই বলেন, শিল্পের জন্য জমি বণ্টনব্যবস্থার সংস্কার করার পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির শিল্পনীতি ২০২১ সালে পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক অনুদান বা রাতে জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিমান চালানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আরও একগুচ্ছ নীতি বাস্তবায়িত করা হয়েছে বলে জানালেও সেই সব নীতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কিছুই জানাননি রাই।

অবশ্য সাবেক জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের একজন মুখ্য সচিব বলেন, বিনিয়োগ কমার মূল কারণটি এড়িয়ে গেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মুখ্য সচিব বলেন, জম্মু-কাশ্মীরে ধারাবাহিকভাবে মানুষের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষই মারা যাচ্ছেন। সন্ত্রাসী হামলা কমেনি, অতীতের তুলনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত ও শঙ্কিত করেছে। তাঁরা জম্মু-কাশ্মীরে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন।

নিত্যানন্দ রাই অবশ্য বলেছেন, জম্মু-কাশ্মীর সরকার এখনো পর্যন্ত ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে। রাজ্যের প্রশাসন কেন্দ্র সরকারকে এমন তথ্যই জানিয়েছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছিল, জম্মু-কাশ্মীর এক বছরে ৫২ হাজার ১৫৫ কোটি রুপি বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে। ভারতের মোটামুটি সব পত্রপত্রিকাই জানিয়েছিল, গত কয়েক বছরে জম্মু-কাশ্মীরে ৫০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। এখন সরকারি বিবৃতি থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত বিনিয়োগ প্রস্তাবিত বিনিয়োগের ধারেকাছেও নেই, বরং বিনিয়োগের পরিমাণ কমছে। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত