সরকার কোটি কোটি টাকার সার আমদানি করে
আর কাউনিয়ায় হাজার হাজার টন জৈব সার যায় চুলায়, উদাসীন কর্তৃপক্ষ
সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৯ | আপডেট : ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:৩৬
কাউনিয়ায় প্রায় প্রতিটি গ্রামে জৈব সার গরুর গবর দিয়ে গোবরের শলা, গইঠা ও গুল তৈরির ধুম পড়েছে। প্রতিবছর সরকার কোটি কোটি টাকার সার আমদানী করে অথচ পরিবেশ বান্ধব গরুর গোবর জৈব সার সংরক্ষনে কৃষি ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কোন উদ্যোগ নেই। উপজেলার বিভিন্ন হোটেল ও বাড়িতে চলছে জৈব সার পোঁড়ানোর মহাউৎসব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় কাউনিয়ায় প্রতিদিন লাখ লাখ টন জৈব সার যাচ্ছে চুলায়।
সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে গবরের শলাকা, গইঠা ও গুল তৈরির দৃশ্য। উপজেলার যে কোন গ্রামে গেলেই দেখা যায় রাস্তা ও রেল লাইনের ধারে, বাড়ির উঠানে গবরের শলাকা ও গইঠা সারি সারি শোভা পাচ্ছে। পাটকাটি, বাঁশের ঝিক, গাছের চিকন ডাল বিশেষ কৌশলে গোবর লাগিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শলাকা। তকিপল বাজার এলাকার সুফিয়া, সখিনা জানান, আমাদের গরু নাই, সারাদিন গোবর কুড়িয়ে ও খামারীদের কাছ থেকে কিনে এনে শলাকা ও গইঠা তৈরী করে তা শুকিয়ে বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সংসার। প্রতিটি গোবরের শলাকা সর্বনিম্ন ২টাকা দরে হোটেল গুলোতে বিক্রি হয়। ফলে কাউনিয়ায় প্রতিদিন লাখ লাখ টন জৈব সার চলে যাচ্ছে চুলায়। এলাকার কৃষক ইসমাইল হাজি বলেন এক সময় গোবর সার দিয়ে তারা আবাদ করেছেন কিন্তু রাসায়নিক সারের সহজ লভ্যতায় গোবর সার এখন আর জমিতে দিতে দেখা যায় না। কৃষি ও প্রাণী সম্পদ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাব, অতিদারিদ্রতা, জ্বালানী সংকট নিরসন, অসচেতনতা, পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার অভাবে রংপুরের কাউনিয়ায় প্রতিবছর লাখ লাখ টন গোবর সার (জৈব সার) রান্নাঘর হোটেলসহ বিভিন্ন চুঁলোয় পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে পাওয়া গবর সার ব্যবহার ও বাজারজাত করনের তেমন কোন উদ্যোগ না থাকায় কৃষি কাজে রাসায়নিক সারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বিদেশ থেকে সার আমদানীতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশ চলে যাচ্ছে। গোবর সার ব্যবহারে উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ বা সরকারী ভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তেমন কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সাব্দি গ্রামের কিশোরী বালা জানান, হামার জমি নাই তাই ২টি গরুর গোরব দিয়ে গইঠা বানিয়ে জ্বালানীর চাহিদা মিটাই। ধীরেন চন্দ্র জানান, গরুর গোবর চাষিদের কাছে আশীর্বাদ। পর্যাপ্ত গরুর গোবর দিতে পারলে সবজি ও ধানের ক্ষেতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। উপজেলার ঢুসমারা চরে গরুর গোবর থেকে বায়গ্যাস প্লান্ট ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প তৎকালিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান উদ্বোধন করলেও সেই প্রকল্প আর দৃশ্যত নেই। রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে পরিবেশের যে পরিমান ক্ষতি সাধিত হচ্ছে সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিলে সরকারের ভুর্তকি দিয়ে হলেও জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আকতার জানান জমিতে গোবর সার ব্যবহারের বিকল্প কিছুই নেই। কৃষক পর্যায়ে আমরা এ বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি ভিত্তিক গবেষনা প্রয়োজন বলে বিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত