পঞ্চগড়ে ফরহাদ মজাহার
চব্বিশের আন্দোলন সংগ্রামে জয়ী হলেও আমরা এখনো ফ্যাসিস্ট সংবিধানে রয়ে গেছি

প্রকাশ: ১ মে ২০২৫, ১৯:৪২ | আপডেট : ২ মে ২০২৫, ০০:৫০

কবি ,চিন্তাবিদ , দার্শনিক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজাহার বলেছেন ৭২’র সংবিধান বাতিল করতে হবে। ওই সংবিধান মতে আওয়ামীলীগ এখনো ক্ষমতায় রয়ে গেছে।বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাতে পঞ্চগড় পঞ্চগড় সরকারী অডিটোরিয়ামে প্রাণ প্রকৃতি , পরিবেশ ও সাংষ্কৃতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আয়োজিত শিক্ষা ও সাংষ্কৃতিক চেতনায় নতুন গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ আকাঙ্খা: রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সমাজ যখনি কোন উৎসবে অংশগ্রহণ করে সেটা তখনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপ নেয়। গণতান্ত্রিক উপলব্ধিকে শানিত করে। আর এটা যখনি শানিত হয় তখনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সত্য হিসেবে সেটা কাজ করে। এই দুটা করতে হলে মতবাদ থেকে আমাদের চিন্তা করতে শিখতে হবে। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে ভাবতে হবে। দেশে বাঙালি জাতিবাদ নাই? কিন্তু আরেকটা জাতিবাদ আসছে। সেটা হচ্ছে ইসলামী জাতিবাদ। যারা মনে করে মুসলিম জাতি ছাড়া সকলেই আমার শত্রু। তাই বলবো ইসলামী জাতিবাদের কোন স্থান নেই। এই জাতিবাদের মধ্যে ঢুকলে আমরা বাঙ্গালী ও ইসলামী জাতিবাদের মধ্যে আমরা একটা গৃহযুদ্ধে পড়ে যাবো। তাই আমি আপনাদেরকে সতর্ক হতে বলছি। এই বয়সে সবাইকে সাবধান করে যাচ্ছি। দেশকে বিভক্ত করবেন না। ভাববেন না যে বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা এখন নাই। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় নাই- চলে গেছে তাই আমাদের বাঙ্গালি জাতিবাদ চলে গেছে। এটা ভুল ধারণা। তাই আমাদেরকে কথা বলতে হবে, আমাদের মতবাদ পরিত্যাগ করতে হবে। মতবাদ পরিত্যাগ করে আমাদের বুঝতে হবে যে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য আমরা লড়াই করেছি। এই বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি সেই লড়াইয়ে যেটা পাকিস্তানী শাসকরা আমাদের শুনেনি। তারা আমাদেরকে ৭১ এ ঘৃণ একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। একটা হত্যাকান্ড করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ৭১ কে যদি আমরা মুছে দিতে চাই এটা মারাত্বক ভুল করবো। এবং যদি মুছে দিতে না চাই, তাহলে মনে রাখতে হবে যে বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি এটা আমার সংস্কৃতি। তাই আপনি যে পন্থির লোক হননা কেন। ৭১ নিয়ে কোন দেনদরবার চলবে না। ৭১ আমার ইতিহাসের অংশ। আমি বাংলা ভাষি, বাংলা আমার সংস্কৃতি এবং একি সঙ্গে ইসলাম আমার ধর্ম। যেমন আমাকে ইসলাম থেকে আপনারা বঞ্চিত করতে পারবে না। আমার বাংলা ভাষা ও আমার সংস্কৃতি থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। দয়া করে এই বিভাজন আর রাখবেন না। এই বিভাজন যদি রাখেন আমরা আরেকবার গৃহযুদ্ধের মধ্যে চলে যাবো। এই যুদ্ধে যদি জড়াতে চাই, তাহলে আমাকে শিক্ষা লাগবে স্বাধীনতা লাগবে। যারা অতিতে ভুল করেছে, তাদের ভুলটা যদি তারা স্বীকার করে। তাদের যদি অনুশোচনা আসে। এই ভুল যদি কাটিয়ে উঠতে চাই তাহলে মনে রাখতে হবে ৭১ এ আমরা ভুল করি নাই।
তিনি আরো বলেন, ২৪ এর আন্দোলনের এই সংগ্রামে আমরা জয়ী হলাম। তবে অল্প একটু বাদ পড়েছে। পূর্ণ বিজয় হয় নি। কারণ আমরা এই বিজয়টাকে ঢুকিয়ে ফেলেছি ফ্যাসিস্ট সংবিধানে। আমরা আবারো ঢুকিয়ে পড়লাম পুরনো সংবিধানে। আমরা একটা নতুন সরকার গঠন করলাম পুরনো ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধিনে। ফলে আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায়। আমরা আওয়ামী লীগকে উৎখান করতে পারিনি। আওয়ামী লীগ এখনো সেই ৭২ এর সংবিধানে রয়ে গেছে।ছাত্ররা যখন একটি নতুন ঘোষণা দিতে চেয়েছে, সেই নতুন ঘোষণা দিতে দেন নাই ড. ইউনুস। এটা তিনি ঠিক করেন নাই। দেরি হবার আগেই আপনি (ড. ইউনুস) অবশ্যই যে ঘোষণা দেবার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছেন সেই ঘোষণার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিতে হবে।আগামী দিনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষা ও সংস্কৃতির গুরুত্ব রয়েছে বলে জানিয়ে বলেন, বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে কাজ করলে বিরোধ আর বিভাজন দেশকে একটা গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে। তাই অপূর্ণতা আর বিরোধ মিমাংসা করে নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে যেতে হবে। পরে একক বক্তৃতা শেষে উপস্থিত দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার।অনুষ্ঠানে সরকার হায়দারের সঞ্চালনায় লেখক গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক- শিক্ষার্থী, পরিবেশ প্রেমী ও সাংস্কৃতিক কর্মী সহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত