একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা আলোকচিত্রশিল্পী রশীদ তালুকদার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২২, ১৪:০৮ |  আপডেট  : ১ মে ২০২৪, ১৫:২০

মাদার তেরেসা, মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম, বুদ্ধিজীবীদের লাশ উত্তোলন,  শহীদ আসাদের মৃত্যু, পূর্ব পাকিস্তানের গণ-অভ্যুত্থান এই সব ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবগত। এইসব ঘটনার স্থির চিত্রও আমরা দেখি। কিন্তু এইসব শুধু স্থিরচিত্র নয় বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী। যা দেখে সি সময়কার পটভূমি সম্পর্কে বুঝা যায়। যেকোন স্থিরচিত্র ধারণ করা আর এই স্থিরচিত্র গুলো এক নয়। জীবন বাজি রেখে তোলা চিত্র। সেই সকল আলকচিত্রকর একেকজন আন্দোলনকারী এবং মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রথিতযশা ও জনপ্রিয় আলোকচিত্রশিল্পী রশীদ তালুকদার [২৪শে অক্টোবর, ১৯৩৯ -২৫শে অক্টোবর, ২০১১]। যিনি পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে পেশাগত জীবন থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিশে যান তিনি। নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতে শুরু করেন বীরসেনানীদেরকে। এ সময় তার প্রিয় ১৩৫ মি.মি. ক্যামেরা সবসময় সঙ্গে থাকতো। 

তার ডাক নাম ছিল কাঞ্চন। সহকর্মীদের কাছে 'রশীদ ভাই' নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। যৌবনে গোটা রাজশাহীতে পরিচিত ছিলেন 'প্রিন্স রশীদ' নামে। পেশা হিসেবে ফটো সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছিলেন রশীদ তালুকদার। সেলক্ষ্যে, দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ফটো সাংবাদিক বা আলোকচিত্রী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে প্রবেশ করেন ১৯৬২ সালে। ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনে শহীদ আসাদের মৃত্যুতে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় আলোকচিত্র শিল্পী হিসেবে তার ক্যামেরায় স্থিরচিত্র হিসেবে ফুঁটে উঠেছিল ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিলসহ আসাদের শার্টের ছবি। যে ছবি থেকে কবি শামসুর রহমান তার বিখ্যাত 'আসাদের শার্ট' কবিতাটি রচনা করেন। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণ-অভ্যুত্থানের স্থির চিত্র হিসেবে মিছিলের সম্মুখভাগে টোকাই বা পথশিশুর ছবি তুলে সকলের নজর কাড়েন তিনি। এই টোকাই এর ছবি অবলম্বনে শিল্পী রফিকুন্নবী তার যুগান্তকারী 'টোকাই' নামক কার্টুন চরিত্র সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে বুদ্ধিজীবীদের লাশ উত্তোলনের ছবিও তিনিই ধারণ করেন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনকেও ক্যামেরায় ধারণ করেন রশীদ তালুকদার।

আলোক চিত্রকলায় অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্বর্ণপদকসহ প্রায় ৭৭টি পুরস্কার লাভ করেন রশীদ তালুকদার।তন্মধ্যে -

২০০৬ সালে তাকে 'ছবি মেলা আজীবন সম্মাননা পুরস্কার' প্রদান করেন বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সি. এম. শফি সামি।
২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অলাভজনক বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি'র পক্ষ থেকে ‘পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার লাভ।
জাতিসংঘ কর্তৃক ‘নিরাশ্রয়ের জন্য আশ্রয়’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় একত্রে ৬টি পুরস্কার অর্জন।
জাপান ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও আসাহি সিমবুন পত্রিকার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় পরপর দুইবার পুরস্কৃত হওয়া অন্যতম।
উল্লেখ্য যে, রশীদ তালুকদার ছিলেন বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

মাথায় আঘাতজনিত কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে রশীদ তালুকদারের। পরে ৭২ বছর বয়সে ২৫ অক্টোবর, ২০১১ইং তারিখ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত